পিসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হারানোর প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের বিরক্তি, হতাশা প্রকাশ করলেন রমিজ রাজা
Published : 27 Dec 2022, 06:05 PM
দায়িত্বের মেয়াদ এখনও বাকি ছিল প্রায় দুই বছর। কিন্তু হুট করেই রমিজ রাজাকে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় দেশটির সরকার। ফের প্রধান হয়ে এসে বোর্ডে আমুল পরিবর্তন আনেন নাজাম শেঠি। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের বিরক্তি, হতাশা প্রকাশ করলেন রমিজ। তার মতে, তামাশায় পরিণত হয়েছে পিসিবি।
২০২১ সেপ্টেম্বরে রমিজকে তিন বছরের জন্য বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব দেন পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত এপ্রিলে দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান ক্ষমতা হারালে রমিজের ভবিষ্যৎও পড়ে যায় শঙ্কায়। যদিও নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আরও কিছু দিন দায়িত্বে রাখেন তাকে।
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তান হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর গত বুধবার রমিজকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নাজামকে বোর্ড প্রধান করে ১৪ সদস্যের কমিটির অনুমোদন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ, পদাধিকার বলে যিনি পিসিবির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের অগাস্ট পর্যন্ত পিসিবির প্রধান ছিলেন নাজাম। পুনরায় দায়িত্বে ফিরে নতুন নির্বাচক কমিটি গঠন করেন তিনি। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে সরিয়ে প্রধান নির্বাচক করেন শাহিদ আফ্রিদিকে।
এতদিন পুরো বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন রমিজ। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অবশেষে মুখ খোলেন বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার।
“ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতি মেশানো উচিত নয়। এটা ক্রিকেটারদের খেলা এবং তাদের কাজের জায়গা। কিছু লোক বাইরে থেকে এসেছে, তাদের একজনকে (নাজাম) জায়গা করে দিতে পুরো গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হয়েছিল। পৃথিবীর কোথাও এমন দেখিনি।”
“কোনো কিছু করার একটা প্রক্রিয়া আছে। এটা (বোর্ডে বদল) করা হয়েছে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে, যখন দলগুলো পাকিস্তান সফর করছে। ভালো বা খারাপ যেমন কাজই করুক, এরপর প্রধান নির্বাচককে (মোহাম্মদ ওয়াসিম) বদলে ফেলা হলো। সে পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে। তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দেওয়া উচিত।”
নাজামের নতুন পরিচালনা পর্ষদের ক্রিকেটের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই বলে মনে করেন রমিজ। নিজেদের স্বার্থের জন্য কেবল এই দায়িত্বে আসেন তারা।
“সে (নাজাম) রাত সোয়া ২টার দিকে টুইট করল যে, রমিজ দায়িত্ব হারিয়েছে। আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি বিধায় কষ্ট লাগে। এটা এমন যেন সে রক্ষাকর্তা হয়ে এসেছে, খেলাটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
“এর পেছনের উদ্দেশ্য আমরা জানি। তারা পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে চায়, অন্যথায় ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা কখনো ব্যাটও হাতে নেয়নি। পুরো সেট-আপ তারা মৌসুমের মাঝে বদলে ফেলল। তারা মিকি আর্থারকে ফিরিয়ে আনছে। সাকলাইন মুশতাকের মেয়াদ এমনিতেই জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যেত। সাকলাইন পঞ্চাশের (৪৯) বেশি টেস্ট খেলেছে, সে একজন কিংবদন্তি। সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে আচরণের এটা কোনো ধরন হতে পারে না।”
দায়িত্বে বেশ সফলই ছিলেন রমিজ। তার সময়ে হওয়া দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একটিতে সেমি-ফাইনাল ও অন্যটিতে ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলে দলটি। নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতেন বাবর আজমরা। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দলকে পাকিস্তানে আনেন রমিজ।
তবুও সরে যেতে হওয়ায় ক্ষোভ ঝরে তার কণ্ঠে। সাবেক এই ক্রিকেটারের মতে, হুট করে বোর্ডে বদল পাকিস্তান ক্রিকেটে ভালোর চেয়ে খারাপ প্রভাবই বেশি ফেলবে।
“তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়ে ১২ মাস পর সরে দাঁড়াতে বলা খুবই হতাশাজনক। আমি বলব এটা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে কাউকে নিয়োগ দিতে চায়। এটা ক্রিকেটকে সাহায্য করবে না, ধারাবাহিকতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে না। ক্রিকেট বোর্ড, পুরো সিস্টেম, জাতীয় দল এবং অধিনায়কের ওপর চাপ তৈরি করবে এমন কাজ।”
“গঠনতন্ত্র শক্ত হতে হবে। এটা (চাইলেই গঠনতন্ত্র বদল) শুধু পাকিস্তানেই হয়। আমি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি উত্থাপন করে যাব। এটা একটা তামাশা হয়ে গেছে।”