আকিল-জোসেফের বোলিংয়ের পর ব্রুকসের ম্যাচ জেতানো ইনিংস

নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে মহামূল্য ১০ পয়েন্ট পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2022, 04:49 AM
Updated : 18 August 2022, 04:49 AM

ওয়ানডেতে অল আউট হতে যেন ভুলে গিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। দেড় বছর পর তাদেরকে সেই স্বাদ মনে করিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আকিল হোসেন, আলজারি জোসেফ ও অন্য বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে তারা কিউইদের করতে দিল না দুইশ রানও। রান তাড়ায় শামার ব্রুকসের দুর্দান্ত ইনিংস ক্যারিবিয়ানদের এনে দিল দারুণ জয়। আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে ১০ পয়েন্ট!

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বারবাডোজে পূর্ণ শক্তির নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারাল খর্ব শক্তির দল নিয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

একসময় যে মাঠের উইকেট ছিল পেস স্বর্গ, সময়ের পরিক্রমায় চরিত্র বদলে ব্রিজটাউনের সেই কেনসিংটন ওভালে এখন স্পিনের দাপট। শুষ্ক উইকেটে কিউই ব্যাটসম্যানরা করতে পারেন স্রেফ ১৯০ রান।

সবশেষ তারা এই সংস্করণে অল আউট হয়েছিল গত বছরের মার্চে। মাঝের সময়টায় ১০ ওয়ানডেতে তাদের সব উইকেট নিতে পারেনি কোনো দল।

১০ ওভারে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন, পেসার আলজাসির জোসেফ নেন ৩৬ রানে ৩টি।

রান তাড়ায় বারবার বৃষ্টিবাধায় ছন্দ হারানোর শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১১ ওভার বাকি রেখেই জিতে যায় ক্যারিবিয়ানরা।

তিনে নেমে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৯১ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা শামার ব্রুকস।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডে শুরুটা ছিল মন্থর। মার্টিন গাপটিল ও ফিন অ্যালেনের মতো আগ্রাসী দুই ব্যাটসম্যানকে শান্ত রাখেন জেসন হোল্ডার ও আকিল হোসেন। প্রথম ৬ ওভারে রান আসে ১৭।

সপ্তম ওভারে হোল্ডারকে দুই ছক্কা ও এক চার মারেন অ্যালেন। অষ্টম ওভারের পর বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টির বিরতির পরই অ্যালেনের বিদায়। দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৪ বলে ২৫ রান করা ওপেনারকে ফেরান আকিল।

আকিল নিজের পরের ওভারে বিদায় করেন আরেক ওপেনার গাপটিলকেও (৩৯ বলে ২৪)।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে তারা হারাতে থাকে উইকেট। প্রতিবারই কোনো জুটি জমতে শুরু করে কিউইদের আশা জোগানোর সময়ই তা থামিয়ে দেন ক্যারিবিয়ানরা বোলাররা। একের পর এক ব্যাটসম্যান আউট হন থিতু হয়ে।

কিউইদের প্রথম ৮ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই ২০ স্পর্শ করেন, কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ৩৫ পর্যন্ত যেতে পারেননি একজনও। তিনে নেমে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ৩৪ রানই দলের সর্বোচ্চ।

নতুন বলে আকিলের প্রথম স্পেল ছিল ৭-০-২০-৩! পরে অভিষিক্ত অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ারও বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেন। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ইয়ানিক কারাইয়াহ অভিষেকে অবদান রাখেন মাইকেল ব্রেসওয়েলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে। সাতে নেমে ব্রেসওয়েল করেন ৩৩ বলে ৩১।

মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ বোলিং তিন উইকেট নেন পেসার আলজারি জোসেফ। শেষ দিকে ফিরে দুই উইকেট নেন হোল্ডার।

ক্যারিবিয়ানদের রান তাড়ার শুরুটা আদর্শ হয়নি। প্রথম ওভারে বৃষ্টিতে আবার বন্ধ হয় খেলা। খেলার শুরুর পরপরই কাইল মেয়ার্সকে (৬) ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। আরেক ওপেনার শেই হোপ স্বভাববিরুদ্ধ আগ্রাসী শুরুর পর বিদায় নেন টিম সাউদির বলে (২৪ বলে ২৬)।

পরে কেসি কার্টিকে যখন ১১ রানে আউট করেন মিচেল স্যান্টনার, তাদের রান ৩ উইকেটে ৭৪। পরের জুটিতেই ৮৭ বলে ৭৫ রান যোগ করে নড়বড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দেন ব্রুকস ও নিকোলাস পুরান। এই সময়ও বৃষ্টিতে আরেক দফা বন্ধ থাকে খেলা।

পরে ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে পুরান করেন ৪৭ বলে ২৮। দারুণ খেললেও কাজ শেষ করে ফিরতে পারেননি ব্রুকসও। ট্রেন্ট বোল্টের নাকল বলে বোল্ড হন তিনি ৭৯ রানে।

তবে জেসন হোল্ডার ও প্রায় সাত বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা জার্মেইন ব্ল্যাকউড দলকে নিয়ে যান লক্ষ্যে।

২০১৪ সালের পর প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারাতে পারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ৮ বছরে অবশ্য মোটে ৫ বারই এই সংস্করণে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ একই মাঠে, শনিবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৪৫.২ ওভারে ১৯০ (গাপটিল ২৪, অ্যালেন ২৫, উইলিয়ামসন ৩৪, কনওয়ে ৪, ল্যাথাম ১২, মিচেল ২০, ব্রেসওয়েল ৩১, স্যান্টনার ২৫, সাউদি ১২, ফার্গুসন ০*, বোল্ট ১; হোল্ডার ৮-১-৩৯-২, আকিল ১০-০-২৮-৩, জোসেফ ৮.২-০-৩৬-৩, সিনক্লেয়ার ১০-০-৩৭-১, কারাইয়াহ ৯-০-৪৯-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৯ ওভারে ১৯৩/৫ (হোপ ২৬, মেয়ার্স ৬, ব্রুকস ৭৯, কার্টি ১১, পুরান ২৮, ব্ল্যাকউড ১২*, হোল্ডার ১৩*; বোল্ট ১০-০-৪৯-২, সাউদি ১০-০-৩৯-২, ফার্গুসন ৮-০-৫৫-০, স্যান্টনার ৭-০-২৫-১, ব্রেসওয়েল ৪-০-২১-০)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: শামার ব্রুকস।