দ্বিতীয় দিনে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের আশা জাগালেও তৃতীয় দিন সকালেই পথ হারায় পাকিস্তান।
Published : 16 Dec 2023, 06:10 PM
আগের দিন পাকিস্তানের লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত ছিল, পরদিন সকালেই তা মুখ থুবড়ে পড়ল। প্রতিপক্ষের দারুণ বোলিংয়ে অল্পেই গুটিয়ে গেল তারা। তাতে বিশাল লিড পেল অস্ট্রেলিয়া, দিন শেষে যা আরও ফুলেফেঁপে উঠল। তাই তিন দিনেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে স্বাগতিকরা।
পার্থ টেস্টের তৃতীয় দিনে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২৭১ রানে। ফলো-অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করে ২ উইকেটে ৮৪ রানে।
৮ উইকেট বাকি রেখে তারা এগিয়ে আছে ৩০০ রানে।
দুই উইকেটে ১৩২ রান নিয়ে খেলতে নামা পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে দিনের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন প্যাট কামিন্স। নাইটওয়াচম্যান খুররাম শাহজাদকে বোল্ড করে দেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক।
তাতে অবশ্য টলে যায়নি সফরকারীরা। চতুর্থ উইকেটে বাবব আজমকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ইমাম-উল-হাক। সম্ভাবনাময় এই জুটি ৪৮ রানে থামান মিচেল মার্শ। শুরুটা ভালো করলেও বাবর বিদায় নেন ২১ রানে।
ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইমাম ফিফটিতে পা রাখেন ১৬১ বল খেলে। তবে লাঞ্চের একটু আগে হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে বসেন তিনি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লায়নকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় এই ওপেনার স্টাম্পড হয়ে যান ৬২ রানে।
ইমামের ইনিংসটিই হয়ে থাকে পাকিস্তানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। বাবর-ইমাম জুটি ভাঙার পর আর কেউই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি।
লাঞ্চের আগেই আরেকটি বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সরফরাজ আহমেদের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেন মিচেল স্টার্ক। ১৯৫ রানে ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তান তখন আড়াইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়।
তবে সাউদ শাকিলের ২৮ ও আঘা সালমানের অপরাজিত ২৮ রানের সৌজন্যে আরেকটু লড়াই করতে পারে তারা। দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শটের পর জশ হেইজেলউডের শর্ট বলের জবাব পাননি শাকিল। সালমান এক প্রান্তে টিকে থাকলেও পাননি কোনো সঙ্গী।
তিন উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সফলতম বোলার ন্যাথান লায়ন। ৫০০ উইকেটের জাদুকরী ঠিকানায় পৌঁছতে এই অফ স্পিনারের প্রয়োজন আর একটি মোটে উইকেট।
প্রথম ইনিংসেই ২১৬ রানে পিছিয়ে পড়ার চাপ অনেক সময়ই অনেক দলের মনোবল ভেঙে দেয়। যেখানে আবার ম্যাচের প্রথম পর্বে নিজেদের বোলিং ছিল অমন ধারহীন।
তবে এবার পাকিস্তানের পেস আক্রমণ শুরু থেকেই আলো ছড়াতে থাকে। মূল পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম ইনিংসে তেমন কিছু করতে না পারলেও এ দিন শুরু থেকেই তার লাইন-লেংথ ছিল দারুণ।
অস্ট্রেলিয়া শিবিরে মূল ভীতিটা ছড়ান অভিষিক্ত পেসার খুররাম শাহজাদ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই তিনি শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। শর্ট অব লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন প্রথম ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রান করা এই ওপেনার।
তিন নম্বরে নামা মার্নাস লাবুশেনকেও টিকতে দেননি শাহজাদ। আউট হওয়ার আগে একবার আঘাতও পান তিনি। শাহজাদের একটি লাফিয়ে ওঠা বল তার আঙুলে আঘাত করে, প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে হয় তাকে। ওই আঘাতে তার মনোবল নড়ে যায় কি না, খানিক বাদে অফস্টাম্পের বল পুল করার চেষ্টায় আকাশে তুলে দেন তিনি, বল গ্লাভসে জমান কিপার সরফরাজ।
পাঁচ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে নিজেদের ক্ষীণ আশা একটু হলেও জোরাল করেছিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে যেখানে ওভারপ্রতি চারের বেশি রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া, সেখানে এই পর্বে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৭ রান করতে পারে তারা।
তবে অভিজ্ঞ স্টিভেন স্মিথ ও ওপেনার উসমান খাওয়াজা সামাল দেন সেই বিপদ। দুজনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় আর কোনো উইকেট হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৭৯ রানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে):
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১১৩.২ ওভারে ৪৮৭
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৫৩ ওভারে ১৩২/২) ১০১.৫ ওভারে ২৭১ (শফিক ৪২, ইমাম ৬২, মাসুদ ৩০, শাহজাদ ৭, বাবর ২১, শাকিল ২৮, সরফরাজ ৩, সালমান ২৮*, ফাহিম ৯, জামাল ১০, আফ্রিদি ৪; স্টার্ক ২৫-৫-৬৮-২, হেইজেলউড ২২-৭-৪৯-১, কামিন্স ২০-৭-৩৫-২, লায়ন ২৪-৩-৬৬-৩, মার্শ ৯-০-৩৪-১, হেড ১.৫-০-৪-১)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ৩৩ ওভারে ৮৪/২ (খাওয়াজা ৩৪*, ওয়ার্নার ০, লাবুশেন ২, স্মিথ ৪৩*; আফ্রিদি ৯-৩-১৯-০, শাহজাদ ৯-২-১৯-২, জামাল ৫-০-১৪-০, ফাহিম ৩-০-১৬-০, সালমান ৭-০-১৫-০)