জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলতে নেমে ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক জেভিয়ার বার্টলেট।
Published : 02 Feb 2024, 03:08 PM
বল হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই আলো ছড়ালেন জেভিয়ার বার্টলেট। গুঁড়িয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার। প্রবল চাপের মুখে কেসি কার্টি ও রোস্টন চেইসের দৃঢ়তায় একটু লড়াইয়ের পুঁজি পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিন শেষে যদিও তা যথেষ্ট হলো না। তিন জনের ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসে সহজ জয় পেল অস্ট্রেলিয়া।
মেলবোর্নে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের জয় ৮ উইকেটে। প্রতিপক্ষের দেওয়া ২৩২ রানের লক্ষ্য ৬৯ বল হাতে রেখে টপকে যায় তারা।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মূল নায়ক নিশ্চিতভাবেই বার্টলেট। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে হিসেবি বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। আর তাদের সফল রান তাড়ায় ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস খেলেন জস ইংলিস, ক্যামেরন গ্রিন ও স্টিভেন স্মিথ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের একমাত্র স্তম্ভ কার্টি-চেইস জুটি। ১১০ রানের জুটি গড়েন দুজনে; ক্যারিয়ার সেরা ৮৮ রান করেন কার্টি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই বার্টলেটের তোপের মুখে পড়ে উইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের তৃতীয় বলেই শিকার ধরেন তিনি; দুর্দান্ত এক আউটসুইঙ্গারে ভেঙে দেন জাস্টিন গ্রিভসের স্টাম্প। নিজের পরের ওভারে ফিরে ফের আঘাত হানেন ২৫ বছর বয়সী এই পেসার। কাভার দিয়ে ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন আলিক আথানেজ; কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ের কিপারের গ্লাভসে।
আর ইনিংসের দশম ওভারে বার্টলেটের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন শেই হোপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বার্টলেটের প্রথম স্পেলটা ছিল অসাধারণ; ৬ ওভারে ১০ রানে ৩ উইকেট।
খানিক বাদে গ্রিনের ওভারে কাভেম হজ ক্যাচ আউট হয়ে গেলে মহাবিপদে পড়ে যায় সফরকারীরা। তাদের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৫৯। সেখান থেকে দলকে একটু একটু করে টেনে তোলেন কার্টি ও চেইস।
মূল ভূমিকা অবশ্যই কার্টির। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন চেইস। দুজনে মিলে ১২৭ বল খেলে ১১০ রানের জুটি গড়েন। স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে চেইজ বোল্ড হলে ভাঙে এই জুটি। ৬৭ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেন চেইস।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কার্টিও। রান আউটে কাটা পড়ার আগে ১০৮ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
এরপর আর তাদের ইনিংসে উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি। পুরো পঞ্চাশ ওভারই যে খেলতে পারেনি তারা। কার্টি ও চেইসের পর দলটির তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হেইডেন ওয়ালশের ২০।
নিজের শেষ স্পেলে গুডাকেশ মোটিকে ফিরিয়ে চতুর্থ শিকার ধরেন বার্টলেট। ১৭ রান খরচায় চার উইকেট নেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে যা দ্বিতীয় সেরা বোলিং। রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান নির্বাচক টনি ডডিমেইডের। ১৯৮৮ সালে অভিষেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওভারেই ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন ম্যথিউ ফোর্ড। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ওই ধাক্কা সামলে জুটি জড়েন জস ইংলিস ও ক্যামেরন গ্রিন।
দুজনের ৭৯ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন ইংলিস। মারমুখী ব্যাটিংয়ে ৪৩ বলে ৬৪ রান করেন তিনি; মারেন ১০টি চার ও একটি ছক্কা। মোটির স্পিনে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। বল লেগেছিল তার গ্লাভসে, বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইংলিস ফিরে গেলেও দল পেয়ে যায় শক্ত ভিত। সেখান থেকে ১৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন স্মিথ ও গ্রিন।
১০৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৭ রান করেন গ্রিন। আর অধিনায়ক স্মিথ ৭৯ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৭৯ রান করেন।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে মাঠে গড়াবে আগামী রোবববার, সিডনিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৮.৪ ওভারে ২৩১ (আথানেজ ৫, গ্রিভস ১, কার্টি ৮৮, হোপ ১২, হজ ১১, চেইস ৫৯, ওয়ালশ ২০, শেফার্ড ০, ফোর্ড ১৯, মোটি ৩, টমাস ২*; মরিস ১০-২-৫৯-০, বার্টলেট ৯-১-১৭-৪, অ্যাবট ৯.৪-০-৪২-২, গ্রিন ৮-০-৪০-২, জ্যাম্পা ১০-০-৫৬-১, শর্ট ২-০-১২-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৩৮.৩ ওভার ২৩২/২ (হেড ৪, ইংলিস ৬৫, গ্রিন ৭৭*, স্মিথ ৭৯*; ফোর্ড ৪-০-৩৭-১, টমাস ৫-০-৪০-০, মোটি ১০-০-৫৮-১, শেফার্ড ৪-০-১৪-০, ওয়ালশ ৭.৩-০-৪১-০, চেইস ৬-০-৩১-০, হজ ২-০-১০-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাভিয়ার বার্টলেট