ম্যাচের শুরুতেই জোড়া উইকেট। টস হেরে বোলিং পাওয়াকে তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু সময় যত গড়াল, ক্যারিবিয়ানদের দাপট ফুটে উঠল একটু একটু করে। দুই ব্যাটসম্যানের ৮০ ছোঁয়া ইনিংসের সঙ্গে আরও দুজনের ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত দিন শেষে এগিয়ে রইল তারাই।
মুশফিক হাসান, নাসুম আহমেদের বোলিংয়ে একসময় আশা জাগলেও শেষ পর্যন্ত দিনটা নিজেদের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিলেটে তৃতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের প্রথম দিনে মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের রান ৬ উইকেটে ৩২০।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮৩ রানের ইনিংস খেলা তেজনারাইন চন্দরপল এবারও আউট হন ৮৩ রানেই। আগের দুই ম্যাচেই দারুণ ব্যাট করা জশুয়া দা সিলভা উপহার দেন আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস। এমনিতে লম্বা সময় নিয়ে উইকেট আঁকড়ে রাখতে পছন্দ করলেও এ দিন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক খেলেন ৯৪ বলে ৮২ রানের স্ট্রোকসমৃদ্ধ ইনিংস।
ফর্মে থাকা আলিক আথানেজ করেন ফিফটি। অপরাজিত ফিফটিতে দিন শেষ করেন অলরাউন্ডার রেমন রিফার।
বাংলাদেশের হয়ে তরুণ পেসার মুশফিক হাসান ৫০ রানে নেন ২ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ৩ উইকেট নিলেও তার বোলিংয়ে ধার বেশি ছিল না।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেট এ দিন ছিল বেশ ব্যাটিং সহায়ক। তবে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দুই ম্যাচে ৮৬ ও ৯১ রানের ইনিংস খেলা ওপেনার কার্ক ম্যাকেঞ্জি বিদায় নেন শূন্য রানেই। শরিফুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান।
সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা জাচারি ম্যাককেস্কি ১ রান করে সোহানের হাতেই ধরা পড়েন মুশফিকের বলে। তৃতীয় ওভারে ক্যারিবিয়ানদের রান তখন ২ উইকেটে ১!
নড়বড়ে সেই শুরু থেকে দলকে উদ্ধার করেন চন্দরপল ও আথানেজ। শুরুতে কিছুটা সময় নেওয়ার পর মুশফিকের ওভারে চার ও ছক্কা মেরে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আথানেজ। দারুণ সব শট খেলতে থাকেন চন্দরপলও। দুই পাশ থেকেই বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিত।
৮২ রানের এই জুটি ভাঙেন নাসুম। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ বলে ৫৯ রান করে মাহমুদুল হাসান জয়ের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরেন আথানেজ। এরপরই দিনের সবচেয়ে বড় জুটি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এমনিতে লোয়ার-মিডল অর্ডারে ব্যাট করলেও এ দিন পাঁচ নম্বরে উঠে আসেন জশুয়া দা সিলভা। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সাবলিল। আরেকপ্রান্তে চন্দরপল তো তখন থিতু হয়েই গেছেন।
শরিফুলের বলে দারুণ ড্রাইভে চার মেরে চন্দরপলের ফিফটি আসে ৯৬ বলে। শরিফুলের এক ওভারে তিন বাউন্ডারির পর নাসমে ওভারে দুটি চারে জশুয়ার পঞ্চাশ আসে ৭২ বলে।
এক পর্যায়ে চন্দরপলের রানকেও ছাড়িয়ে যান জশুয়া। জুটির শতরান আসে ১৫৩ বলে।
চা-বিরতির ঠিক পর ১৩২ রানের এই জুটি ভাঙতে পারে বাংলাদেশ। নাসুমের ঝুলিয়ে দেওয়া বলের লেংথ পড়তে ভুল করে ইয়র্কার বানিয়ে বোল্ড হয়ে যান জশুয়া। ১২ চার ও ২ ছক্কার ইনিংস শেষে তিনি ফেরেন হতাশায়।
একটু পর বাজে শটে ফেরেন চন্দরপলও। মুশফিক হাসানের অনেক বাইরের বলে তাড়া করার চেষ্টায় বল লাগে তার ব্যাটের কানায়। উইকেটের পেছনে ডাইভিং ক্যাচ নেন সোহান।
একটু পর জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে টেভিন ইমলাখকে এলবিডব্লিউ করে দেন নাসুম। ম্যাচে তখন বলা যায় দুই দলই প্রায় সমানে সমান। ক্যারিবিয়ানদের রান ৬ উইকেটে ২৬০।
কিন্তু পরের জুটি আর এ দিন ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। রেমন রিফার ও কেভিন সিনক্লেয়ার ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ করেন দিন।
৬ চার ও ১ ছক্কায় ৯০ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত রিফার, ২২ রানে সিনক্লেয়ার। দ্বিতীয় নতুন বলেও জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে নতুন বলে খেলা হয়েছে কেবল ২ ওভার। দ্বিতীয় দিনে এটিই বাংলাদেশের ভরসা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৮২ ওভারে ৩২০/৬ (চন্দরপল ৮৩, ম্যাকেঞ্জি ০, ম্যাককেস্কি ১, আথানেজ ৫৯, জশুয়া ৮২, রিফার ৫৬, ইমলাখ ১০, সিনক্লেয়ার ২২*; মুশফিক ১৩-৪-৫০-২, শরিফুল ১৩-১-৫৮-১, তানজিম ১৫-১-৫৩-০, সাইফ ১২-২-৪৯-০, নাসুম ২৬-৫-৯২-৩, মুমিনুল ২-১-১১-০, জয় ১-০-২-০)।