অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের চোখে, ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসটিই খেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
Published : 08 Nov 2023, 02:15 PM
‘এটি ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস’- কোনো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণের পথে না হেঁটে সোজাসাপটাই বললেন প্যাট কামিন্স। আফগানিস্তানকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তার কাছে প্রশ্ন, ম্যাক্সওয়েলের ২০১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ইনিংস কিনা? উত্তরে কামিন্স বললেন, শুধু অস্ট্রেলিয়ার নয়, ইতিহাসেরই সেরা ইনিংস এটি।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে মঙ্গলবার গ্যালারির হাজারও দর্শক, এর বাইরে টিভির পর্দায় আরও কয়েক কোটি চোখ সাক্ষী হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের। কামিন্স এটি দেখেছেন সম্ভাব্য সেরা জায়গায় থেকে। ম্যাক্সওয়েল যখন একের পর এক ডেলিভারি আছড়ে ফেলছেন সীমানায়, তখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক দাঁড়িয়ে স্রেফ ২২ গজ দূরে।
২৯২ রানের লক্ষ্যে স্রেফ ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ম্যাক্সওয়েল যে বীরোচিত ইনিংসটি খেলেছেন, কামিন্সই ছিলেন এর পার্শ্ব চরিত্রে। ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির পুরোটা সময় তিনি কাছ থেকে দেখেছেন ম্যাক্সওয়েলের অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতড়ানো, মাঠ ছাড়তে চেয়েও লড়াই চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা এবং শেষ পর্যন্ত চোট এড়িয়ে দলকে জেতানোর কীর্তি।
অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়ে কিছুটা কৃতিত্ব পাওনা কামিন্সের নিজেরও। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৬৮ বলে ১২ রানের ইনিংসটিও কম মূল্যবান নয়। তবে ম্যাচ শেষে অধিনায়কের পূর্ণ কৃতিত্ব ও প্রশংসা জুড়ে শুধুই ম্যাক্সওয়েল।
“আমার মতে, এটি ওয়ানডেরই সর্বকালের সেরা ইনিংস। আমি যত দূর দেখেছি, খুব সম্ভবত এটিই ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস। আমাদের সব ক্রিকেটারদের মধ্যে কথা হচ্ছিল… এটি এমন এক দিন, যেদিন আমরাও স্টেডিয়ামে ছিলাম তখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একাই রান তাড়া করেছিল।”
ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসের প্রশংসায় যা বলা হবে তা-ই কম। অত্যধিক গরমে বারবার ক্র্যাম্পের ধকল, হ্যামস্ট্রিং ও পায়ের পেছনের পেশিতে টানের কারণে হাঁটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার ওপর স্রেফ ৩ উইকেট হাতে নিয়ে আফগানিস্তানের উজ্জীবিত বোলিংয়ের সামনে দুইশর বেশি রান বাকি থাকার চ্যালেঞ্জ।
সব কিছুর বিপরীতে দাঁড়িয়েই ম্যাক্সওয়েল খেলেছেন ১২৮ বলে ২১ চার ও ১০ ছক্কায় ২০১ রানের ইতিহাসগড়া ইনিংস। নিজের দ্বিশতক পূর্ণ করা ছক্কায় তিনি নিশ্চিত করেছেন দলের জয়ও। এর আগে রীতিমতো এক পায়ে দাঁড়িয়েই অনায়াসে পার করেছেন সীমানা। একবার তো ক্র্যাম্প নিয়েই রিভার্স স্কুপ করে মেরেছেন ছক্কা।
স্রেফ ২২ গজ দূর থেকে একরকম দর্শক হিসেবেই এমন পাগলামির সাক্ষী হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন কামিন্স।
“এটি স্রেফ ওয়ান-ম্যান শো। এটি অনেকটা এমন যে, খুবই সহজ। আমি অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে মাঠে কোনো গ্যাপই দেখছিলাম না। কোন জায়গা দিয়ে বাউন্ডারি সেটি খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। কিন্তু প্রতিবার সে (গ্যাপ) দেখেছে এবং বল সীমানা পার করেছে।”
“সে নড়তে পারছে না কিন্তু তবুও রিভার্স করে থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে ছক্কা মারছে। সে ফ্রিক! সে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা দিয়ে মারছে এবং দেখে মনে হচ্ছে যেন খুবই সহজ। আপনি যখন বোলার হিসেবে কখনও এসবের সামনে পড়েন, আপনার খুব বেশি কিছু করার থাকে না।”
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক জানালেন, সপ্তম উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে স্রেফ ব্যবধান কমানো ছিল তার প্রাথমিক লক্ষ্য। তবে ম্যাক্সওয়েলের অকল্পনীয় ব্যাটিংয়ে দারুণ জয়ের পথে ৪০ রান বাকি থাকা অবস্থায় প্রথম সুবাতাস পেতে শুরু করেন কামিন্স।
“আমি যখন ব্যাটিংয়ে যাই, ভাবছিলাম আমরা যদি কোনো মতে ২০০ করতে পারি, তাহলে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার জন্য আমাদের নেট রান রেট ঠিক থাকবে। পরে ম্যাক্সওয়েল যখন সেঞ্চুরি করল, আমি ভাবলাম, বাহ আমরা এখন ১২০ রান দূরে। তবু তখনও ভাবছিলাম, নাহ (জেতার) সুযোগ নেই।”
“তো আমার মতে, যখন স্পিনারদের ওভার প্রায় শেষের দিকে এবং ৪০ বলে ৪০ রানের মতো বাকি ছিল, তখন আমার মনে হয়েছে, ঠিক আছে! এখন যদি ম্যাক্সি আউটও হয়ে যায়, অন্যরা কাজটা করে ফেলতে পারবে। তো হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে শেষের ২০ মিনিটই শুধু ওই (জেতার ভাবনার) সময় ছিল।”