পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে উচ্ছ্বাস, তাসকিনকে ‘মিস’ করছিলেন হাসান

চোটের কারণে দলে নেই তাসকিন, স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে নেই মুস্তাফিজ, কিন্তু তা বুঝতে দেননি হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম। ভালো পেস ইউনিট গড়ে তোলায় বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে কৃতিত্ব দিলেন হাসান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 03:50 AM
Updated : 10 May 2023, 03:50 AM

পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র তাসকিন আহমেদ সফরে যেতে পারেননি চোটের কারণে। এক সময় যিনি ছিলেন এক নম্বর পছন্দ, সেই অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান স্কোয়াডে থাকলেও নেই একাদশে। কিন্তু হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম যেন বুঝতেই দিলেন না তাদের অভাব। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের গভীরতার বার্তাও যেন ফুটে উঠল এতে। এটির কৃতিত্ব হাসান দিলেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। সহায়ক কন্ডিশনে তাসকিনকেও মনে পড়ছিল তরুণ এই পেসারের।

চেমসফোর্ডে মঙ্গলবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে খুব বড় পুঁজি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের ৬১ রানের ইনিংসে তারা ৫০ ওভারে করতে পারে ৯ উইকেটে ২৪৬। তবে রান তাড়ায় আইরিশদের ভালো শুরু পেতে দেননি হাসান ও শরিফুল ইসলাম।

বিপজ্জনক পল স্টার্লিংকে দ্রুত থামান শরিফুল। দুর্দান্ত ডেলিভারিতে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে বোল্ড করে দেন হাসান। পরে এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার স্টিভেন ডোহেনিকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশেরই। ১৬.৩ ওভারে আয়ারল্যান্ডের রান ছিল ৩ উইকেটে ৬৫। ওই স্কোরেই পরিত্যক্ত হয় ম্যাচ।

বড় পুঁজি গড়তে না পারার পর জরুরি ছিল বল হাতে শুরুটা ভালো করা। হাসান ও শরিফুল দলকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত সেই শুরু। দুই তরুণ ও অনভিজ্ঞ পেসারের সৌজন্যে ম্যাচের লাগাম ধরতে পারে দল। ম্যাচের পর বিসিবির ভিডিও বার্তায় হাসান শোনালেন তাদের বোলিং পরিকল্পনার কথা।

“বোলিংয়ে আমাদের পরিকল্পনা ছিল চতুর্থ থেকে পঞ্চম স্টাম্পে বল করা। জায়গা না দেওয়া। যতটুকু সম্ভব স্টাম্পে বল করা। সুইং ব্যবহার করা, নতুন বল কাজে লাগানো। যতটুকু সম্ভব সামনে বল করা। আমরা খুবই ভালো শুরু করেছি, আমি ও শরিফুল। আমাদের বোলিংয়ে ওদের দুটি উইকেট পড়েছে। পরে তাইজুল ভাই একটি নিয়েছে। আমরা খুবই ভালো ছিলাম।”

“আমি ও শরিফুল খুব ভালো শুরু করেছি। ওদেরকে ভুগিয়েছি। নতুন বলে সুইং করিয়েছিলাম। ভালো জায়গায় হিট করছিলাম। সব মিলিয়ে ভালো বোলিং হয়েছে দুজনের।”

বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডেতেই গত মার্চে সিলেটে আইরিশদের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান। দেশের কন্ডিশনে পেসারদের সহায়তা খুব একটা থাকে না। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে বোলিং করার স্বাদ পেলেন তিনি প্রথমবার। আকাশ ছিল মেঘলা, উইকেটও ছিল মুভমেন্ট। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ করেছেন হাসান।

“ইংল্যান্ডে আমার এটা প্রথমবার, এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সব মিলিয়ে উইকেট খুব ভালো ছিল। বাউন্স ছিল, সুইং ছিল। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি লাইন-লেংথে বল করার, নিজেকে মেলে ধরার। খুব ভালো শুরু হয়েছে।”

শুধু নিজের বা শরিফুলের কথাই নয়, হাসান বললেন গোটা পেস ইউনিটের কথাই। গত দুই-আড়াই বছর ধরে সব সংস্করণেই বাংলাদেশের পেস আক্রমণ বড় প্রভাব রাখতে শুরু করেছে। হাসানও বললেন সেই পেস বোলিং গ্রুপের কথা। এখানেই তার মনে পড়ল চোটে পড়া তাসকিনকে।

“আমি ও শরিফুল ভালো শুরু করেছি। আমরা দুজনই ইনজুরিতে ছিলাম কিছু সময় ধরে। এখন দুজনই ফিট আছি। তাসকিন ভাই এখন ইনজুরিতে আছেন, উনি সামনে ফিরে আসবেন ইনশাল্লাহ। উনাকে মিস করছিলাম আজকে।”

“সব মিলিয়ে আমাদের পেস বোলিং ইউনিট খুব ভালো। ইবাদত ভাই, মুস্তাফিজ ভাই, তাসকিন ভাই, সবাই একটা রিদমে আছে। চেষ্টা করব যেন আমরা সবাই মিলে একটা ইউনিট হিসেবে কাজ করতে পারি বাংলাদেশ দলের জন্য।”

পেস আক্রমণের এমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় হাসান বড় অবদান দেখছেন অ্যালান ডোনাল্ডের। গতিময় ও আগুনে বোলিংয়ের জন্য একসময় ‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে পরিচিতি পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি অবশ্য আগে থেকেই বেশ প্রশংসিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে। হাসানও বললেন, তারা বেশ উপকৃত হচ্ছেন ডোনাল্ডের কাছ থেকে।

“আমাদের পেস বোলিং গ্রুপ খুবই ভালো করছে। এখানে ইংলিশ কন্ডিশনে ভালো অ্যাকুরেসির সঙ্গে ভালো শেইপে আছে। এর পেছনে বলতে গেলে অ্যালান ডোনাল্ডের অনেক পরিশ্রম আছে বটে। উনি আমাদেরকে তার অভিজ্ঞতাগুলো ভাগাভাগি করেন যে কীভাবে কী করলে ভালো হয়। সেগুলো থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। পরামর্শগুলো আমাদেরকে অনেক সহায়তা করে।”

“এরকম কন্ডিশনে ভালো করার জন্য অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, যতটুকু সম্ভব, ব্যাটসম্যানদের সামনে খেলানোর চেষ্টা করা। বক্সের ভেতর বল করা, স্টাম্প টু স্টাম্প করতে পারলে খুব ভালো।”

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শুক্রবার।