বিপিএলে প্রথমবার সব দলেই দেশি কোচ, তাই ‘বেশি সুযোগ’

বিদেশি কোচদের ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এবার সব ফ্র্যাঞ্চাইজিই আস্থা রেখেছে বাংলাদেশের কোচদের সামর্থ্যে, বিপিএলের ইতিহাসে যা প্রথম।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদশাহাদাৎ আহমেদ সাহাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2024, 02:51 PM
Updated : 18 Jan 2024, 02:51 PM

ইঙ্গিতটা ফুটে উঠেছিল গত আসরেই। এবার সেই চিত্র আরও পরিষ্কার। বিদেশি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে কোচিংয়ে স্থানীয়দের ওপর ভরসা রাখতে শুরু করেছে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এবারের আসরে সব দলের ডাগআউটে থাকছেন দেশি কোচ।

বিপিএলের শুরুর দিকে বেশিরভাগ দলেই প্রধান কোচের দায়িত্বে দেখা যেত বিদেশিদের। গত আসরে অনেকটাই বদল আসে এতে। সাত দলের পাঁচটিতে ছিলেন দেশি কোচ। এবার প্রতিটি দলেই প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করবেন দেশের কোচরা। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যা প্রথম।

গত আসরে সেরা তিনে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা তিন দল ধরে রেখেছে নিজেদের প্রধান কোচকে। এবার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্বে থাকছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, রানার্স আপ সিলেট স্ট্রাইকার্সে রাজিন সালেহ ও তৃতীয় হওয়া রংপুর রাইডার্সের কোচ থাকছেন সোহেল ইসলাম।

খুলনা টাইগার্স ছেড়ে এবার নতুন দল দুর্দান্ত ঢাকার দায়িত্ব নিয়েছেন খালেদ মাহমুদ। সহকারী কোচ থেকে ফরচুন বরিশালের প্রধান কোচ হয়েছেন মিজানুর রহমান। বিপিএলে প্রথমবারের মতো প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন তুষার ইমরান (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স), তালহা জুবায়ের (খুলনা টাইগার্স)।

মোহাম্মদ সালাউদ্দিন

টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসর থেকে তার কোচিংয়েই খেলছে কুমিল্লা। এই সময়ের মধ্যে ছয়বার অংশ নিয়ে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। অংশ নেওয়া সবশেষ তিন আসরের প্রতিটির চ্যাম্পিয়ন তারা।

বিপিএলে প্রধান কোচ হিসেবে সালাউদ্দিনের শুরু ২০১৩ সালে। সেবার সিলেট রয়্যালসের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরের আসরে একই ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনে নেয় কুমিল্লার দলকে। এরপর থেকে জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচের ওপরই আস্থা রেখেছে দলটি।

মাঠের ক্রিকেটের কৌশল তো বটেই, দল গোছানো থেকে শুরু করে দল পরিচালনার যাবতীয় পরিকল্পনা, সবকিছুতে বড় প্রভাব থাকে তার। মাঠের ক্রিকেটেও ফুটে ওঠে তা। 

সোহেল ইসলাম

বিপিএলের গত আসরে প্রধান কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সোহেল ইসলাম। এবারও তার ওপর আস্থা রেখেছে রংপুর রাইডার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও একই মালিকানার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন সোহেল।

নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে গতবার তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে রংপুর। ফাইনালে ওঠার দারুণ সম্ভাবনা জাগায় তারা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে সিলেট স্ট্রাইকার্সের কাছে হেরে শেষ হয় সেই আশা।

দলকে নিয়ে এবার পুরোটা পথ পাড়ি দিতে চান রংপুর কোচ। সব দলেই দেশি কোচ হওয়াকে দেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর বাস্তবতায় বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি।

“ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যান্য টুর্নামেন্টের সঙ্গে বিপিএলের পার্থক্য হলো, এখানে খেলার মান অনেক উঁচু। বিদেশি ক্রিকেটাররা আসে৷ দেশিদের মধ্যেও বাছাইকৃত ক্রিকেটাররা খেলে৷ প্রধান কোচ হিসেবে তাদের গাইড করা, দল পরিচালনা করার মাধ্যমে নিজের জ্ঞান যেমন বাড়ে, তেমন আত্মবিশ্বাসটাও বাড়ে। এর প্রতিফলনটা অন্যান্য জায়গায় কোচিংয়ের ক্ষেত্রেও পড়ে৷”

“বিপিএলে আগে দেশের এক-দুইজন কোচিং করাতো। এখন সবাই দেশি। আমাদের তো দেশে কোচের সংখ্যাও বাড়াতে হবে৷ এটা একটা ভালো সুযোগ। বিপিএলে দল চালানোর মাধ্যমে আমাদের নিজেদেরও উন্নতি হবে। তো এক্ষেত্রে দেখতে গেলে অবশ্যই আমরা দেশি কোচদের জন্য বড় সুযোগ এটি।” 

খালেদ মাহমুদ

নতুন আসর শুরুর আগে দল বদলেছেন খালেদ মাহমুদ। গত আসরে খুলনার দায়িত্ব পালন করা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ককে এবার দেখা যাবে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকার ডাগআউটে।

খালেদ মাহমুদেরও বিপিএল কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ঢের। প্রথম আসরে চিটাগং কিংসের হয়ে শুরু তার বিপিএল কোচিং ক্যারিয়ার। পরের দুই আসর অবশ্য সহকারী কোচ হিসেবে দেখা যায় তাকে।

২০১৬ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে তিনি ফেরেন প্রধান কোচের দায়িত্বে। তার কোচিংয়ে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় রাজধানীর দলটি। বিপিএলের প্রধান কোচ হিসেবে সেটিই দেশের ক্রিকেটের অভিজ্ঞ কোচদের একজনের সবশেষ সাফল্য। 

রাজিন সালেহ

সহকারী নানা দায়িত্বে কোচিং করানোর পর গত আসরে প্রধান কোচের গুরুভার পান রাজিন সালেহ। তার কোচিংয়ে দারুণ সাফল্যও পায় অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া সিলেট স্ট্রাইকার্স। শিরোপার সম্ভাবনা জাগালেও ফাইনালে কুমিল্লার কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়ে থামে তাদের যাত্রা।

এবারও একই কোচের হাতে দলকে ছেড়েছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। টুর্নামেন্টে স্রেফ দুটি দলে এবার থাকছে গত আসরের কোচ-অধিনায়ক জুটি। যার একটি সিলেট। অন্যটি সোহেল ইসলামের রংপুর।

মিজানুর রহমান

প্রধান কোচের পদে বদলে এনেছে গত আসরে প্লে-অফ খেলা চতুর্থ দল ফরচুন বরিশাল। গত বছর সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মিজানুর রহমান এবার পেয়েছেন মূল দায়িত্ব।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগসহ বয়সভিত্তিক দল, ‘এ’ দলের হয়ে কোচিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে মিজানুরের। বিপিএলে তার কাজ সহজ করার জন্য টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে আনা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ ও শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী কোচ ড্যাভ হোয়াটমোরকে।

তবে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটিতে দেশি কোচদেরই বেশি সুবিধা দেখেন মিজানুর।

“বিপিএলে এবার যারা কোচ হয়েছে, সবাই যোগ্য। দেশি কোচ হওয়ায় সবার একটা সুবিধাও থাকবে। বিদেশি ক্রিকেটার তো মাত্র চার জন। দেশিদের নিয়েই মূলত কাজ করতে হয়৷ তাদের যে কোনো পরামর্শ দেওয়া দেশি কোচের জন্য সুবিধার৷ উইকেট সম্পর্কেও দেশি কোচদের ধারণা বেশি।”

“আগে দেখা যেত, বিদেশি প্রধান কোচ রেখে সহকারী হিসেবে দেশি কাউকে নিত। তখন ওই বিদেশি কোচের ওপর দেশিরা অনেক সময়ই অনেক কিছু বলতে পারে না৷ ক্রিকেটাররাও অনেক সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না৷ এসব ক্ষেত্রে এবার সব দিক থেকেই বিষয়টা সহজ হবে।”

তালহা জুবায়ের

গত কয়েক আসরে খালেদ মাহমুদের কোচিং প্যানেলে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তালহা জুবায়ের। গত বছরও খুলনা টাইগার্সের ডাগআউটে ছিলেন খালেদ মাহমুদের সঙ্গী হয়ে।

এবার অগ্রজ সাবেক সতীর্থ দল বদলানোর পর তালহাকে প্রধান কোচ হিসেবে বেছে নিয়ে খুলনা ফ্র্যাঞ্চাইজি। বিপিএলে প্রধান কোচ হিসেবে এটিই হতে চলেছে তালহার প্রথম আসর।

বড় মঞ্চে প্রথমবার দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার।

“এবার বিপিএলে অনেক স্থানীয় কোচ কাজ করবেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ যদি আমরা ভালো কিছু করতে পারি। আমি প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশন্যাল লিগে কোচিং করাই কিন্তু বিপিএলটা অনেক বড় মঞ্চ আমাদের জন্য। এখানে আমাদের অনেক কিছু শেখার থাকবে, জানার থাকবে। আশা করি, এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারব।”

তুষার ইমরান

সিলেট স্ট্রাইকার্সে গত বছর রাজিন সালেহর কোচিং প্যানেলে সহকারী হিসেবে কাজ করা তুষার ইমরান এবার পেয়েছেন বড় দায়িত্ব। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএলে প্রধান কোচ হিসেবে অভিষেক হচ্ছে জাতীয় দলের সাবেক এই ব্যাটসম্যানের।

ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেছেন তুষার। অবসরের সময় তার নামের পাশে ছিল দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তখনকার রেকর্ড ৩২ সেঞ্চুরি। চলতি মৌসুমে যা টপকে গেছেন নাঈম ইসলাম।

ব্যাটসম্যান হিসেবে নানান পথ পাড়ি দেওয়া তুষার যেন স্বাগতই জানালেন বিপিএলে প্রধান কোচের চ্যালেঞ্জকে।

“কোচিংয়ের চ্যালেঞ্জ আসলে সব জায়গায় একইরকম। আগে যেমন অন্যান্য পর্যায়ে কোচিং করিয়েছি। তখনও চ্যালেঞ্জ ছিল। বিপিএলে প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করব, এটা একটা নতুন ব্যাপার৷ তবে আগের মতোই এবারও ইচ্ছা থাকবে দলটা যেন ভালো ফলাফল পায়৷”