দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েও শেষ সময়ে বাজে শটে আউট জন আকবর আলি, শেষ দিকে দারুণ বোলিংয়ে পার্থক্য গড়ে দেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আবু হায়দার।
Published : 30 Apr 2024, 07:36 PM
জয়ের জন্য শাইনপুকুরের প্রয়োজন তখন সাত বলে ১১ রান। উইকেট বাকি তিনটি। স্ট্রাইকে তখন আকবর আলি, দলের অধিনায়ক ও শেষ ভরসা। ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে শেষ ওভারে তিনি স্ট্রাইক ধরে রাখার চেষ্টা করবেন, এমনটিই হওয়ার কথা। কিন্তু তার মাথায় কোন ভাবনা খেলে গেল, কে জানে! মুশফিক হাসানকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টা করলেন তিনি। টাইমিং ঠিকঠাক হলো না। লং অফে ক্যাচ নিয়ে দু হাত উঁচিয়ে উদযাপন করলেন নাসুম আহমেদ। তিনি জানতেন, তাদের কাজ হয়ে গেছে!
শেষ ওভারে শাইনপুকুরের দুই ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে বাকি কাজটুকু দারুণভাবে সেরে নিলেন আবু হায়দার। রোমাঞ্চকর জয়ের আনন্দে মেতে উঠল মোহামেডান। আকবর নিশ্চয়ই তখন ড্রেসিং রুমে বসে আফসোসে পুড়ছেন, দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েও সুযোগটি হেলায় হারালেন তিনি।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৮ রানে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
বিপর্যয়ের মধ্যে ফিফটি করার পর বল হাতে একটি উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে পুরস্কারটি অনায়াসে পেতে পারতেন আবু হায়দারও। শেষ সময়ে তিনিই গড়ে দেন বড় ব্যবধান।
২৫৬ রান তাড়ায় শেষ তিন ওভারে ২৩ রান প্রয়োজন ছিল শাইনপুকুরের। উইকেট তখনও বাকি তাদের ৫টি। সেই সময়ে বোলিংয়ে এসে এসএম মেহরবকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন আবু হায়দার। পরে শেষ ওভারে শাইনপুকুরের শেষ দুই উইকেটও তার।
বিকেএসপি তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান ৩০ রানের মধ্যে হারায় দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও হাবিবুর রহমানকে। একটু পর আরেকটি বড় ধাক্কা আসে তাদের জন্য। লিগে ছয়শর বেশি রান করা মাহিদুল ইসলাম ফিরে যান শূন্যতেই। ১২ বল খেলে রানের দেখা পাননি তিনি।
তিনে নামা ইমরুল কায়েস ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু মোহামেডান অধিনায়ক যখন আউট হয়ে যান ৩০ রান করে, ৭০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন বিপাকে দল।
পঞ্চম উইকেটে ৯৩ রানের জুটিতে দলকে উদ্ধার করেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ৭৮ বলে ৫৮ করে আউট হন মিরাজ। ৬৯ বলে ৫৬ রানে থামেন মাহমুদউল্লাহ। দুটি উইকেটই নেন বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি।
এরপর আরিফুল হকের ৩৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস মোহামডানকে এগিয়ে নেয় আরেকটু। শেষ দিকে দুই ছক্কায় ৮ বলে ১৮ রান করে দলকে আড়াইশ পার করান দশে নামা নাসুম আহমেদ।
রান তাড়ায় শাইনপুকুর ৭ রানের মধ্যে হারায় আগ্রাসী ওপেনার জিসান আলম ও তিনে নামা অমিত হাসানকে। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন ওপেনার খালিদ হাসান ও অভিজ্ঞ মার্শাল আইয়ুব। দুজনের খেলার গতি যদিও ছিল দুইরকম।
৯২ রানের জুটি ভাঙেন আবু হায়দার। ৮৩ বলে ৪৮ রান করে আউট হন খালিদ। ৯ চারে ৭২ বলে ৭০ রান করে ফেরেন মার্শাল।
পঞ্চম উইকেটে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন ইরফান শুক্কুর ও আকবর আলি। ৬০ রানের এই জুটিতে দুইশর কাছাকাছি পৌঁছে যায় শাইনপুকুর।
দুজন যখন অনায়াসে বাড়াচ্ছেন রান, তখন নিজের বিপদ ডেকে আনেন ইরফান। মিরাজকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় তিনি স্টাম্পড হয়ে যান ৪৪ বলে ৩৮ রান করে।
আরেকপ্রান্তে আকবর ছিলেন অটল। মেহরবকে সঙ্গী করে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। কিন্তু শেষ সময়ে ওই গড়বড়।
৪৮তম ওভারে মেহরবের বিদায়ের পর শেষের আগের ওভারে রান আউট হন হাসান মুরাদ। ওই ওভারের শেষ বলে আকবরের সেই আত্মহত্যা। ৬৭ বলে ৬১ রান করে দলকে হতাশ করে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি।
শেষ ওভারের চ্যালেঞ্জে পেরে ওঠেনি শাইনপুকুরের লোয়ার অর্ডার। লিগজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা আবু হায়দার আবার হয়ে ওঠেন নায়ক।
চার উইকেট নিয়ে বাঁহাতি এই পেসার এখন লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (২৮টি)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ২৫৫ (হাবিবুর ১২, রনি ১৩, ইমরুল ৩০, মাহিদুল ০, মিরাজ ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, আরিফুল ৪১, আবু হায়দার ৯, নাঈম ১, নাসুম ১৮*, মুশফিক ৬*; নাহিদ ৯.৫-০-৬৭-২, মুরাদ ১০-০-২৮-১, সানি ১০-১-৩৪-৩, নাঈম ১০-২-৪৭-২, মেহরব ৪-০-৩৩-১, জিসান ৬-০-৪৪-১)।
শাইনপুকুর ক্লিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৪৭ (খালিদ ৪৮, জিসান ৫, অমিত ০, মার্শাল ৭০, ইরফান ৩৮, আকবর ৬১, মেহরব ১৩, মুরাদ ৪, সানি ০, নাঈম নাহিদ ; আবু হায়দার ৯.৪-০-৫১-৪, মুশফিক ৯-০-৪৫-৩, নাঈম ১০-১-৩৬-০, নাসুম ১০-০-৬৭-০, মিরাজ ১০-১-৩৬-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১১-০)।
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ।