আইপিএলে ব্যাট হাতে একের পর এক হতাশাজনক মৌসুমের পরও রিয়ান পারাগের ওপর আস্থা রেখেছে রাজস্থান রয়্যালস, অবশেষে প্রতিদান দিচ্ছেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
Published : 02 Apr 2024, 07:33 PM
আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরু থেকে রিয়ান পারাগ রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেললেও, এখানে পুরো সময়টা তার মোটেও ভালো কাটেনি। অভিষেক আসরে সামর্থ্যের কিছুটা ঝলক দেখান বটে; কিন্তু পরের কয়েকটি মৌসুমে ব্যর্থতাই তার সঙ্গী হয়। তারপরও তার প্রতি আস্থা হারায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এর প্রতিদান অবশেষে দিতে শুরু করেছেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
চলতি আসরে যেন রানের স্রোত বইছে তার ব্যাটে। এমন বদলে যাওয়ার রহস্য কী? পারাগ বললেন, বেশি কিছু না ভেবে সবকিছু সহজ রাখার ভাবনাই বদলে দিয়েছে তাকে।
পারাগের আইপিএল যাত্রা শুরু ২০১৯ সালে। সেবার ৭ ম্যাচে ৩২ গড় ও ১২৬.৯৮ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে আসে ১৬০ রান। কিন্তু পরের চার আসরের মধ্যে তিনি শতরান ছাড়াতে পারেন মাত্র একবার, একবারও গড় বিশ ছাড়ায়নি। গত মৌসুমে ৭ ম্যাচে করেন স্রেফ ৭৮ রান।
সেখানে এবার প্রথম ৩ ম্যাচেই তার রান হয়ে গেছে ১৮১। ভিরাট কোহলির সঙ্গে যৌথভাবে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। তিন ম্যাচের দুটিতে অপরাজিত থাকায় তার গড় চোখ কপালে তোলার মতো, ১৮১! স্ট্রাইক রেট ১৬০.১৭।
প্রথম ম্যাচে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ২৯ বলে ৩ ছক্কা ও একটি চারে তিনি করেন ৪৩ রান। পরের ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ৪৫ বলে ৬টি ছক্কা ও ৭টি চারে অপরাজিত ৮৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলের জয়ের নায়ক তিনিই। সবশেষ সোমবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন তিনি।
ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্টারে কথা বলার সময় পারাগকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই মৌসুমে ভিন্ন কী করছেন তিনি। ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বলেন, স্রেফ ভাবনায় বদল এনেই দেখা পাচ্ছেন রানের।
“কিছুই না, সত্যি বলতে। আসলে অনেক কিছু চেষ্টা না করে সবকিছু সহজ করেছি কেবল। এর আগে যখন রান পাচ্ছিলাম না, এটা নিয়ে তখন অনেক বেশি ভাবতাম, ভিন্ন কিছু করতে চাইতাম, যা কাজে লাগেনি। এই বছরে লক্ষ্য ছিল সহজ- বল দেখো আর মারো।”
দলে পারাগের ভূমিকাও বদলে গেছে এবার। আগে তাকে খেলানো হতো ফিনিশার হিসেবে। এবার খেলানো হচ্ছে চার নম্বরে। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন পঞ্চম ওভারে আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। একটু পর ফিরে যান জস বাটলারও। ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারালেও দলকে বিপদে পড়তে দেননি পারাগ।
আইপিএলের আগে ভারতের অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও রানের বন্যা বইয়ে দেন তিনি। ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতা দেওধর ট্রফিতে ৫ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিতে তার ব্যাট থেকে আসে আসরের সর্বোচ্চ ৩৫৪ রান। আসরে সবচেয়ে বেশি ২৩ ছক্কা মারেন তিনি। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে ১০ ম্যাচে ১৮২.৭৯ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫১০ রান। যেখানে টানা সাত ইনিংসে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ।
এরপর প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফিতে আসামের হয়ে ৭৫.৬০ গড়ে তার ব্যাট থেকে ৩৭৮ রান। ছত্তিশগড়ের বিপক্ষে ৮৭ বলে ১২ ছক্কা ও ১১ চারে ১৫৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পথে তিনি শতক স্পর্শ করেন ৫৬ বলে। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে যা দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।
সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে চার নম্বরে ব্যাটিং করেই সাফল্য পান পারাগ। সেই অভিজ্ঞতা এখন আইপিএলেও কাজে লাগছে বলে মনে করেন তিনি।
“আমি আগেও বলেছি, যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি, এই ধরনের পরিস্থিতিতেই ব্যাট করতে যাই। যখন জস বাটলার ভাই আউট হন, কিছুক্ষণ পর অ্যাশ (রবিচন্দ্রন অশ্বিন) ভাইও ফিরে যান, তখন ভাবলাম এটাই তো আমার কাজ, এটাই তো গত ছয় মাস ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে করে আসছি। তাই সবকিছু হিসাব করা খুব সহজ ছিল।”
“তিন-চার বছর আমি পারফর্ম করতে পারিনি, এমনকি সেটা যদি মৌসুমে এক ম্যাচও হয়। আপনি যখন জানেন যে আপনি কিছু পারেন, কিন্তু পারফরম্যান্স আসছে না, তখন নতুন করে ভাববেন। আমি খোঁজার চেষ্টা করেছি, কী ভুল ছিল। পরে বুঝতে পারি, এই পর্যায়ে যথেষ্ট অনুশীলন আমি করছি না। তাই গত মৌসুমের পর কঠোর অনুশীলন করা শুরু করি। আমার মনে হয় তার ফল এখন মিলছে। এই ধরনের বলে আমি অনুশীলন করেছি, এমন পরিস্থিতিতে খেলেছি, এরপরই এমন পারফরম্যান্স।”
পারাগের এই বদলে যাওয়ায় খুশি রাজস্থানের সহকারী কোচ শেন বন্ড। প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানের মাঝে সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক পেসার।
“সে (পারাগ) আমাকে কয়েক বছর আগে মুম্বাইয়ে আসা সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের কথা মনে করিয়ে দেয়। ও যেন ঠিক সে রকমই, অনেক প্রতিভাবান। খেলোয়াড় হিসেবেও সে পরিণত হয়েছে, যদিও তার বয়স মাত্র ২২।”