হতাশায় মোড়ানো বিশ্বকাপে শেষটা অন্তত ভালো করতে পারল ইংল্যান্ড। তিন ব্যাটসম্যানের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের সুবাদে পেল বড় পুঁজি। পরে বোলারদের সম্মিলিত অবদানে পাকিস্তানকে অনায়াসে হারাল ইংলিশরা।
দুই দলের শেষ ম্যাচে শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় ৯৩ রানে।
ইংল্যান্ড করে ৯ উইকেটে ৩৩৭ রান। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ স্কোর এটি। ২০১৯ আসরে ট্রেন্ট ব্রিজে ৩৩৪ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
দলের বড় সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন বেন স্টোকস। টানা তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৭৬ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৮৪ রান করেন এই অলরাউন্ডার।
জো রুট ৭২ বলে করেন ৬০ রান। ৬১ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার জনি বেয়ারস্টো।
খানিকটা মন্থর উইকেটে কখনও আশাই জাগাতে পারেনি পাকিস্তান। শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রানে থমকে যায় তাদের ইনিংস।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের বিদায়ী ম্যাচে ব্যাট হাতে ৫ বলে ১৫ রানের পর বোলিংয়ে ৫৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ইংলিশ পেসার ডেভিড উইলি।
নিউ জিল্যান্ডকে টপকে সেমি-ফাইনালে যেতে অসম্ভব এক সমীকরণ মেলাতে হতো পাকিস্তানকে। ৩৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিততে হতো ৬.৪ ওভারে! যা সম্ভব ছিল না মোটেও।
৯ ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১০ দলের মধ্যে পাঁচ নম্বরে থেকে আসর শেষ করল পাকিস্তান।
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে আসর শুরুর পর ইংল্যান্ড জেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে এরপর টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে কার্যত সেমি-ফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে যায় তারা।
শেষ দুই ম্যাচে জিতে অবশ্য শীর্ষ আটে থেকে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করল জস বাটলারের দল।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বেয়ারস্টো ও দাভিদ মালানের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু পায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে আসে ৭২ রান। ৮২ রানের শুরুর জুটি ভাঙে মালানের বিদায়ে। বেয়ারস্টোও এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি।
তৃতীয় উইকেটে ১৩২ রানের বড় জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন স্টোকস ও রুট। স্টোকস যদিও আউট হতে পারতেন ১০ রানে, ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি।
পরে অবশ্য দুই থিতু ব্যাটসম্যানকেই বিদায় করেন আফ্রিদি। এ দিন প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন রুট। আসর জুড়ে নিষ্প্রভ থাকা বাটলার ১৮ বলে করেন ২৭ রান। বিস্ময়করভাবে, প্রথম ম্যাচে ৪৩ রানের তার সর্বোচ্চ স্কোর এটি!
এই ম্যাচে ৬৪ রানসহ বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়েন হারিস রউফ। তিনি ‘মুক্তি’ দেন এই ম্যাচেই খেলা আদিল রশিদকে। ২০১৯ আসরে ৫২৬ রান দিয়েছিলেন ইংলিশ লেগ স্পিনার।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় পাকিস্তান। নতুন বলে নিজের প্রথম দুই ওভারে আবদুল্লাহ শাফিক ও ফাখার জামানকে ফিরিয়ে দেন উইলি।
তৃতীয় উইকেটে ৫১ রানের একটা জুটি গড়েন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি দুজনের কেউই। সাউদ শাকিল ও ইফতিখার আহমেদও পারেননি কিছু করে দেখাতে।
পঞ্চাশ ছুঁতে পারেন কেবল আঘা সালমান। আসরে প্রথমবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৪৫ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
এরপর মোহাম্মদ ওয়াসিম ও রউফের ৩৫ বলে ৫৩ রানের শেষ জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধানই কেবল কমাতে পারে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৭/৯ (মালান ৩১, বেয়ারস্টো ৫৯, রুট ৬০, স্টোকস ৮৪, বাটলার ২৭, ব্রুক ৩০, মইন ৮, ওকস ৪*, উইলি ১৫, অ্যাটকিনসন ০, রশিদ ০*; আফ্রিদি ১০-১-৭২-২, রউফ ১০-০-৬৪-৩, ইফতিখার ৭-০-৩৮-১, ওয়াসিম ১০-০-৭৪-২, শাদাব ১০-০-৫৭-০, সালমান ৩-০-২৫-০)
পাকিস্তান: ৪৩.৩ ওভারে ২৪৪ (শাফিক ০, ফাখার ১, বাবর ৩৮, রিজওয়ান ৩৬, শাকিল ২৯, সালমান ৫১, ইফতিখার ৩, শাদাব ৪, আফ্রিদি ২৫, ওয়াসিম ১৬*, রউফ ৩৫*; উইলি ১০-০-৫৬-৩, ওকস ৫.৩-০-২৭-১, রশিদ ১০-০-৫৫-২, অ্যাটকিনসন ৮-০-৪৫-২, মইন ১০-০-৬০-২)
ফল: ইংল্যান্ড ৯৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড উইলি