বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে খুশি বিসিবি, ‘দল আছে সঠিক পথেই’

দু-এক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাবে, বিশ্বাস বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিঅ্যাডিলেইড থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2022, 11:35 AM
Updated : 3 Nov 2022, 11:35 AM

ভারত ম্যাচের পরদিন সকাল একটু ব্যস্ততায় কাটল বাংলাদেশ দলের। আইসিসির সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি শহরেই পর্যটনকে তুলে ধরার আযোজন চলছে বিশ্বকাপকে ঘিরে। অ্যাডিলেইডে বৃহস্পতিবার এরকমই একটি আয়োজন ছিল বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে। স্থানীয় পর্যটন মন্ত্রী ছিলেন সেখানে। দুই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও অ্যারন ফিঞ্চের কাছ বাচ্চাদের প্রশ্নের একটি সেশন ছিল। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ত্রয়োদশ আসরের দ্বিতীয় রানারআপ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রন্ধনশিল্পী কিশোয়ার চৌধুরীও ছিলেন। বেশ নির্মল একটি আয়োজন ছিল।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিরতি তিন দিনের। আগের রাতে ম্যাচ খেলায় বৃহস্পতিবার কোনো অনুশীলন ছিল না দলের। মোসাদ্দেক হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্তরা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন শপিং মলে। ফুরফুরে সেই হাওয়া দলের ভেতরেও বহমান বলে জানা গেছে দল সংশ্লিষ্টদের সেঙ্গ কথা বলে। ভারতের কাছে হারের হতাশা আছে। তবে কাতর নন ক্রিকেটাররা। বরং সামনে এগিয়ে চলার রসদ যথেষ্ট মিলেছে বলেই মনে করছে দল।

একই মনোভাব বিসিবি কর্তাদেরও। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে দলের সার্বিক পারফরম্যান্সে বেশ খুশি বোর্ড। যদিও পারফরম্যান্সে ওঠা-নামা ছিল বেশ। দুটি জয়ের ম্যাচেও পারফরম্যান্স খুব পরিশীলিত ছিল না। ভারতের বিপক্ষে জয়ের মতো অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হয়েছে হার।

তবে যেভাবেই হোক, দুটি জয় এসেছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য ধরা দিয়েছে, সন্তুষ্টির উপকরণ এখানে যথেষ্টই খুঁজে পাচ্ছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। দলের সঙ্গে থাকা এই বিসিবি পরিচালকের বিশ্বাস, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলের দুর্বলতার জায়গাগুলোয় উন্নতি হচ্ছে।

“আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন বা সেমি-ফাইনাল চিন্তা না করে প্রতিটি ম্যাচ ধরে খেলা। সবার কাছে বার্তা ছিল, ‘তোমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ ফোকাস করো, যেন যে ম্যাচ আসবে সেই ম্যাচে ইতিবাচকতা নিয়ে খেলতে পারি ও জিততে পারি।’ ভারতের বিপক্ষে জিততে পারলে আমরা হয়তো এগিয়ে থাকতাম। তারপরও আমরা ভালো খেলেছি। আমরা সত্যিই খুশি।”

“টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যে ঘাটতি ছিল, তা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলা হবে। আমরা জেতার জন্যই খেলব। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কিন্তু কোনো হিসাব-নিকাশ করছি না যে সেমি-ফাইনাল বা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে হবে। একটি ম্যাচ বাকি, এই ম্যাচটা যেন জিততে পারি, এটাই লক্ষ্য।”

টি-টোয়েন্টিতে ক্রমাগত ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ দলের ভাগ্য বদলের আশায় গত এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট করে আনা হয়েছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। দলে বেশি কিছু বড় পরিবর্তনও আনা হয়েছে। কিছুদিন আগেও যিনি ছিলেন অধিনায়ক, সেই মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম অবসর নিয়েছেন প্রবল সমালোচনার মুখে।

এই পরিবর্তনের হাওয়ায় দলও বদলে যাওয়ার পথে আছে বলেই বিশ্বাস ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের। তার মতে, এই পথ ধরে এগোলেই দল পৌঁছে যাবে কাঙ্ক্ষিত সীমানায়। এজন্য উপযুক্ত সময় দেওয়ার অনুরোধ তিনি করলেন।

“আমরা অবশ্যই সঠিক পথে আছি। শুরু হওয়ার আগে আপনারা কোচের কথা, টিম ম্যানেজমেন্টের কথা শুনেছেন, বোর্ড অফিসিয়ালদের কথা শুনেছেন যে আমরা টি-টোয়েন্টিতে দলের একটা নতুন ব্র্যান্ড দিতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ দলের মধ্যে অনেক বদল এসেছে, অনেক পরিবর্তন করেছি ক্রিকেটারদের মধ্যে। এটার জন্য আমাদের অনেকে সমালোচনা করেছে, স্বাগতও জানিয়েছে। দিনশেষে এটা বাংলাদেশের দল। কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।”

“ভালো করার দায়িত্ব চলে আসছে, সময় চলে এসেছে। এজন্যই পরিবর্তন এসেছে অনেক কিছু এবং আমরা মনে করি এটা সঠিক পথেই আছে। তবে সময় লাগবে, ধৈর্য্য লাগবে।”

সেই সময়ের সম্ভাব্য একটি ধারণাও তিনি দিলেন। তার বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে দল নিজেদের গুছিয়ে নেবে।

“চাপ নেই কোনো। তারা যেন চাপ ছাড়া খেলে, খোলা মনে খেলে, এটা তাদেরকে বারবার বলা হয়েছে। একসময় দেখবেন যে তারা এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ইনশাল্লাহ এক-দুই বছরের মধ্যে এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে যে ধরনের টি-টোয়েন্ট খেলা দরকার, দল তা খেলবে।”