নিউ জিল্যান্ডের চুক্তি থেকে ‘মুক্তি’ নিলেন বোল্ট

পরিবারকে সময় দিতে ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলো খেলতে বাঁহাতি পেসারের এই সিদ্ধান্ত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 05:41 AM
Updated : 10 August 2022, 05:41 AM

ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ার আরেকটি নমুনা এবার দেখা গেল। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালেন ট্রেন্ট বোল্ট। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বাঁহাতি পেসারের অংশগ্রহণ হবে খুবই সীমিত।

পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে ও বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় বাধাহীনভাবে খেলতে এনজেডসিকে বোল্ট অনুরোধ করেন বোর্ডের চুক্তি থেকে ছেড়ে দিতে। দুই পক্ষের দফায় দফায় আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত বুধবার ৩৩ বছর বয়সী পেসারকে চুক্তির বাইরে রাখার কথা জানায় এনজেডসি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা, নতুন এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো একটিতে বোল্টের সম্পৃক্ততার খবর খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দুই লিগই হবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, যখন নিউ জিল্যান্ড ব্যস্ত সময় কাটায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থাকায় নিউ জিল্যান্ডের হয়ে বোল্টের খেলা নির্ভর করবে অনেক ‘যদি, কিন্তু, তবে’, এসবের ওপর। কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ঘরোয়া ক্রিকেটের চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের সাধারণত জাতীয় দলের জন্য খুব বেশি বিবেচনা করে না এনজেডসি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে ও পরিবারকে সময় দেওয়ার পর বোল্ট নিজেও খুব একটা সময় পাবেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য।

নিউ জিল্যান্ডের চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অবশ্য খেলবেন বোল্ট। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তাকে পাওয়া যাবে। এরপর থেকেই জাতীয় দলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

বিবৃতিতে বোল্ট তুলে ধরলেন তার সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ।

“আমার জন্য এটি ছিল কঠিন এক সিদ্ধান্ত এবং এনজেডসিকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই এই সমাধানে আসতে পারার জন্য। দেশের হয়ে খেলতে পারা ছিল আমার ছেলেবেলার স্বপ্ন এবং গত ১২ বছরে ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে যা কিছু অর্জন করতে পেরেছি, তাতে আমি গর্বিত।”

“দিনশেষে এই সিদ্ধান্ত আমার স্ত্রী গার্ট ও তিন বাচ্চাকে ঘিরে। আমার জন্য পরিবারই ছিল সবসময় সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা এবং পরিবারকে সবকিছুর ওপরে প্রাধান্য দিতে ও ক্রিকেট পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আমার কোনো অস্বস্তি নেই।”

নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলার তাড়না এখনও তীব্র বলেই দাবি করলেন বোল্ট। তবে একজন ফাস্ট বোলারের অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ ভাবনাকেই আপাতত গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেন তিনি।

“এখনও দেশের হয়ে খেলার প্রবল ইচ্ছে আমার আছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করার স্কিল আছে বলেও বিশ্বাস করি। তবে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থাকায় আমাকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে, এই বাস্তবতাকেও সম্মান করি আমি।”

“আমি একজন ফাস্ট বোলার। আমার ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য সীমিত। আমার তাই মনে হয়, পরের ধাপে পা রাখার জন্য উপযুক্ত সময় এটিই।”

নিউ জিল্যান্ডের হয়ে তিনশ টেস্ট উইকেট শিকারি মাত্র চার বোলারের একজন তিনি। ৭৮ টেস্টে তার শিকার ৩১৭ উইকেট। পাশাপাশি ৯৩ ওয়ানডেতে উইকেট ১৬৯ ও ৪৪ টি-টোয়েন্টিতে ৬২টি। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের ইতিহাসের চতুর্থ সফলতম বোলার তিনি।

গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউ জিল্যান্ডের শিরোপা জয়, ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার পথে তার ছিল বড় অবদান।

আইসিসি ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের এক নম্বর বোলার, টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে আছেন ১১ নম্বরে। গত এক দশক ধরে নিউ জিল্যান্ডের মূল স্ট্রাইক বোলার তিনি। টিম সাউদির সঙ্গে তার নতুন বলের জুটি বিশ্বের সেরাগুলির একটি হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই।

এমন একজনকে হারিয়ে বোর্ডও হতাশ। তবে বোল্টের সিদ্ধান্তের পেছনে বাস্তবতা অনুধাবন করেই তার প্রতি সম্মান জানালেন এনজেডসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট।

“আমাদের কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে এবং ট্রেন্ট (বোল্ট) জানে যে, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকেই প্রাধান্য দেব, যারা কেন্দ্রীয় ও ঘরোয়া চুক্তিতে আছে। ট্রেন্টের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করি। সে পুরোপুরি সৎ ছিল এবং নিজের সিদ্ধান্তের কারণ আমাদের কাছে খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছে। তাকে চুক্তি থেকে হারানো আমাদের জন্য অবশ্যই দুঃখজনক, তবে আমাদের শুভ কামনা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা থাকছে তার প্রতি।”

“২০১১ সালের শেষ দিকে অভিষেকের পর থেকে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ট্রেন্টের অবদান বিশাল এবং এখন তাকে মনে করা হয় সব সংস্করণের উপযোগী বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। তার অর্জন নিয়ে আমরা গর্বিত।”

গত কয়েক বছরে বেশ কজন ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আচমকা অবসরে গেছেন বা কোনো একটি-দুটি সংস্করণ ছেড়ে দিয়েছেন। সেসব সিদ্ধান্তের পেছনে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার প্রেক্ষাপট ছিল স্পষ্ট। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, সুনিল নারাইনের মতো তারকারা গত ১০-১২ বছর ধরেই ক্যারিবিয়ান বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকেন না স্বাধীনভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার জন্য।