টিভি পর্দার সামনে থাকা অনেকে চোখ কচলে আবার তাকাচ্ছেন নিশ্চিতভাবেই। মাঠে আসা দর্শকদের চোখেমুখ অবিশ্বাস। খেলা মিরপুরেই হচ্ছে তো! এমনকি ক্রিকেটারদের জন্যও আনন্দময় বিস্ময় হয়ে এসেছে এবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট। সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তো বলেই দিয়েছেন, উইকেটের কারণ এবার বিপিএলের খেলা ভালো হচ্ছে। একই কথা বলেছেন এবার ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও।
বিপিএলে এমেনিতে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে মিরপুরের উইকেট। আলোচনার চেয়ে বরং সমালোচনা বলাই ভালো। গত কয়েক বছরে বিপিএলে বেশির ভাগ সময়ই এই মাঠের উইকেট ছিল মন্থর, যেখানে বল গ্রিপ করে ভয়ঙ্করভাবে। ব্যাটসম্যানদের শট খেলা ছিল কঠিন। মাঝারি স্কোর গড়াও যেখানে হয়ে উঠে কষ্টকর। টি-টোয়েন্টির সত্যিকারের স্বাদ মেলেনি সেখানে।
দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররাও নানা সময়ে হতাশা, বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মিরপুরের উইকেট নিয়ে। সামাজিক মাধ্যমে ট্রল, তাচ্ছিল্য তো আছেই। এবারও প্রথম দুই দিনে দুপুরের ম্যাচে উইকেট ছিল চেনা চেহারাতেই। তখন দেশজুড়ে ছিল শৈত্যপ্রবাহ, আবহাওয়া ছিল স্যাঁতস্যাঁতে। কন্ডিশনের সেই প্রভাব পড়ে উইকেটে।
তবে রাতের ম্যাচে উইকেটের চরিত্র বদলে যেতে দেখা গেছে অনেকটাই। শৈত্যপ্রবাহ শেষে দিনের ম্যাচেও উইকেট দেখা যায় অনেকটাই ব্যাটিং সহায়ক।
সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১৪৯ রান তাড়া করে জিতে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশাল জয় পায় রংপুর রাইডার্সের ১৫৮ রান তাড়ায়। এছাড়াও এবার ১৯৪ রান তাড়ায় জিতেছে সিলেট, তারাই আবার আগে ব্যাট করে ২০১ রান তুলেছে, খুলনার ১৭৮ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে জিতে গেছে চট্টগ্রাম।
ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে মঙ্গলবার মাশরাফি বলেন, হাজার সমালোচনার মধ্যেও উইকেট ভালো হওয়ায় এবার খেলাও বেশ ভালো হচ্ছে। বুধবার ঢাকায় ইয়ামাহার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে একটি অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উইকেট নিয়ে সাকিবের কণ্ঠেও ফুটে উঠল একই সুর।
“এ বছর পিচ অনেক ভালো। মিরপুরে খুবই অপ্রত্যাশিত যে এত ভালো পিচ পাচ্ছি। কিউরেটরকে কৃতিত্ব দিতেই হয়, সে কারণে এত বেশি রান হচ্ছে এবং মাঠের খেলাটাও অনেক বেশি ভালো হচ্ছে, উত্তেজনাময় হচ্ছে।”
সেই ভালো উইকেটে এবার ভালো ব্যাটিং করছেন দেশের ক্রিকেটাররাই। ৩ ইনিংস খেলে ৬৫ গড়ে ১৬৬ রান করে এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক এখনও পর্যন্ত তৌহিদ হৃদয়। ৫৫ গড়ে ১৬৭ রান করে এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার নাজমুল হোসেন শান্ত।
সিলেট স্ট্রাইকার্সে এই দুজনের সতীর্থ জাকির হাসান রান করেছেন ১৭৫.৪৩ স্ট্রাইক রেটে। অভিজ্ঞ রনি তালুকদার দুই ইনিংসে ১০৭ রান করেছেন ৫৩.৫০ গড় ও ১৮১.৩৫ স্ট্রাইক রেটে। দুই ইনিংস ব্যাট করে দুটিতেই ভালো করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জাকের আলি।
সাকিবের মতে, ভালো উইকেট পাওয়াতেই দেশের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সের এই উন্নতি।
“অনেকেই ভালো খেলছে, ধারাবাহিকভাবে আপনি যদি দেখেন শান্ত, জাকির, হৃদয় খুবই ভালো খেলছে এবং অন্যান্য দলের খেলোয়াড়রাও ভালো করছে৷ সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে, স্থানীয় ব্যাটাররা এবার ভালো রান করছে। আমাদের জন্য খুবই ভালো একটা দিক।”
“অনেক কৃতিত্ব দিতে হয় পিচকে, কারণ পিচগুলো ভালো পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে আমার মনে হয় দেশীয় ব্যাটারদের রান করার সুযোগটা বাড়ছে এবং তারা সেটাকে কাজে লাগাচ্ছে।”
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের চাওয়া, এই ধরনের ব্যাটিং উইকেটে এখন ভালো বোলিং করতে শিখুক দেশের বোলাররা।
“দেশের ব্যাটাররা রান করছে এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু আমাদের দেশের বোলাররা ওরকম ভালো বল করছে না। এরকম ভালো পিচে কীভাবে বল করতে হয়, ওটা শিখতে হবে।”