বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
Published : 05 Oct 2023, 09:19 PM
পুঁজি একেবারে কম ছিল না ইংল্যান্ডের। শুরুতে উইল ইয়াংকে ফিরিয়ে তারা পায় আনন্দের উপলক্ষও। তবে ওখানেই শেষ। ম্যাচের বাকিটা জুড়ে কেবলই ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রর দাপট। দুজনের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল নিউ জিল্যান্ড।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৯ উইকেটে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ২৮৩ রানের লক্ষ্য ৮২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে গত আসরের রানার্স-আপরা।
এবারই প্রথম বিশ্বকাপের এক ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান পেলেন শতকের দেখা। ১৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১৫২ রান করেছেন কনওয়ে। বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে এর চেয়ে বড় ইনিংস আছে আর দুটি। ২০১৫ সালে মার্টিন গাপটিলের ২১৫, যা বিশ্বকাপের রেকর্ড। এছাড়া ১৯৭৫ সালে গ্লেন টার্নার করেন অপরাজিত ১৭১।
জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে রবীন্দ্র খেলেছেন ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ১২৩ রানের ইনিংস। স্রেফ ৯৬ বলের এই ইনিংস ছাড়াও বল হাতে ১ উইকেট নেন তরুণ অলরাউন্ডার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে রেকর্ডের পাতায়ও নাম তুলেছেন ২৩ বছর ৩২১ দিন বয়সী রবীন্দ্র। বিশ্ব আসরে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে এর চেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কেউ। ১৯৯৬ সালে একই দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দিন নাথান অ্যাসলের বয়স ছিল ২৪ বছর ১৫২ দিন।
রান তাড়ায় স্রেফ ১০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দুই সেঞ্চুরিয়ানের অবিচ্ছিন্ন জুটির সংগ্রহ ২৭৩ রান, বিশ্বকাপে যা নিউ জিল্যান্ডের রেকর্ড।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে বিপক্ষেও যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড এটি। তাদের বিপক্ষে ২০১১ সালের আসরে ২৩১ রানের জুটি গড়েন শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা।
বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে স্রেফ দুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৫ সালে ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের ৩৭২ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৯৯ সালে রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলির ৩১৮।
কনওয়ে-রবীন্দ্রর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে ইংল্যান্ডের সব বোলারই খরচ করেন ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান। একমাত্র উইকেট নেন স্যাম কারান।
ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগের মতো প্রথম দফায়ও শুরুটা ভালো ছিল ইংল্যান্ডের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন জনি বেয়ারস্টো। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।
বেয়ারস্টোর মতো ভালো শুরুকে টেনে নিতে পারেননি জস বাটলার, হ্যারি ব্রুকরাও। ২টি করে চার-ছক্কায় ইংলিশ অধিনায়ক খেলেন ৪২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রান করে ফেরেন ব্রুক।
তিন নম্বরে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন জো রুট। রিভার্স স্কুপে ট্রেন্ট বোল্টের বলে মারেন দারুণ এক ছক্কা। দেখেশুনে খেলে তিনি করেন আসরের প্রথম ফিফটি। ৪ চার ও ১ ছক্কায় তিনি ৮৬ বলে করেন ৭৭ রান।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে রুটের বিদায়ের পরও নিচের দিকের ব্যাটসম্যানরা যোগ করেন আরও ৫৩ রান।
ম্যাচ হারলেও অন্যরকম এক রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ডও। ওয়ানডেতে এবারই প্রথম কোনো দলের ১১ জনের সবাই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক। এর আগে দশ ব্যাটসম্যানের দুই অঙ্ক ছোঁয়ার ঘটনা রয়েছে ৫টি।
নিউ জিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ম্যাট হেনরি। মিচেল স্যান্টনার, গ্লেন ফিলিপস ধরেন ২টি করে শিকার।
নিতম্বের সমস্যায় ম্যাচটি খেলতে পারেননি ইংল্যান্ডের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসনকে পায়নি নিউ জিল্যান্ড। তাদের ছাড়াই দাপুটে জয়ে আসর শুরু করল কিউইরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৮২/৯ (বেয়ারস্টো ৩৩, মালান ১৪, রুট ৭৭, ব্রুক ২৫, মইন ১১, বাটলার ৪৩, লিভিংস্টোন ২০, কারান ১৪, ওকস ১১, রশিদ ১৫*, উড ১৩*; বোল্ট ১০-১-৪৮-১, হেনরি ১০-১-৪৮-৩, স্যান্টনার ১০-০-৩৭-২, নিশাম ৭-০-৫৬-০, রবীন্দ্র ১০-০-৭৬-১, ফিলিপস ৩-০-১৭-২)
নিউ জিল্যান্ড: ৩৬.২ ওভারে ২৮৩/১ (কনওয়ে ১৫২*, ইয়াং ০, রবীন্দ্র ১২৩*; ওকস ৬-০-৪৫-০, কারান ৬-২-৪৭-১, উড ৫-০-৫৫-০, মইন ৯.২-০-৬০-০, রশিদ ৭-০-৪৭-০, লিভিংস্টোন ৩-০-২৪-০)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাচিন রবীন্দ্র