নেটে ব্যাটিং আর পানি টানার জন্যই আনা হলো এনামুলকে!

একাদশে রাখা না হলে শেষ ম্যাচের আগে জরুরিভাবে এই ব্যাটসম্যানকে দেশ থেকে উড়িয়ে আনা হলো কেন, এই প্রশ্ন উঠছে।  

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিপুনে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2023, 07:03 AM
Updated : 11 Nov 2023, 07:03 AM

জরুরি বার্তা পেয়ে এনামুল হক ভারতে এলেন। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়শন স্টেডিয়ামে দুই দিন নেটে ব্যাটিং করলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে হয়তো পানি-তোয়ালে টানবেন। প্রয়োজনে ২-১ ওভার ফিল্ডিং করবেন। এরপর অন্যদের সঙ্গে বাড়ির পথ ধরবেন। ব্যস, নটে গাছটি মুড়োল, এনামুলের বিশ্বকাপ অভিযানের গল্প ফুরোল!

কাউকে বিকল্প হিসেবে নিয়ে আসা বা স্কোয়াডে যোগ করা মানেই যে তাকে একাদশে খেলাতে হবে, এমন নয় অবশ্যই। তবে প্রশ্নটিও উঠে যায় অবশ্যই, তাহলে এই শেষ ম্যাচটির আগে এনামুলকে আনা জরুরি ছিল কেন?

প্রশ্নটি আরও বেশি জোরাল হয়, সাকিবের বদলি হিসেবে এনামুলকে আনা হয়েছে বলে।

কোনো ক্রিকেটার চোটের কারণে ছিটকে গেলে তার জায়গায় এমনিতে বদলি কাউকে নেওয়াই রীতি। তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ না হলে স্রেফ একটি ম্যাচের জন্য বদলি অনেক সময় নেওয়া হয় না, বিশেষ করে দল দেশের বাইরে থাকলে। তার পরও যখন সাকিবের বদলি হিসেবে এনামুলকে নেওয়া হলো, একজন অলরাউন্ডারের বদলে আনা হলো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে, সেক্ষেত্রে এই বার্তা পাওয়াই স্বাভাবিক যে এই ব্যাটসম্যানকে দলের একান্ত প্রয়োজন!

সেই প্রয়োজনীয়তার কথা দলের বাইরের অনেকে অনুভব করছিলেন আসলে বিশ্বকাপের আগে থেকেই। ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কোনো বিকল্প টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিল না। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে অনভিজ্ঞ তানজিদ হাসানকে মূল ওপেনার হিসেবে বড় ভরসা রাখা হয়েছে। পরে প্রমাণিত হয়েছে, সেই ভরসা আসলে ছিল তার জন্য প্রবল চাপ।

শুধু ওপেনিংই নয়, গোটা স্কোয়াডেই বাড়তি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিল না। দলকে সেজন্য ভুগতেও হয়েছে বেশ। ম্যাচের ম্যাচ তানজিদ ব্যর্থ হলেও তাকে খেলানো হয়েছে অনেকটা বাধ্য হয়েই।

বাড়তি ব্যাটসম্যানের প্রয়োজনীয়তার কথা যদি বিশ্বকাপজুড়েই অস্বীকার করে গেছে দল। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে যারা এসেছেন, তারা প্রতিবারই বলেছেন এই কথা। এমনকি অধিনায়ক সাকিব তার শেষ সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, ব্যাটসম্যানদের ওপর তাদের এতটাই বিশ্বাস ছিল যে বিকল্প ব্যাটসম্যান রাখার কথা তারা ভাবেননি।

এখন এই শেষ সময়ে এসে যখন স্পিনিং অলরাউন্ডারের বদলে টপ অর্ডারকে দলে নেওয়া হয়, তখন ধরে নেওয়া স্বাভাবিক যে টানা ব্যর্থ কোনো টপ অর্ডারের জায়গায় তাকে খেলানো হবে। শেষ পর্যন্ত তা হলো না।

হ্যাঁ, অনেক সময় ‘কাভার’ হিসেবে ব্যাটসম্যান রাখতে হয়। ম্যাচের আগে গা গরমের সময় বা নক করার সময়ও চোটে পড়ার ঘটনা ক্রিকেটে আছে। সেই ভাবনা থেকে এনামুলকে আনা হতে পারে। তবে এখানেও তো বলা যায়, সেরকম শেষ মুহূর্তে চোটের ঘটনা ঘটলে তো অলরাউন্ডার একজনকে দিয়ে সামলানো যেতই। এনামুলকে নিয়ে আসা এখন কেবল মনে হচ্ছে তাকে নিয়ে অযথা টানাটানি।

২০১৫ বিশ্বকাপে দলের তৃতীয় ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েন। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপে আর সুযোগ পাননি। এবারও স্কোয়াডে ছিলেন না। আর কখনও বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন কি না, সেই সংশয় ছিল। কিন্তু অনেকটা আচমকাই সুযোগ হয়েছিল তার বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যায় যোগ হওয়ার। শেষ পর্যন্ত তা হলো না। এবারের বিশ্বকাপের শেষের যাত্রী হয়ে এসে অনেকটা দর্শক হয়েই রইলেন এনামুল।

দেশে তিনি জাতীয় লিগ খেলছিলেন। বেশ ভালো ফর্মেও ছিলেন। সেখান থেকে বিশ্বকাপে এসে দুই দিনের নেট সেশন করলেন। বিশ্বকাপের হাওয়া একটু আগে লাগল। এই তো।

 দলের ব্যাখ্যা হয়তো ম্যাচের পর পাওয়া যেতে পারে। তবে আপাতত প্রশ্নটা থাকছেই, কতটা জরুরি ছিল এনামুলকে আনা!