দ্বিতীয় নতুন বলের অপেক্ষাতেই যেন ছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ওভারের পর ওভার যেখানে উইকেটের জন্য মাথা কুটে ধুঁকতে হয়েছে, সেখানে হুট করেই ২ রানের মধ্যে ধরা দিল ৩ উইকেট! দীর্ঘ খরার পর প্রবল বর্ষণ যেন। কিন্তু সেই সাফল্য স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। জশুয়া দা সিলভার ব্যাটিং দৃঢ়তায় বৃষ্টিবিঘ্নিত আরেকটি দিনও নিজেদের করে নিল ক্যারিবিয়ানরা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের রান ৬ উইকেটে ৪১৭। বৃষ্টির কারণে আগের দিন খেলা হয়েছিল ৬৮ ওভার। বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনে খেলা হতে পারে স্রেফ ৫৫ ওভার।
আশি পেরিয়েও সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারার হতাশা নিয়ে ফেরেন তেজনারাইন চন্দরপল ও আলিক আথানেজ। দ্বিতীয় নতুন বলে দুই বাঁহাতিকে ফেরান বাংলাদেশের দুই পেসার মুশফিক হাসান ও রিপন মন্ডল।
এরপর ব্র্যান্ডন কিং ও ইয়ানিক ক্যারাইয়াহকেও বেশি দূর যেতে দেননি মুশফিক, নাঈমরা। তবে এরপর আর আনন্দের উপলক্ষ্য পায়নি বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে জশুয়া ও কেভিন সিনক্লেয়ার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেছেন ১০০ রান। অধিনায়ক জশুয়া দিন শেষ করেন ৭৩ রানে, সিনক্লেয়ার ৪৭।
জশুয়াকে অবশ্য ৫ রানে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রিপনের বলে গালিতে ক্যাচ ছাড়েন নাঈম হাসান।
পেসারদের মধ্যে আগের দিন কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন মুশফিক। এ দিনও দলের সেরা বোলার তিনি। একই ওভারে চন্দরপল ও কিংয়ের উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রানের গতিতেও কিছুটা লাগাম দিতে সফল হন ২০ বছর বয়সী পেসার।
পেসারদের জন্য সুবিধা থাকা উইকেটে এ দিনও ইতিবাচক ছাপ ফেলতে পারেননি তুলনামূলক অভিজ্ঞ রেজাউর রহমান রাজা। উল্টো খরুচে বোলিংয়ের কারণে তাকে দিয়ে ৩ ওভারের বেশি করাতে পারেননি অধিনায়ক আফিফ হোসেন।
আরেক পেসার রিপন নেন আথানেজের উইকেট। এছাড়া জশুয়াকেও বেশ কয়েকবার কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন তিনি। হতাশ করেন রিশাদ হোসেন। নিজের সঠিক লাইন-লেংথই খুঁজে পাননি এই লেগ স্পিনার। প্রথম দিনের মতোই খরুচে ছিলেন তিনি।
টেস্ট দলে জায়গা ফিরে পাওয়ার অভিযানে থাকা নাঈম ফেরান ক্যারাইয়াহকে। প্রথম দিনের মতোই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের রানের লাগাম টেনে ধরেন ৮ টেস্ট খেলা অফ স্পিনার।
বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়ে দিনের শুরুটা নিয়ন্ত্রণ করেন আগের দিন ৩৫ রান করা আথানেজ। প্রথম বলেই রাজাকে চার মারেন তিনি। ওই ওভারে মারেন আরও একটি বাউন্ডারি। রাজার পরের ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে মারেন ছক্কা।
রাজার বদলে মুশফিককে আক্রমণে আনেন আফিফ হোসেন। প্রথম বলে ২ রান নিয়ে পঞ্চাশ পূরণ করেন আথানেজ। পরের পাঁচ বলে তিনি মারেন তিনটি বাউন্ডারি।
পেসারদের মার খাওয়ার সময়টায় দিনের শুরুতে আঁটসাঁট বোলিং করছিলেন নাঈম। প্রথম ৩ ওভারে স্রেফ ১ রান দেন তিনি। তার করা চতুর্থ ওভারে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে জোড়া ছক্কা মারেন আথানেজ। স্রেফ ৭৭ বলে পৌঁছে যান ৭৬ রানে।
দিনের দশম ওভারে আসে তেজনারাইনের ব্যাট থেকে প্রথম চার। এর পরই আলোক স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
দীর্ঘ বিরতির পর খেলা শুরু হলে দ্বিতীয় নতুন বলে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশের বোলাররা। অফ স্টাম্পে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি তেজনারাইনের ব্যাটের কানায় ছোবল দিয়ে আশ্রয় নেয় কিপারের গ্লাভসে।
ছয় ঘণ্টার বেশি সময় উইকেটে থেকে ২৩৬ বলে ৮৩ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। জুটি থামে ১২১ রানে।
এই উইকেটের হাত ধরেই আসে আরেকটি সাফল্য। ওভারের শেষ বলে কিছুটা থমকে আসা ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন ব্র্যান্ডন কিং। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২২ ওয়ানডে ও ৩৫ টি-টোয়েন্টি খেলা ব্যাটসম্যান কোনো রান করতে পারেননি।
পরের ওভারে বাংলাদেশের আনন্দ আরও বাড়ান রিপন। তার মিডল স্টাম্প লাইনের ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন আথানেজ। ১২ চার ও ৩ ছয়ে তিনি করেন ৯৮ বলে করেন ৮৫ রান।
জশুয়ার শুরুটা ছিল একটু নড়বড়ে। ওই সময়ই তিনি ক্যাচটি দেন। তবে জীবন পাওয়ার পর আর কোনো ভুল করেননি বাংলাদেশে দুটি টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যান। নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে পৌঁছে যান প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে নিজের দ্বাদশ ফিফটিতে।
ক্যারাইয়াহ পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। নাঈমের বলে উইকেটের পেছনে একবার তার ক্যাচ নিতে পারেননি জাকের আলি। তবে নাঈমের পরের ওভারেই তা পুষিয়ে দেন জাকের। তার ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড ১৪ রান করা ক্যারাইয়াহ।
এটিই ছিল বাংলাদেশের শেষ সাফল্য। এরপর দিনের বাকি পৌনে দুই ঘণ্টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি জশুয়া ও সিনক্লেয়ার। আলগা বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ওভারপ্রতি প্রায় চারের বেশি করে রান তুলেছেন দুজন।
ফিফটির দুয়ারে দাঁড়িয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামবেন সিনক্লেয়ার। জশুয়ার সামনেও বড় কিছুর হাতছানি। তবে ম্যাচের পেরিয়ে গেছে দুই দিন, শেষ হয়নি এখনও এক ইনিংসও। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির শঙ্কা আছে বৃহস্পতিবারও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল: ১২৩ ওভারে ৪১৭/৬ (চন্দরপল ৮৩, আথানেজ ৮৫, কিং ০, জশুয়া ৭৩*, ক্যারাইয়াহ ১৪, সিনক্লেয়ার ৪৭*; মুশফিক ২০-৪-৫৪-৩, রিপন ২২-৭-৬১-১, রাজা ১৪-১-৭৯-০, নাঈম ৩৮-৯-১১১-১, রিশাদ ১১-০-৬১-০, আফিফ ৫-০-১৭-০, সাইফ ১০-২-১৮-১, জয় ৩-০-১৪-০)