লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সৌম্য সরকার এর আগে সবশেষ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে।
Published : 05 Apr 2023, 07:37 PM
টুকটাক রান করছিলেন সৌম্য সরকার, কিন্তু পাচ্ছিলেন না পঞ্চাশের দেখা। দীর্ঘ সেই খরা অবশেষে কাটালেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৯ ম্যাচ পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে করলেন ফিফটি। সঙ্গে বাকিদের ছোটখাটো ইনিংসে কোনোমতে দুইশ পার করল মোহামেডান। পরে চমৎকার বোলিংয়ে অগ্রণী ব্যাংককে হারিয়ে দিল দলটি।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে বুধবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মোহামেডানের জয় ৩৯ রানে। টস জিতে ২২০ রানের পুঁজি গড়ে অগ্রণী ব্যাংককে তারা গুটিয়ে দেয় স্রেফ ১৮১ রানে।
চলতি লিগে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সৌম্যর। আগের ৫ ইনিংসে কেবল একবার পার করতে পারেন তিনি চল্লিশ রান। এবার খেললেন ১ ছক্কা ও ৬ চারে ৫৬ রানের ইনিংস। গত বছরের মার্চে খেলাঘরের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৯ রান ছিল লিস্ট ‘এ’-তে তার সবশেষ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ইমরুল কায়েসকে হারায় মোহামেডান। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রনি তালুকদারও। ভালো শুরু পেয়ে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন মাহিদুল ইসলাম (২২) ও মাহমুদউল্লাহ (২৩)।
ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ৭৭ বলে ২৬তম লিস্ট ‘এ’ পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সৌম্য। এরপর অবশ্য তিনিও দীর্ঘ করতে পারেননি ইনিংস। শুভাগত হোম, আরিফুল হক ও ইংল্যান্ডের জেইক লিনটটের ব্যাটে দুইশ পার করে মোহামেডান।
অল্প পুঁজি নিয়ে বল হাতে যেমন শুরু প্রয়োজন, দলকে সেটাই এনে দেন নাজমুল অপু। প্রথম ওভারেই পরপর দুই বলে আজমির আহমেদ ও সাহানুর রহমানকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান বাঁহাতি এই স্পিনার। শেষ পর্যন্ত যদিও হয়নি হ্যাটট্রিক।
পরে দ্রুত আরও তিন উইকেট হারিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৭৫। সেখানে থেকে মার্শাল আইয়ুব (২৪), ভারতের আজিম নাজির (৩৮) প্রতিরোধ গড়ার আভাস দিয়েও টানতে পারেননি দলকে।
অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ফিফটি করতে পারেননি কেউ। ১ ছক্কা ও ৩ চারে সর্বোচ্চ ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন সামসুল ইসলাম।
৩৪ রানে গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন অপু। পেসার মুশফিক হাসানেরও প্রাপ্তি তিনটি, ২৩ রানে। দুটি করে শিকার শুভাগত হোম ও লিনটটের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২২০/৯ (ইমরুল ১, রনি ১৪, সৌম্য ৫৬, মাহিদুল ২২, মাহমুদউল্লাহ ২৩, শুভাগত ২৯, আরিফুল ২৪, লিনটট ২৫, এনামুল জুনি. ৩, অপু ৮*, মুশফিক ৬*; আবু হায়দার ১০-১-৫২-২, এনামুল ১০-১-৪৩-২, সানি ৯-০-২৭-৩, শরিফুল্লাহ ১০-০-৪৩-১, আজিম ৫-০-৩২-০, সাহানুর ২-০-৩-০, জাভেদ ২-০-৭-০, ইলিয়াস ২-০-৮-০)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৮.৩ ওভারে ১৮১ (ইলিয়াস ১৪, আজমির ০, সাহানুর ০, জাভেদ ১৬, মার্শাল ২৪, আজিম ৩৮, শামসুল ৪৬, শরিফুল্লাহ ২২, এনামুল ৬, সানি ৬*; অপু ১০-১-৩৪-৩, শুভাগত ১০-০-৩২-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৮-০, লিনটট ৯.২-০-৩৯-২, এনামুল জুনি. ১০-১-৩৯-০, মুশফিক ৭-০-২৩-৩)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৩৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল অপু
তানজিদ-মাইশুকুরের ফিফটিতে ব্রাদার্সের জয়
সম্মিলিত চেষ্টায় ঢাকা লেপার্ডসকে দুইশর আগে থামিয়ে দিলেন বোলাররা। পরে তানজিদ হাসান ও মাইশুকুর রহমানের ফিফটিতে অনায়াস জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে লেপার্ডসকে ৫ উইকেটে হারায় ব্রাদার্স। প্রতিপক্ষের ১৯৮ রান তারা পেরিয়ে যায় ৪৯ বল বাকি থাকতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লেপার্ডসের ব্যাটসম্যানরা ভালো শুরু পেলেও লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। তাদের ৮ ব্যাটসম্যানই স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু পঞ্চাশ করতে পারেননি কেউ।
ত্রিশ পার করেছেন ৩ জন ব্যাটসম্যান। ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৫ রান এসেছে সোহরাওয়ার্দী শুভর ব্যাট থেকে।
রান তাড়ায় ব্রাদার্স এগিয়ে যায় তানজিদের ব্যাটে। ৪৫ বলে ফিফটি করে এই ওপেনার ফেরেন চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৭১ রান করে ম্যাচের সেরা তিনিই।
পরে দেখেশুনে খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাইশুকুর। ৫ চারে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা লেপার্ডস: ৪৮.৪ ওভারে ১৯৮ (পিনাক ১২, জসিম ০, জুনায়েদ ৩, জেম ১৮, রকিবুল ৩১, মইন ১০, জনি ৩০, ইমরান ২৫, সোহরাওয়ার্দী ৪৫, দেলোয়ার ৪, শাকিল ৪*; মেহেদি ৯-১-৫০-২, সানি জুনি. ৯.৪-০-৪৫-৩, সজিব ১০-১-৩৩-০, নাসিম ১০-০-২৯-২, রাহাতুল ৯-০-৩৩-২, সাব্বির ১-০-৪-০)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪১.৫ ওভারে ১৯৯/৫ (মিজানুর ১২, তানজিদ ৭১, সাব্বির ১৯, আনিসুল ১, মাইশুকুর ৫১*, সানি জুনি. ২৩, নাসিম ৮*; শাকিল ৯.৫-১-৪৬-২, মইন ১০-০-৪১-২, দেলোয়ার ৪-০-২০-০, সোহরাওয়ার্দী ৭-০-৪৭-১, ইমরান ৪-০-২৪-০, জনি ৭-১-১৭-০)
ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানজিদ হাসান
জিসান-অমিতের ফিফটিতেও পারল না শাইনপুকুর
ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস উপহার দিলেন শাহরিয়ার কমল ও মাজ আহমেদ সাদাকাত। কার্যকর ইনিংস খেললেন তৌফিক খান। তাতে দুইশ ছাড়াল সিটি ক্লাবের সংগ্রহ। রান তাড়ায় জিসান আলম ও অমিত হাসানের পঞ্চাশে জয়ের সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব।
ফতুল্লায় শাইনপুকুরকে ২৩ রানে হারায় সিটি ক্লাব। ২২৬ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা থামিয়ে দেয় ২০৩ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন তৌফিক। রায়ান রাফসানের সঙ্গে ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে তিনিই করেন ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৪১।
পরে দলকে টানেন কমল ও সাদাকাত। তৃতীয় উইকেটে দুইজনে গড়েন ১০৯ রানের জুটি। ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৬৫ রান করা সাদাকাতের বিদায়ে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৪ রান করে ফেরেন কমল।
এরপর আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তাতে পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি দলটি।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে উইকেট হারানোর ধাক্কা জিসান ও অমিতের ব্যাটে সামাল দেয় শাইনপুকুর। দুইজনে গড়েন ১২১ রানের জুটি।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান জিসান। কিন্তু ৭ ছক্কা ও ৪টি চারে ৮৬ রান করে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি।
ফিফটির পর টিকতে পারেননি অমিতও। ৪টি চারে ৫৩ রান করেন তিনি। এরপর টপাটপ পড়তে থাকে শাইনপুকুরের উইকেট। শেষ ৬ উইকেট স্রেফ ৩৩ রানে হারিয়ে দুইশ পেরিয়েই গুটিয়ে যায় তারা।
দারুণ ফিফটির পর বল হাতে ১ উইকেট নেওয়া সিটি ক্লাবের সাদাকাত জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৪৯.২ ওভারে ২২৬ (রায়ান ১২, তৌফিক ৪১, কমল ৫৪, সাদাকাত ৬৫, মামুন ০, রাফসান ৯, আসিফ ১৮*, জয়রাজ ৪, রবিউল ১৪, ইফরান ২, আসিফ ২; মেহেদি রানা ৮-০-৪৩-২, রেজা ৮.৩-১-৩৮-২, নাবিল ১০-০-৪৪-৩, মুরাদ ১০-০-৪৬-২, শামসুর ২-০-২১-০, জিসান ১০-০-৩১-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪১.৪ ওভারে ২০৩ (মাহফিজুল ১, জিসান ৮৬, অমিত ৫৩, প্রিয়াঙ্ক ৮, শামসুর ২৮, আমিনুল ৩, সাজ্জাদুল ৬, রেজা ৬, মেহেদি রানা ০, মুরাদ ০, নাবিল ১*; রবিউল ৯-১-৪৩-৩, আসিফ ১০-২-৩৮-১, ইফরান ৫.৪-০-৩১-২, সাদাকাত ১০-০-৪৫-১, রায়ান ২-০-১৬-০, আসিফ ১-০-১০-০, রাফসান ৪-০-১৯-২)
ফল: সিটি ক্লাব ২৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাজ আহমেদ সাদাকাত