Published : 06 Nov 2022, 04:42 PM
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পর মাঠে সাকিব আল হাসানের প্রতিক্রিয়া তো দেখা গেছে প্রকাশ্যেই। নাজমুল হাসান শান্তর দিকে তাকালেও তার চোখেমুখে বিস্ময়টুকু চোখে পড়ার কথা সহজেই। বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের প্রতিক্রিয়া দেখার অবশ্য উপায় নেই। তবে ইবাদত হোসেন চৌধুরির কথায় তা ফুটে ওঠে দলের মনোভাব। সেখানে ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট।
পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাডিলেইড ওভালে ম্যাচের ১০ ওভার পর্যন্ত অবস্থা খুব খারাপ ছিল না দলের। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলের রান তখন ১ উইকেটে ৭০। শুষ্ক উইকেটে ১৫০ রানের মতো করার যে লক্ষ্য, সেই পথেই ছিল দল। একাদশ ওভারে সৌম্য সরকারের বিদায়ে ভাঙে অর্ধশত রানের জুটি। পরের বলেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আউট হন সাকিব। এখান থেকেই সূচনা হয় ব্যাটিং ধসের।
সাকিবের ওই আউটের সময় উইকেটে তার সঙ্গী ছিলেন শান্ত। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর সাকিব রিভিউ নিয়েই শান্তকে মাথা নাড়িয়ে বার্তা দেন, বল তার ব্যাটে লেগেছে। পরে রিভিউয়েও তা দেখা যায়। যদিও টিভি আম্পায়ারের মত ছিল ভিন্ন। তিনি বহাল রাখেন মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনে শান্ত বললেন, টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ভুল।
“আমার কাছে, আমাদের সবার কাছে মনে হয়েছে আউটটা হয়নি। আমরা নিশ্চিত ছিলাম আউট হয়নি। সিদ্ধান্ত আম্পায়ারের, এর ওপর কিছু বলার নাই, যত যা-ই করি।”
এই ম্যাচ দিয়েই এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামা ইবাদত হোসেন চৌধুরি প্রতিক্রিয়া আরও ক্ষুব্ধ। ম্যাচ শেষে অফিসিয়াল ব্রডকাস্টার জিটিভির সঙ্গে কথোপকথনে এই পেসার তুলে ধরলেন আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ফেক পেনাল্টি থেকে ৫ রান না পাওয়ার বঞ্চনাও।
“এরকম একটা আউট মেনে নেওয়ার মতো না। শেষ ম্যাচেও ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনেকগুলোই আমাদের বিপক্ষে গেছে। এমন সিদ্ধান্ত যদি প্রতি ম্যাচে হয়, তাহলে আমাদের মতো দলের ফিরে আসা কঠিন। সাকিব ভাই আমাদের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, উনার আউট এমন হলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।”
ইবাদতের স্থির বিশ্বাস, সাকিবকে ওই সময় আউট দেওয়া না হলে দলের ব্যাটিংয়ে ধস নামত না।
“সাকিব ভাই যদি উইকেটে থাকত, তাহলে আমাদেরও বাকি উইকেটগুলো পড়ত না। উনার উইকেট আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উনার উইকেটের পরই কিন্তু আরও দুটি উইকেট পড়ে গেছে। উনি যদি উইকেটে থাকত, সিদ্ধান্তটা আমাদের পক্ষে এলে বাকি উইকেটগুলো পড়ত না।”
স্রেফ নিজেদের ক্ষোভের কথাই তিনি বললেন না, কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন আম্পায়ারকে।
“আম্পায়ার দেখেও দেখতেছে না। দেখেও ভুল করছে। এগুলো তো আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছে সবকিছু। সব সিদ্ধান্ত আপনাকে মেনে নিতে হবে…।”
শান্ত অবশ্য সাকিবের আউটকে ব্যাটিং ধসের কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চান না। ব্যর্থতার দায় তিনি নিজেদের কাঁধেই নিচ্ছেন।
“আমার কাছে মনে হয়নি মনোযোগ নড়ে গেছে (সাকিবের আউটে)। আমরা ভালো খেলিনি শেষে, মাঝের ওভারগুলোতে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণেও নাই। পুরোটা আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি তাদের ডিসিশন।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ ওভারের পঞ্চম ডেলিভারি ছিল সেটি। শাদাবের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ক্রিজ ছেড়ে একটু বেরিয়ে ফ্লিকের মতো করার চেষ্টা করেন সাকিব। বল লাগে প্যাডে। পাকিস্তানিদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সাকিব রিভিউ নেন দ্রুতই। তার শরীরী ভাষায় কোনো দ্বিধা ছিল না। আল্ট্রা এজ-এ প্রমাণ মেলে, ব্যাটে স্পর্শ করেছে বল। এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত তাই পাল্টে যাওয়ার কথা।
কিন্তু টিভি আম্পায়ার সেটিকে দেখেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। তার চোখে, ব্যাটে বলের স্পর্শ নয়, আল্ট্রা এজের ওই কম্পন ব্যাট দিয়ে পিচে আঘাতের কারণে। তিনি আউটের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। পরে যদিও বারবার রিপ্লেতে পরিষ্কারভাবেই দেখা গেছে, ব্যাট ও পিচের মধ্যে ফাঁক ছিল যথেষ্ট।