নৌ ঘাঁটির মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ: ৫ আসামির ফাঁসির রায়

২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর ১০ মিনিটের ব্যবধানে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরের দুটি মসজিদে বোমা হামলা হয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 05:41 AM
Updated : 17 August 2022, 05:41 AM

সাত বছর আগে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির বোমা হামলার ঘটনায় পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিত আসামিরা হলেন-নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার আবদুল মান্নান ও রমজান আলী, বাবুল রহমান ওরফে রনি এবং জেএমবি সদস্য আবদুল গাফফার।

তাদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন পলাতক আছেন, বাকিরা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পরে ১০ মিনিটের ব্যবধানে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরের দুটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

ওই মসজিদগুলোতে শুক্রবার স্থানীয়রাও নামাজ পড়তে আসতেন, বিস্ফোরণে সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে মোট ২৪ জন আহত হন।

বোমা হামলার নয় মাস পর ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা করেন।

নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার আবদুল মান্নান ও রমজান আলী এবং বাবুল রহমান ওরফে রনিকে সেখানে আসামি করা হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে মান্নানের বড় ভাই জেএমবি সদস্য আবদুল গাফফারের সম্পৃক্ততায় পায় পুলিশ।

জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম খান নোমান ওরফে নাফিস ওরফে ফারদিনের নেতৃত্বে নৌ ঘাঁটির মসজিদে ওই আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয় বলে মামলার এজাহারে বলা হয়।

ফারদিন ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরে গ্রেনেড বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন বলে পুলিশ জানায়। এ কারণে তার নাম এ মামলার আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় ইপিজেড থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ ওসমান গণি। অভিযোগপত্রে মোট ২৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

সেখানে বলা হয়, সেদিন নৌঘাঁটির মসজিদে হামলা হয়েছিল বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে। মান্নান ঘাঁটির ভেতরে মসজিদে দুটি বোমা নিক্ষেপ করেন। আর রমজান আরেকটি মসজিদে একটি বোমা নিক্ষেপ করেন।

দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের শুরুতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১ অগাস্ট মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

বুধবার রায়ের পর এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ বলেন, “দেশ রক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা সমুদ্র সীমার অতন্দ্র প্রহরী, তাদের ওপর এ নির্মম আঘাত ছিল দেশের উপর জেএমবির আঘাত।”

তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২) ও ১২ ধারায় এ মামলার সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, “ঘটনার এক বছর পর মামলা হয়। কিন্তু এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা কোথায় ছিল? আসামিদের কোনো ১৬৪ (ধারার জবানবন্দি) নেই। কোনো সাক্ষী তাদের নাম বলেনি। আমরা ক্ষুব্ধ। আপিল করব উচ্চ আদালতে।”