অনায়াস জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে পূর্বাঞ্চল।
Published : 14 Dec 2023, 06:06 PM
নাহিদুল ইসলামের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করার চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন মার্শাল আইয়ুব। জোরাল হলো উত্তরাঞ্চলের জয়ের আশা। তবে, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে শেষ দিকের দুই ব্যাটসম্যান মইন খান ও সুমন খান। তাদের দৃঢ়তায় প্রতিপক্ষকে হতাশায় ডুবিয়ে ড্রয়ে মাঠ ছাড়ল দক্ষিণাঞ্চল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রায় ২৫ ওভার বাকি থাকতে দক্ষিণাঞ্চলের ৮ উইকেট তুলে নেয় উত্তরাঞ্চল। এরপর শত চেষ্টা করেও বাকি ২ উইকেট আর নিতে পারেনি আকবর আলির নেতৃত্বাধীন দল। জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও তাই ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাদের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে দুই ম্যাচে দুই দলেরই দ্বিতীয় ড্র এটি। সমান ৪ পয়েন্ট রয়েছে দুই দলের ঝুলিতে।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে উত্তরাঞ্চলের ২১৯ রানের জবাবে দক্ষিণাঞ্চল করে ২৪৩ রানে। দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ৩৪৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে উত্তরাঞ্চল।
৩২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও মইন-সুমনের দৃঢ়তায় ৮ উইকেটে ১৭২ রান করে হার এড়ায় দক্ষিণাঞ্চল।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন ৬২ রান করা আকবর আলি। সাব্বির রহমান, আমিনুল ইসলামরা টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
৯৩তম ওভারে সুমনের বলে চার মেরে ৯৫ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছান সুমন। পরের বলে আলতো টোকায় এক রান নিয়ে তিনি পূর্ণ করেন প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এই মাঠেই গত বছর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
পরে নাহিদুল ১৩ বলে ২২ রানের ক্যামিও খেলে ফেরার পর ইনিংস ঘোষণা করে উত্তরাঞ্চল।
দিনের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বাকি থাকতে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম ইনিংসে ৯০ রান করা প্রান্তিক নওরোজকে ওপেনিংয়ে পায়নি তারা। ঘাড়ে আঘাত পাওয়ায় ফিল্ডিংয়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। ফলে ৫ উইকেট পড়ার আগে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি তিনি।
প্রথম ওভারেই পিনাক ঘোষকে এলবিডব্লিউ করেন নাহিদুল। নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার ফজলে মাহমুদকেও ফেরান তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে মোহাম্মদ মিঠুনও একই পথ ধরলে বিপদে পড়ে যায় দক্ষিণাঞ্চল।
দ্বিতীয় সেশনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তানবির হায়দার, শেখ মেহেদি হাসানরা। স্রেফ ৫৭ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নামেন প্রথম ইনিংসে দলকে লিড এনে দেওয়ার কারিগর প্রান্তিক।
ষষ্ঠ উইকেটে মার্শালের সঙ্গে জমে যাওয়া প্রান্তিকের জুটি ভাঙেন নাহিদুল। তার রাউন্ড দা উইকেট থেকে জোরের ওপর করা ডেলিভারি শরীরের খুব কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন প্রান্তিক। এবার তিনি করেন ৪২ রান।
পরে ফিফটি করেন মার্শাল। তাকেও ফিরিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগান নাহিদুল। কিন্তু মইন ও সুমনের ১৪৯ বলে ৩৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে হতাশাই সঙ্গী হয় উত্তরাঞ্চলের। মইন ২৯, সুমন ১০ রানে অপরাজিত থাকেন।
১৯ ওভারে স্রেফ ২৯ রানে ৫ উইকেট নেন নাহিদুল। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ফিফটিসহ দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২১৯
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৪৩
উত্তরাঞ্চল ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৭৭/৩) ৯৫ ওভারে ৩৪৫/৭ (মামুন ১১৭*, আকবর ৬২, সাব্বির ৮, আমিনুল ৫, নাহিদুল ২২, ইয়াসিন ০*; সুমন ২১-৬-৬৩-১, কামরুল ১৮-১-৭৪-৩, মেহেদি ৩৬-৯-১১২-৩, মইন ১৩-২-৪০-০, তানবির ৫-০-২৫-০, মাহমুদ ২-০-১৪-০)
দক্ষিণাঞ্চল ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২২) ৭১ ওভারে ১৭২/৮ (পিনাক ০, মাহমুদ ৩, তানবির ৭, মিঠুন ৭, মার্শাল ৫২, মেহেদি ২০, প্রান্তিক ৪২, কামরুল ০, মইন ২৯*, সুমন ১০*; নাহিদুল ১৯-৮-২৯-৫, ইয়াসিন ১০-১-৩৮-১, মুরাদ ২৬-৮-৫১-১, এনামুল ৭-১-২১-১, আমিনুল ৭-১-২৮-০, মামুন ১-০-৫-০, আকবর ১-১-০-০)
ফল: ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদুল ইসলাম
সহজ জয়ে শীর্ষে পূর্বাঞ্চল
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে পূর্বাঞ্চল।
শেষ দিনে স্রেফ ৪১ রান দরকার ছিল তাদের। ৬.১ ওভারেই দলকে লক্ষ্যে পৌছে দেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান অমিত হাসান, শামিম হোসেন। পূর্বাঞ্চলের জিতল ৭ উইকেটে।
এবারের বিসিএলে দুই রাউন্ডের চার ম্যাচে একমাত্র তারাই জয়ের মুখ দেখল। অন্য তিনটি ম্যাচই হয়েছে ড্র। দুই ম্যাচে একটি করে জয় ও ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ইরফান শুক্কুরের নেতৃত্বাধীন দল।
দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়া অমিত অপরাজিত থাকেন ৬৩ রানে। আর নিউ জিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে থাকা শামিম খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। ৬ চার ও ১ ছক্কায় সাজান তার ৫৮ বলের ইনিংসটি।
দুই ইনিংসে ৪টি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন পূর্বাঞ্চলের অফ স্পিনার নাঈম আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৮০
পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৫৭
মধ্যাঞ্চল ২য় ইনিংস: ১২৫
পূর্বাঞ্চল ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৪৯) (আগের দিন ১০৮/৩) ৪৩.২ ওভারে ১৪৯/৩ (অমিত ৬৩*, শামিম ৫৩*; আবু হায়দার ৬-০-২৫-১, নাজমুল ১৮-১০-২৯-১, রিপন ৪.২-০-২৭-০, শুভাগত ১৩-০-৪৬-০, সাইফ ২-০-১৬-০)
ফল: পূর্বাঞ্চল ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম আহমেদ