সাকিব ও বাংলাদেশ দলকে ধুয়ে দিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, লঙ্কান ক্রিকেটারের দাবি, তাদের কাছে ভিডিও প্রমাণ আছে যে তার কোনো ভুল ছিল না।
Published : 07 Nov 2023, 07:58 AM
শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে যখন সংবাদ সম্মেলনে এলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, তখনই আভাস মিলল যে বিস্ফোরক কিছু হতে চলেছে। হলোও তাই। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার একের পর এক গোলা ছুড়লেন সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ দল ও আম্পায়ারদের। তার ১২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের আর কোনো কথা এলোই না, সবটুকুতে থাকল কেবল তার ‘টাইমড আউট’-এর প্রসঙ্গই।
সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউসের কথাগুলোর মূল অংশ তুলে দেওয়া হলো এখানে।
ওভাবে আউট হওয়ার পর অনুভূতি…
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস: আমি কোনো ভুল করিনি। ক্রিজে গিয়ে প্রস্তুত হওয়ার জন্য দুই মিনিট সময় থাকে, যেটা আমি করেছি। এটা ছিল একটা ‘ইকুয়েপমেন্ট ম্যালফাঙ্কশন।’ আমি জানি না, ‘কমন সেন্স’ ব্যাপারটি কোথায় গেল। কারণ, এটা অবশ্যই সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক। তারা যদি এভাবে ক্রিকেট খেলতে চায় ও এই পর্যায়ে নামতে চায়, তাহলে ভয়ঙ্কর কোনো ভুল হচ্ছে।
আমি যদি দেরি করতাম ও দুই মিনিটের মধ্যে না যেতাম… আইনে আছে দুই মিনিটের মধ্যে যেতে হবে, আমি সেখানে গেছি দুই (এক) মিনিট ৪৫ বা ৫০ সেকেন্ডে। এরপর আমার হেলমেটে সমস্যা দেখা দেয়। তখনও আমার হাতে ৫ সেকেন্ড সময় ছিল। আম্পায়াররাও আমাদের কোচদেরকে বলেছেন যে, হেলমেটে সমস্যা হওয়ার ব্যাপারটি তারা খেয়াল করেননি। আমি তো স্রেফ হেলমেট চাচ্ছিলাম!
পুরোটাই তাই ‘কমন সেন্সের’ ব্যাপার। আমি তো মানকাডিং বা অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড নিয়ে বলছি না। এটা নিখাদ কমন সেন্সের ব্যাপার এবং খেলাটাকে অসম্মান করার ব্যাপার। এটা পুরোপুরি অমর্যাদাকর।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, আপনারা যে খেলা শেষে হাত মেলাননি…
ম্যাথিউস: সম্মান তাদেরকেই করতে হয়, যারা আমাদেরকে সম্মান করে। তাদের তো খেলাটাকে আগে সম্মান করতে হবে! আমরা সবাই এই সুন্দর খেলাটির দূত, আম্পায়াররাসহ। সেক্ষেত্রে যদি আপনি সম্মান না করেন এবং কমন সেন্স না খাটান, তাহলে আর কী চাওয়ার আছে!
সাকিব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন যে, অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক, পরস্পরকে ভালোভাবে জানেন…
ম্যাথিউস: দেখুন, আজকে পর্যন্ত তার প্রতি ও বাংলাদেশ দলের প্রতি আমার সর্বোচ্চ সম্মান ছিল। অবশ্যই সবাই জয়ের জন্যই খেলে এবং কোনোকিছু আইনের মধ্যে হলে অবশ্যই তা ঠিক আছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, আমি তো দুই মিনিটের মধ্যেই সেখানে (ক্রিজে) ছিলাম! আমাদের কাছে ভিডিও প্রমাণ আছে। পরে একটি বিবৃতি দেব আমরা। আমাদের ভিডিও প্রমাণ আছে, ফুটেজ আছে, সবকিছু দেখা হয়েছে। এমন নয় যে আমি স্রেফ এসে বলে দিচ্ছি কিছু একটা। আমি প্রমাণ নিয়েই কথা বলছি।
আমাদের ভিডিও প্রমাণ আছে যে, ক্যাচটি নেওয়ার পর (আগের ব্যাটসম্যানের) এবং আমি ক্রিজে যাওয়ার পর, আমার হেলমেট ছেঁড়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ সেকেন্ড সময় ছিল। আমরা তো ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়েও কথা বলি। আপনারাই বলুন, হেলমেট না পরে গার্ড নেওয়া কি ঠিক ছিল? এটা তো নিখাদ কমন সেন্সের ব্যাপার।
এজন্যই আমি মনে করি, আম্পায়ারদের আরও বড় ভূমিকা ছিল। কারণ, তারা অন্তত গিয়ে পরখ করে দেখতে পারত। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ব্যাপার তো আছেই। স্পিনারদের বোলিংয়ের সময় কিপারকে হেলমেট পরতে বলা হয়। আমি কিভাবে হেলমেট ছাড়া গার্ড নেব? এটা পুরোপুরিই ইকুয়েপমেন্ট ম্যালফাঙ্কশন।
অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড বা এই ধরনের আইনগুলোর আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন কি না…
ম্যাথিউস: মানকাডিং ও অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড, এসবের আইন অনেকটাই স্পষ্ট। আইনে পরিষ্কার বলা আছে, ব্যাটসম্যান ক্রিজের বাইরে গেলে আপনি আউট করতে পারেন। আপনি যদি স্টাম্পের লাইনে সরাসরি থেকে বলকে স্টাম্পে লাগা থেকে বাধাগ্রস্থ করেন, তাহলে পরিষ্কার আউট।
কিন্তু এখানে কমন সেন্স কোথায়?
আমার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে দেখিনি, কোনো দল এতটা এই পর্যায়ে নামতে পারে। আম্পায়াররাও স্বীকার করেছে যে এটা ‘ইকুয়েপমেন্ট ম্যালফাঙ্কশন।’ তারা আবার খতিয়ে দেখতে পারতেন। তখন পরীক্ষা না করে পরে বলে কী লাভ?
এমনটা বলছি না যে, আমি থাকলেই আমরা জিততাম। এটা ভিন্ন ব্যাপার। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো কমন সেন্স থাকতে হবে। এটা তো পরিষ্কার ‘ম্যালফাঙ্কশন’ ছিল। আমি তো টেনে ছিঁড়ে ফেলিনি! তখনও আমার হাতে সময় ছিল এবং (আউট দেওয়ায়) আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি।
দায় তাহলে আম্পায়ারদের কি না…
ম্যাথিউস: আমার মতে, ‘হ্যাঁ।’ কারণ, আমি যদি ভুল না করি, তাহলে কার ভুল?
টেকনিক্যাল ব্যাপারটি আলোচনা করা উচিত, কারণ এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ এবং যদি এরকম হয় যে, শেষ ওভারে তিন-চার রান দরকার, তখন এমনটি হয়ে গেল, তখন কি হবে? এটা তো স্রেফ কমন সেন্সের ব্যাপার।
আমি সময় নষ্ট করার চেষ্টা করছিলাম না। কোনো অন্যায্য সুবিধা নিতে চাইছিলাম না। নিখাদ ‘ইকুয়েপমেন্ট ম্যালফাঙ্কশন’ ছিল এটা। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এরকম হলো এবং আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।
এটা বলছি না যে, আমি ব্যাট করলেই আমরা জিততাম আজকে। স্রেফ ঘটনাটি বলছি। অবশ্যই, এটা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। যে কোনো কিছুই হতে পারত। হয়তো আমরা ৫০-৬০ রান বেশি করতে পারতাম, কে জানে। তবে যেটাই হোক, এটা অসম্মানজনক।
আপনি যেভাবে বলছেন, তাতে আম্পায়ারদের অসম্মান হচ্ছে কি না…
ম্যাথিউস: আম্পায়ারদের প্রতি অসম্মানের ব্যাপার নয়। তারা পরখ করে দেখতে পারতেন।
হ্যাঁ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না, অন্য কোনো দল এটা করত। কারণ, এটা তো একদম পরিষ্কার। এটা সরঞ্জামের ব্যাপার, ফিতা ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং নিরাপত্তার ব্যাপারও ছিল, কারণ আমরা জানি হেলমেট না পরে বোলারের মুখোমুখি হওয়া যাবে না। এটা তো দেখাই যাচ্ছিল, কারও প্রতি অসম্মানের ব্যাপার নয়।
সাকিবের সুযোগ ছিল (আবেদন তুলে নেওয়ার)… সে জানত যে সময় নষ্ট করছি না বা সময়ের মধ্যেই আমি ছিলাম। তার সুযোগ ছিল… কিন্তু সে অন্য পথ বেছে নিয়েছে। আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, অন্য কোনো দল হলে ওরা এরকম করত না।
চতুর্থ আম্পায়ার বলেছেন, সরঞ্জাম সামলে রাখার দায়িত্ব ব্যাটসম্যানের…
ম্যাথিউস: আপনারা সবাই তো শুনেছেন, তাই না? বেশ হাস্যকর কথা। হ্যাঁ, অবশ্যই এটা আমাদের দায়িত্ব। তবে আমি যদি কোনো ফাস্ট বোলারকে হেলমেট ছাড়া মাঠে খেলতে নামতাম, তাহলে সেটা আমার দায়িত্ব। তবে যদি কোনো কিছু খসে পড়ে, কোনো অংশ খুলে যায়, আপনার কি মনে হয়, আমার আগে থেকে বোঝার কোনো উপায় আছে? সে কি বলেছে, এটার পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না।
ইনিংস বিরতিতে চতুর্থ আম্পায়ার বলেছেন যে দুই মিনিটের মধ্যে আপনি বল খেলতে প্রস্তুত ছিলেন না…
ম্যাথিউস: এখন যদি একই প্রশ্ন করেন, তার উত্তর ভিন্ন হবে। কারণ, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। ভিডিও প্রমাণ। যেটা বললাম, আমি স্রেফ বলার খাতিরে কিছু বলছি না। আমার কাছে ভিডিও প্রমাণ আছে এবং কেউ যদি সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতে চান, আমি আহবান জানাব করতে।