ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ৯ ছক্কায় ১৪১ রান করেন রনি তালুকদার, তবে পরে মুশফিকুর রহিমের আউট ঘিরে বিতর্কে ম্যাচ বন্ধ থাকে বেশ কিছুক্ষণ।
Published : 25 Apr 2024, 07:51 PM
দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ নিয়ে আবু হায়দার তখন বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে উঠেছেন সতীর্থদের সঙ্গে। আউট হয়ে মুশফিকুর রহিম ফিরছিলেন ড্রেসিং রুমের পথে। কিন্তু হঠাৎ তাকে বাইরে থেকে থামতে বললেন কেউ। প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা তখন ডাগ আউট থেকে উঠে এসে উত্তেজিত হয়ে সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে সবাই। ফোনে আউটের রিপ্লে দেখছিলেন কেউ কেউ। দুটি অ্যাঙ্গেল থেকে পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছিল, আবু হায়দার অসাধারণ ক্যাচ নিলেও তার পা স্পর্শ করেছে সীমান দড়ি!
কিন্তু এসব ম্যাচে তৃতীয় আম্পায়ার নেই। ইউটিউবে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগও নেই আম্পায়ারদের। সীমানার ক্যাচের ক্ষেত্রে ফিল্ডারদের কথার ওপরই ভরসা রাখতে হয় তাদের। এই নিয়ে টানাপোড়েনে খেলা বন্ধ থাকল প্রায় ১৩ মিনিট। একটা পর্যায়ে মাঠ ছাড়তেই হলো মুশফিককে। প্রাইম ব্যাংকের সম্ভাবনাতেও লাগল বড় চোট।
পরে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত আর পারল না তারা। রনি তালুকদারের দুর্দান্ত ইনিংসের পর সম্মিলিত বোলিং ও ফিল্ডিং পারফরম্যান্সে ম্যাচ জিতে নিল মোহামেডান।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৩৩ রানে হারাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
৯ ছক্কায় ১৩১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের প্রথম ভাগ রাঙিয়ে তোলেন রনি। মোহামেডান তোলে ৩১৭ রান। জবাবে প্রাইম ব্যাংক যেতে পারে ২৮৪ পর্যন্ত।
বিতর্কিত ওই ক্যাচের পর শেষ দিকে দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন আবু হায়দার।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক ১০ রানে ওভাবে আউট না হলে ম্যাচ আরও জমজমাট হতো কি না, সেটি বলার উপায় নেই। তবে প্রাইম ব্যাংক যে ব্যাপারটি ভালোভাবে নেয়নি, তা ওই সময় যেমন বোঝা গেছে, তেমনি পরিষ্কার হয়ে যায় পরেও। ম্যাচ শেষে মোহামেডানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে মাঠে নামেন কেবল তামিম ইকবাল, প্রাইম ব্যাংকের অন্য কোনো ক্রিকেটার ড্রেসিং রুম থেকে বের হননি।
সকালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান ৩০ রানের মধ্যে হারায় দুই ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও হাবিবুর রহমানকে।
তৃতীয় উইকেটে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন রনি ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। রনি ফিফটি করেন ৬৫ বলে, মাহিদুল ৭৫ বলে।
ফিফটির পরপরই রুবেল হোসেনকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাহিদুল। এবারের লিগে তার সপ্তম ফিফটি এটি, সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে একটি।
রনি ফিফটির পর রানের গতি বাড়িয়ে দেন দ্বিগুণ। চার-ছক্কা আসতে থাকে নিয়মিত। পঞ্চাশ থেকে শতরানে যেতে তিনি বল খেলেন কেবল ২৪টি।
অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে যান ২২ বলে ২৮ রান করে। রনি সেঞ্চুরি করে ছুটতে থাকেন আরও।
শেষ পর্যন্ত সানজামুল ইসলামের বাঁহাতি স্পিনে শাহাদাত হোসেনের দারুণ ডাইভিং ক্যাচে রনি থামেন ১৪১ রানে। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ার তার আগের সেরা ইনিংস ছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা লিগেই ১৩২।
রনির বিদায়ের পর শেষটা দারুণ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরিফুল হক। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ৫৭ রান করে। আরিফুল করেন ১৩ বলে ২১। শেষ ৫ ওভারে ৬০ রান তোলে মোহামেডান।
রান তাড়ায় প্রাইম ব্যাংক বড় ধাক্কা খায় ষষ্ঠ ওভারে। পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে উইকেটের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে রান আউট হন তামিম ইকবাল। পারভেজ নিজে পরে তিন চার ও দুই ছক্কা মারলেও ৩৮ রান করতে বল খেলেন ৫৪টি।
এরপর শাহাদাত হোসেন ও জাকির হাসান দলকে রাখেন লড়াইয়ে। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। শাহাদাত আউট হন ফিফটির পরপই। একটু পরই মুশফিকের সেই আউট।
ইনিংসের ৩৪তম ওভারে অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে স্লগ সুইপ খেলেন মুশফিক। স্কয়ার লেগ থেকে বাঁদিকে অনেকটা ছুটে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে বল মুঠোয় জমান আবু হায়দার। তবে ইউটিউব রিপ্লেতে দুটি অ্যাঙ্গেল থেকে স্পষ্ট ধরা পড়ে, ক্যাচ নেওয়ার পর গড়িয়ে যাওয়ার সময় আবু হায়দারের পা স্পর্শ করেছে সীমানা দড়ি।
আম্পায়ারদের অবশ্য মাঠের মাঝখান থেকে তা বোঝার উপায় ছিল না। আবু হায়দারকে বারবার দেখা যায় প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক জাকির ও আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে। দুই আম্পায়ার এআইএম মনিরুজ্জামান ও সাথিরা জাকির জেসি নিজেদের মধ্য আলোচনার পাশাপাশি দুই দলের সঙ্গ কথা বলতে থাকেন।
প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা সীমানার পাশে জড়ো হন সবাই। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তামিম ইকবালকে। মাঠে মুশফিককেও বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। এক সময় আম্পায়ার আঙুল উঁচিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
মুশফিকের বিদায়ের পরের ওভারে জাকিরও আউট হয়ে যান ৪১ রান করে। অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম বিদায় নেন ২ রানেই।
এরপরও দারুণ খেলে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন শেখ মেহেদি হাসান ও সানজামুল ইসলাম। তবে শেষ দিকে আবার ব্যবধান গড়ে দেন সেই আবু হায়দার। নিজে বল করার পর ফলো থ্রু সামলে দারুণ গতিতে ছুটে গিয়ে ভারসাম্যহীন অবস্থায়ই দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দেন তিন ছক্কায় ৪৯ রান করা সানজামুলকে।
৪৫ বলে ৬৪ রান শেখ মেহেদিকে ফিরিয়ে পরে শেষ বাধাও দূর করে দেন আবু হায়দার। শেষ সময়ে দারুণ কিছু ইয়র্কার করে প্রাইম ব্যাংকের সম্ভাবনা তিনি শেষ করে দেন।
দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা রনি তালুকদার। ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুশফিকের ওই আউট নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানালেন তিনি।
"(আউট কি না) সেটা তো রনিই (আবু হায়দার) ভালো জানে। কারণ রনিই ক্যাচটা ধরেছে। রনির ওপরেই পুরোটা নির্ভর করবে। ও যে সিদ্ধান্তটা দেবে, সেটার ওপরেই…কারণ এখানে তো ওইভাবে ক্যামেরা ছিল না। থার্ড আম্পায়ার যদি থাকত, তাহলে সেটা ভালোভাবে দেখতে পারত। এখন এটা খেলোয়াড়দের ওপরেই যায়।"
১৩ ম্যাচে দশম জয়ের পর মোহামেডানের শিরোপা সম্ভাবনা টিকে রইল কাগজে-কলমে। তবে শেষ তিন রাউন্ডে একটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩১৭/৬ (ইমরুল ৮, রনি ১৪১, হাবিবুর ৮, মাহিদুল ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৮, মিরাজ ৫৩*, আরিফুল ২১, আবু হায়দার ২*; হাসান ১০-০-৬৮-১, শেখ মেহেদি ১০-০-৭২-২, তাইজুল ১০-২-২৮-১, সানজামুল ১০-১-৭৩-১, রুবেল ১০-০-৭৫-১)।
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৮.৫ ওভারে ২৮৪ (তামিম ১৪, পারভেজ ৩৮, শাহাদাত ৫১, জাকির ৪১, মুশফিক ১০, নাঈম ২, শেখ মেহেদি ৬৪, সানজামুল ৪৯, হাসান ০, তাইজুল ০, রুবেল ১*; আবু হায়দার ৯.৫-০-৪৮-২, নাঈম ১০-২-৪১-১, মুশফিক ৯-০-৫৯-২, মিরাজ ১০-০-৭৩-১, নাসুম ১০-০-৫৬-২)।
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৩৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার।