চলতি আসরে তিন সেঞ্চুরিতে এরই মধ্যে কুইন্টন ডি কক ছাড়িয়ে গেছেন নিজের প্রথম দুই বিশ্বকাপকে, ছুটছেন দেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার পথে।
Published : 24 Oct 2023, 07:35 PM
শরিফুল ইসলামের স্লোয়ার ডেলিভারি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে পাঠালেন কুইন্টন ডি কক। টিভি পর্দায় ভেসে উঠল দর্শকের হাতে ‘যেও না ডি কক, ২০২৭ বিশ্বকাপেও তোমাকে দেখতে চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড। চলতি টুর্নামেন্ট শেষে আগেই ওয়ানডে ছাড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন ডি কক, সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্যই দর্শকের ওই আকুতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার-ব্যাটসম্যান অনুরোধ রাখবেন কিনা, উত্তর দেবে সময়। আপাতত নিজের শেষ বিশ্বকাপে রাঙিয়ে রাখার অভিযানেই যেন নেমেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের প্রথম দুই বিশ্বকাপকে। ছুটছেন দেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার পথে।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে শরিফুলকে ওই ছক্কার আগে-পরে আরও ছয়বার বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন ডি কক। এর সঙ্গে ১৫টি চারে খেলেন ১৪০ বলে ১৭৪ রানের ইনিংস। চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এটিই তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করেন ডি কক। পরের দুই ম্যাচে তাকে দমিয়ে রাখে নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ড। ওই দুই ম্যাচের জমানো বারুদের বিস্ফোরণ যেন হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। শুরুতে রয়ে-সয়ে ইনিংস এগোনোর পর ক্রমেই তার ব্যাট হয়ে ওঠে খাপছাড়া তলোয়ার।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সামনে সাবলীল ব্যাটিংই করেন ডি কক। ২ চার ও ১ ছক্কায় প্রথম ১০ ওভারে তিনি নেন ২৪ বলে ২৪ রান। বাঁহাতির সামনে অফ স্পিনারের ‘ম্যাচ-আপ’ ভাবনায় নতুন বলে মেহেদী হাসান মিরাজকে টানা ৭ ওভার বোলিং করান সাকিব আল হাসান। দেখেশুনে ওই ধাপ পার করেন ডি কক।
এরপর তাকে থামানোর আর কোনো পথ বের করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ‘যেমন খুশি, তেমন সাজো’র মতোই যেন ‘যেমন খুশি, তেমন মারো’র প্রদর্শনী মেলে ধরেন ডি কক। দুই পাশে মুম্বাইয়ের ছোট বাউন্ডারির সুবিধা কাজে লাগিয়ে ডিপ মিড উইকেট, ডিপ স্কয়ার লেগ, ডিপ এক্সট্রা কভার দিয়ে সিংহভাগ রান নেন ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
৪৭ বলে ফিফটি করার পর সেঞ্চুরি ছুঁতে আরও ৫৪ বল খেলেন তিনি। গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে তিনটি সেঞ্চুরির কীর্তি। ২০১১ বিশ্বকাপে এবি ডি ভিলিয়ার্স করেছিলেন দুই সেঞ্চুরি।
তিন অঙ্ক ছুঁয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন ডি কক। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় স্রেফ ২৮ বলে করেন পরের পঞ্চাশ রান। সাকিবের এক ওভারে পরপর চার বলে তিনি মারেন ৬, ৪, ৬ ও ৪; ওই ওভারে মোট ২২ রান দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শেষ পর্যন্ত ৪৬তম ওভারে হাসান মাহমুদের অফ স্টাম্পের বাইরে লো ফুল টস ডেলিভারিতে বেশ দূর থেকে ব্যাট চালিয়ে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন ডি কক। অল্পের জন্য হয়নি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সম্ভাবনা জাগিয়েও তিনি ছুঁতে পারেননি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে প্রথম দ্বিশতক।
২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৫ রান করেছিলেন ভিরেন্দার শেবাগ। স্রেফ ১ রানের জন্য সেটি এখনও টিকে রইল সবার ওপরে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস গ্যারি কার্স্টেনের ১৮৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৯৯৬ সালে। ডি কক এই তালিকাতেও রইলেন দুইয়ে।
চলতি আসরে পাঁচ ম্যাচে তিন সেঞ্চুরিতে ৪০৭ রান করে ফেললেন ডি কক। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৯ ইনিংসে তিনি করেছিলেন ৩৪৫ রান। এর আগের বার ৮ ইনিংসে স্রেফ এক ফিফটিতে করেন ১৪৫ রান।
বিশ্বকাপের এক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড জ্যাক ক্যালিসের। ২০০৭ সালে ৯ ইনিংসে তিনি করেন ৪৮৫ রান। তাকে টপকে যেতে আর ৭৮ রান প্রয়োজন ডি ককের। এজন্য অন্তত আরও ৪ ম্যাচ পাবেন বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান।
ডি ককের সেঞ্চুরির সঙ্গে হাইনরিখ ক্লাসেনের ৪৯ বলে ৯০ ও এইডেন মার্করামের ৬৯ বলে ৬০ রানের ইনিংসে ৫ উইকেটে ৩৮২ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর চেয়ে বড় দলীয় ইনিংস আছে আর একটি। গত আসরে ইংল্যান্ডের ৩৮৬ রান।
ইনিংসে মোট ১৯টি ছক্কা মেরেছে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এটি। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মেরেছিল সমান ১৯টি ছক্কা।
বিশ্বকাপে কোনো দলের এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কা রয়েছে শুধু ইংল্যান্ডের, গত আসরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫টি। এর বাইরে সমান ১৯টি ছক্কা মেরেছে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।