নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্নসারথি ‘ল্যাজারুস’ জ্যাম্পা

অসাধারণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে নিয়ে এসেছেন এই লেগ স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2023, 12:19 PM
Updated : 13 Nov 2023, 12:19 PM

ভালো বিশ্বকাপ অভিযানের জন্য চাই ভালো প্রস্তুতি। বেশিরভাগ ক্রিকেটারের ভাবনা হয়তো এমনই। তবে অ্যাডাম জ্যাম্পা ভিন্ন কিছু ভাবতেই পারেন। চোট ও অন্যান্য বাধা-বিপত্তি সামলে এই লেগ স্পিনার যেভাবে বিশ্ব মঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়াকে আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে নিয়ে এসেছেন, তা সত্যিই অকল্পনীয়।

অস্ট্রেলিয়াকে সেমি-ফাইনালে তুলতে বল হাতে জ্যাম্পার অবদান সবচেয়ে বেশি। প্রথম রাউন্ড শেষে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ৯ ইনিংসে নিয়েছেন ২২ উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং বিভাগে জ্যাম্পার দাপট কতটা, তা ফুটে ওঠে আরেকটি পরিসংখ্যানে। আসরে উইকেট শিকারির তালিকায় প্রথম ১৭ জনের মধ্যেও তিনি ছাড়া তার দলের আর কেউ নেই! ৯ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ১৮ নম্বরে আছেন পেসার জশ হেইজেলউড।

জ্যাম্পার শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। এর যথেষ্ট কারণও অবশ্য ছিল। বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিনি চোট পান নিতম্বে। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচের একদিন আগে আবার হোটেলের সুইমিং পুলে সাঁতরাতে গিয়ে আঘাত পান মুখে।

দলের প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারলেও তাই ভালো করতে পারেননি জ্যাম্পা। ভারতের বিপক্ষে ৮ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি উইকেট পেলেও ১০ ওভারে রান দেন ৭০। দুই ম্যাচেই হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া।

পায়ের পেশির চোটে শুরুর আগেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার। অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার জ্যাম্পা। তাকে পূর্ণ ফিটনেসে ফিরে পেতে তাই মরিয়া ছিল অস্ট্রেলিয়ার ফিজিওরা।

তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াইয়ের আগেও অবশ্য পুরোপুরি ফিট ছিলেন না তিনি। ব্যথা ছিল পিঠে। সেই অস্বস্তি নিয়েই দারুণ বোলিং করেন ওই ম্যাচে। শ্রীলঙ্কাকে অল্পে বেঁধে রাখতে ৪৭ রানে নেন ৪ উইকেট। আসরে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া। তিনি নিজে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে জ্বরে আক্রান্ত হন জ্যাম্পা। তখনও তার পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা ছিলই। সব সমস্যা পেছনে ফেলে আবারও জ্বলে ওঠেন তিনি। ফের নেন ৪ উইকেট, ৫৩ রান দিয়ে। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও শিকার ধরেন ৪টি, স্রেফ ৮ রান দিয়ে।   

প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর টানা সাতটি জিতে সেমি-ফাইনালের সামনে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে অগ্রণী ভূমিকা জ্যাম্পার। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তো ৩১ বছর বয়সী জ্যাম্পার একটি নামও দিয়েছেন- ল্যাজারুস, যার অর্থ ‘ঈশ্বর সাহায্য করেছেন।’

প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি উইকেট নিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফলতম স্পিনারও হয়ে গেছেন জ্যাম্পা। পেছনে ফেলেছেন ২০০৭ আসরে ২১ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার ব্র্যাড হগকে।

আর দুটি উইকেট পেলে আরেকটি রেকর্ড গড়ে ফেলবেন জ্যাম্পা। বিশ্বকাপের এক আসরে যে কোনো দেশের স্পিনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড মুত্তিয়া মুরালিধরনের। ২০০৭ আসরে ২৩ উইকেট নেওয়া শ্রীলঙ্কান স্পিনারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি জ্যাম্পার সামনে।

এখন পর্যন্ত ৯৪ ওয়ানডেতে ১৬৪ উইকেট নেওয়া জ্যাম্পার বোলিং গড় ২৭.৬৯। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে গড় ৪৬.৭৮।

তবে আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে হয়তো ভিন্ন জ্যাম্পার মুখোমুখি হতে হবে প্রোটিয়াদের। প্রথম রাউন্ডে লক্ষ্ণৌতে চোট সঙ্গী করে ৭০ রান দিলেও এবার তিনি কঠিন পরীক্ষা নিতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের।

অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বোলিং কোচ ও নিউ জিল্যান্ডের সাবেক স্পিনার ড্যানিয়েল ভেটোরি বললেন, বলের ওপর জ্যাম্পার এতটা নিয়ন্ত্রণ কখনও দেখেননি তিনি।

"আমরা সকলেই স্কিল ও বৈচিত্র্য বিষয়ে জানি। কিন্তু তার টানা স্পটে বল ফেলার সামর্থ্যের কারণে ব্যাটসম্যানরা তাকে আক্রমণ করার খুব কম সুযোগ পায়। লেংথের নিয়ন্ত্রণই এখানে বড় ব্যাপার। কারণ অন্য সব স্কিল তো আছেই। আর এই সবকিছু যখন একত্রিত হয়, তখন তাকে খেলা প্রায় অসম্ভব।”