‘মুস্তাফিজুর রহমানের শেখার প্রক্রিয়া শেষ, তার কাছ থেকে আইপিএলের অন্য ক্রিকেটাররা শিখতে পারে, এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না’- বললেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
Published : 17 Apr 2024, 05:38 PM
মুস্তাফিজুর রহমানের জন্য জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি আইপিএলে? বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেললে কি তিনি বেশি সমৃদ্ধ হতে পারতেন? বিশ্বকাপের আগে দেশের ক্রিকেটের জন্যও কি তা বেশি ভালো হতো? মুস্তাফিজকে নিয়ে এরকম নানা প্রশ্ন এখন উড়ে বেড়াচ্ছে। বিসিবির কাছে অবশ্য উত্তরটা পরিষ্কার। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস স্পষ্ট করেই বললেন, আইপিএল এখন আর মুস্তাফিজের জন্য শেখার মঞ্চ নয়।
আইপিএলে এবার বেশ ভালো ছন্দে থাকলেও মুস্তাফিজকে ফিরতে হবে মাঝপথেই। প্রাথমিকভাবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল তার ভারতে থাকার অনুমতি। পরে চেন্নাই সুপার কিংস ও ভারতীয় বোর্ডের অনুরোধে ছুটি বাড়ানো হয়েছে এক দিন। তাতে আরও একটি ম্যাচ বেশি খেলার সুযোগ আছে তার।
এরপর দেশে ফিরেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে যোগ দেওয়ার কথা অভিজ্ঞ পেসারের। চট্টগ্রামে আগামী ৩ মে শুরু পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি।
মুস্তাফিজের ছুটি এক দিন বাড়ানোর বিষয়টি আগেই জানানো হয়েছিল। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেটি আরও নিশ্চিত করেন জালাল ইউনুস। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, জিম্বাবুয়ে সিরিজের চেয়ে আইপিএল খেললেই বেশি উপকার হতো কি না। জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান।
“আইপিএল খেললে ভালো হতো কোন দিক দিয়ে? মুস্তাফিজের আইপিএল খেলে এখন শেখার কিছু নেই। মুস্তাফিজের শেখার প্রক্রিয়া শেষ। বরং মুস্তাফিজের কাছ থেকে আইপিএলের অন্য ক্রিকেটাররা শিখতে পারে। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। মুস্তাফিজের কাছাকাছি থেকে অন্যদের ফায়দা হবে।”
আইপিএলের জন্য মুস্তাফিজকে আরও বেশি ছুটি না দেওয়ার কারণ অবশ্য আরও কিছু আছে বলে জানালেন তিনি। এই আসরে টানা খেলা ও ভ্রমণক্লান্তিতে ফিটনেসের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটিকেও গুরুত্ব দিয়েছে বিসিবি। বিশ্বকাপের আগে তাই দলের মূল পেসারদের একজনের ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে চায় না বোর্ড।
“আইপিএল আপনাদের মনে হতে পারে শুধু ৪ ওভারের খেলা। কিন্তু এটা জানেন, কত ধকল নিতে হয়? রাতেও তাদের ভ্রমণ করতে হয়। খেলা শেষে রাত ১টায়ও বিমান ভ্রমণ করতে হয়। এটা অনেক কষ্টকর। আমাদের চিন্তা হচ্ছে, মুস্তাফিজের স্বাস্থ্য, তার ফিটনেস। সেখানে তারা (চেন্নাই) চাইবে, মুস্তাফিজের থেকে শতভাগ নিতে। তার ফিটনেস নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আমাদের আছে।”
“মুস্তাফিজকে ফেরানো শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলানোর জন্য নয়। এখানে আমরা তার ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করে খেলাব। আইপিএলে থাকলে সেটা হবে না। মুস্তাফিজের শেখার প্রক্রিয়া শেষ। মুস্তাফিজের ওখান থেকে শেখার দরকার নেই। সে ৭-৮ বছর ধরে আইপিএল খেলে। লাভবান তারা হবে, আমরা না।”
বছর তিনেক আগে আইপিএলের একটি উদাহরণও তুলে ধরেন বিসিবির এই পরিচালক। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়েছিল ২০২১ সালের আইপিএল। ওই টুর্নামেন্ট শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর ছিল ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেবার আমিরাতে আইপিএল খেলে পরে ওমানে দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজ। তখন তারা দুজন ক্লান্তি ও অবসাদে আচ্ছন্ন ছিলেন, মনে করিয়ে দেন জালাল ইউনুস।
“২০২১ সালে আমাদের দুজন ক্রিকেটার আইপিএল খেলে বিশ্বকাপে যোগ দিয়েছিল। তারা তখন খুবই ক্লান্ত ছিল, নিজেরাও সেটি বলেছে। আমরা অমন পরিস্থিতি চাই না। মুস্তাফিজকে দেশে ফেরানো মানেই যে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলাব, তা নয়। তার ওয়ার্কলোড কমাব, চাপ কমাব। দলের সঙ্গে থাকবে, বোঝাপড়া বাড়বে।”
মুস্তাফিজের শারীরিক ঝুঁকির পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তি কমানোর কথাও বললেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান। চনমনে মুস্তাফিজকে বিশ্বকাপে চান তারা।
“সামনে একটা বিশ্বকাপ, বড় ইভেন্টে যাচ্ছে। এর আগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে যাতে থাকতে পারে, একসঙ্গে যেতে পারে। কারণ মে মাসেই আমাদের খেলা শুরু হয়ে যাবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩টা টি-টোয়েন্টি। তাকে তো সেখানে মানিয়ে নিতে হবে।”
“যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তো তার ফিট থাকতে হবে। শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে। ক্লান্ত হয়ে গেলে সে তো পারফর্ম করতে পারবে না। তাহলে আমার কী দরকার (আইপিএল খেলতে দেওয়ার)! আমাদের তাকে প্রয়োজন। আমরা সতেজ মুস্তাফিজকে চাই, অবসন্ন মুস্তাফিজ চাই না।”
চলতি আইপিএলে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি মুস্তাফিজ। নতুন দল চেন্নাইয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো বোলিং করেছেন ২৮ বছর বয়সী পেসার। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সবশেষ ম্যাচে খরুচে বোলিং করলেও সব মিলিয়ে ৫ ম্যাচে তার শিকার ১০ উইকেট।
দেশে ফেরার আগে চেন্নাইয়ের হয়ে আর ৪টি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে তার সামনে।