শেষ বিকেলের লড়াইয়ে উতরে নতুন দিনের পরীক্ষায় বাংলাদেশ

শেষ ইনিংসে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষ সময়টা নির্বিঘ্নে কাটাতে পেরেছে বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2022, 11:40 AM
Updated : 16 Dec 2022, 11:40 AM

আম্পায়ার মাইকেল গফ বেলস তুলে নিতেই গ্যালারি থেকে ভেসে এলো উল্লাস ধ্বনি। দুই ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসানের চোখেমুখেও তখন স্বস্তির ছাপ। প্রথম চ্যালেঞ্জ তো পার করা গেল! বিজয় দিবসের ছুটিতে হাজার তিনেক দর্শক ছিলেন মাঠে। দিনজুড়ে ভারতের দাপট দেখার পর তারা কিছুটা আনন্দের উপলক্ষ পেলেন শেষ ঘণ্টায়। রান এলো কিছু, জুটি হলো, দর্শকের তালি-চিৎকার শোনা গেল। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো উইকেট না হারিয়ে দিনটা পার করা গেল।

লক্ষ্য যেখানে ৫১৩, সেই পথে ৪২ রান উল্লেখ করার মতো কিছুও নয়। তবে রানের বোঝা মাথায় নিয়ে শেষ বিকেলের ১২ ওভার নির্বিঘ্নে কাটানো গেছে, এই ম্যাচের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তির বটেই। ভারতীয় বোলারদের আগ্রাসন, ছাতার মতো ঘিরে থাকা ফিল্ডারদের চাপ সামলে শান্ত ও জাকির মিলে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করেছেন উইকেট না হারিয়ে।

জিততে এখনও ৪৭১ রান প্রয়োজন বাংলাদেশ। যাবতীয় ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও তাই জয়ের কথা মুখে আনাও অসম্ভব। প্রথম ইনিংসে অসহায় আত্মসমপর্ণের পর এবার হারার আগে অন্তত লড়ার আভাস কিছুটা মিলল শান্ত ও জাকিরের ব্যাটে।

বাংলাদেশর প্রথম ইনিংস দিয়েই শুরু হয় তৃতীয় দিনের খেলা। শেষ দুই উইকেটে এ দিন আর স্রেফ ১৭ রান যোগ করতে পারে তারা। ৫ উইকেট নিয়ে কুলদিপ যাদব রাঙিয়ে তোলেন ২২ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা।

২৫৪ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পথ বেছে নেয় ভারত। শুবমান গিল ও চেতেশ্বর পুজারার সেঞ্চুরিতে চাওয়া পূরণ হয় তাদের।

দুজনের কাছেই এই সেঞ্চুরি ছিল পরম কাঙ্ক্ষিত। গিলের এটি ১২ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি। পুজারা আগে সেঞ্চুরি করেছেন ১৮টি। তবে সবশেষটি এত আগে যে, তিনি ভুলতে বসেছিলেন হয়তো! অবিশ্বাস্যভাবে, প্রায় ৪ বছর ও ৫১ ইনিংস পর এলো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের এই সেঞ্চুরি।

এই দুজনের শতরানের জুটির আগে উদ্বোধনী জুটিতে ভারতকে ৭০ রান এনে দেন গিল ও লোকেশ রাহুল।

লাঞ্চের আগের সময়টুকু অবশ্য ভীষণ সাবধানী ছিলেন দুজনই। ১৫ ওভারে তখন রান আসে ৩৬। বিরতির পর গিলের ব্যাটে দেখা যায় একটু তাড়া। উইকেটও ততক্ষণে সহজ হয়ে আসে বেশ, বল হয়ে ওঠে পুরনো। বাড়ে রানের গতি।

মাঠে বাংলাদেশকে উজ্জীবিত মনে হয়নি একটুও। শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল যেন, জোর করে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সবাইকে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও পেসার ইবাদত হোসেনের বল করতে না পারাও ভোগান্তির কারণ হয়ে আসে দলের জন্য। 

বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ দ্বিতীয় দিন শেষে বলেছিলেন, কাঁধে চোট পাওয়া সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে পারবেন বলেই তার বিশ্বাস। কিন্তু আদতে তা হয়নি। প্রথম ইনিংসে শ্রেয়াস আইয়ারের উইকেট পাওয়ার পর আর বল হাতে নেননি ইবাদতও। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তাই খুব বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হননি।

রাহুলের বিদায়ে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। রাউন্ড দা উইকেটে এসে শরীর তাক করে একের পর এক শর্ট বলের কৌশল কাজে লেগে যায় সৈয়দ খালেদ আহমেদের। পুল করে ফাইন লেগ সীমানায় তাইজুলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ৬২ বল খেলে তার রান ২৩।

দ্বিতীয় উইকেটে গিল ও পুজারা রান বাড়াতে থাকেন অনায়াসেই। লাঞ্চের আগে গিলের রান ছিল ৪৭ বলে ১৫। সেখান থেকে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৮৪ বলে। প্রথম ইনিংসের রান পাওয়ার আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে সাবলিল ব্যাটিংয়ে পুজারা ফিফটি করেন ৮৭ বলে।

ফিফটি থেকে সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি দুজনের কাউকে। খালেদকে পুল করে ছক্কায় ওড়ান গিল। বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রায় প্রতি ওভারেই। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার বোলিংয়ে আসেন লিটন দাস। তিনিও ছক্কা হজম করেন গিলের ব্যাটে।

আরেক অনিয়মিত বোলার ইয়াসির আলি অবশ্য এক দফায় পরাস্ত করতে পেরেছিলেন গিলকে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ডিআরএস যখন বিকল হওয়ায় দেখার সুযোগই হয়নি, সেটি আউট ছিল কি না।

মিরাজকে বাউন্ডারি মেরে গিল সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১৪৮ বলে। পরের ওভারে মিরাজকে ছক্কায় উড়িয়ে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান ১১০ রানে।

পুজারার রান তখনও ৪৬। গিল আউট হওয়ার পর ফিফটি ছুঁয়ে ঝড়ের বেগে সেঞ্চুরিতেও পৌঁছে যান তিনি। ফিফটি থেকে শতরানে যেতে তার বল লাগে স্রেফ ৪৩টি।

১৩০ বলের এই সেঞ্চুরি তার ক্যারিয়ারের দ্রুততমও বটে।

প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান এবার সেঞ্চুরি পূরণ করতেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।

বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ শুরু হয় তখনই। প্রথম ইনিংসে প্রথম বলে আউট হওয়া শান্ত এবার আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন। অভিষিক্ত জাকির হাসানও খেলতে থাকেন বেশ আস্থায়।

প্রথম ইনিংসে ৪২ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার একটিও নয়।

পথের যদিও কেবলই শুরু। লক্ষ্যটাও দৃষ্টিসীমার বাইরে। তবে অনিশ্চিত এই পথচলায়ও যদি প্রতিপক্ষকে একটু চাপে ফেলা যায়, কিছু একটা প্রাপ্তি তো হয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৪০৪

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৩৩/৮) ৫৫.৫ ওভারে ১৫০ (শান্ত ০, জাকির ২০, ইয়াসির ৪, লিটন ২৪, মুশফিক ২৮, সাকিব ৩, সোহান ১৬, মিরাজ ২৫, তাইজুল ০, ইবাদত ১৭, খালেদ ০*; সিরাজ ১৩-২-২০-৩, উমেশ ৮-১-৩৩-১, অশ্বিন ১০-১-৩৪-০, কুলদিপ ১৬-৬-৪০-৫, আকসার ৮.৫-৪-১০-১)।

ভারত ২য় ইনিংস: ৬১.৪ ওভারে ২৫৮/২ (ডি.) (রাহুল ২৩, গিল ১১০, পুজারা ১০২*, কোহলি ১৯*; খালেদ ১৩-০-৫১-১, তাইজুল ২৩.৪-৩-৭১-০, মিরাজ ১৪-১-৮২-০, ইয়াসির ৬-০-২৮-০, লিটন ২-০-১৩-০, শান্ত ৩-০-১২-০)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫১৩) ১২ ওভারে ৪২/০ (শান্ত ২৫*, জাকির ১৭*; সিরাজ ৩-০-১১-০, উমেশ ১-১-০-০, অশ্বিন ৫-১-২২-০, আকসার ২-০-৪-০, কুলদিপ ১-০-৪-০)।