ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মৌসুমের পর মৌসুম রাঙিয়েছেন, দুবার করে ফাইনাল খেলেছেন, কিন্তু এখনও বিপিএল শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর।
Published : 29 Feb 2024, 05:45 PM
প্রথম আসর থেকে বিপিএলে নিয়মিত মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার। কিন্তু দলীয় সাফল্যের ঝুলি এখনও শূন্য তাদের। সবগুলো আসর খেলেও কেউই পাননি ট্রফির ছোঁয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই মহীরুহ এবার খেলছেন একই দলে। একসঙ্গেই তাই দুজনের সামনে সুযোগ শিরোপার তিয়াস মেটানোর।
দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনাল আগেও খেলেছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনই দুইবার করে নেমেছেন শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে। কিন্তু একবারও ফল পাননি নিজেদের পক্ষে। তৃতীয় দফায় এবার একসঙ্গে শেষ বাধা জয়ের অভিযানে নামবেন তারা ফরচুন বরিশালের জার্সিতে।
চ্যালেঞ্জটা অবশ্য বেশ কঠিন। তাদের প্রতিপক্ষ বিপিএলের সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যারা শুধু বিপিএলের সফলতম দলই নয়, ফাইনালেও তারা হারতে জানে না। চারবার শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে খেলে হারেনি একটিও। এর দুটিতে আবার প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। এবার সেই কুমিল্লার বাধা পেরোতে পারলে অধরা সাফল্যের স্বাদ পাবেন তারা।
বিপিএলের প্রথম তিন আসরেই টানা দুইবার শিরোপার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৩ সালে চিটাগং কিংসের হয়ে ফাইনাল খেলেছেন তিনি। সেবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে তাদের পরাজয় ৪৩ রানে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। ১৭৩ রানের লক্ষ্যে দলের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন তিনি। ২৮ বলের ইনিংসে মারেন ৩টি করে চার-ছক্কা। কিন্তু বাকিদের থেকে তেমন সহায়তা না পাওয়ায় পরাজিত দলেই থাকতে হয় তাকে।
পরের আসরের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে নিজেকে ছাড়িয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। কুমিল্লার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাটিংয়ে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৮ রান করেন তিনি। পরে বল হাতে ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। তার এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্যও যথেষ্ট হয়নি দলের জন্য। অলক কাপালির ব্যাটে শেষ বলে ম্যাচ জেতে কুমিল্লা।
এছাড়া ২০১৬ সালের বিপিএলে খুলনা টাইটান্সকে প্লে-অফে তোলায় অনেক বড় অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯৬ রান করেন তিনি। বল হাতে ১০ উইকেট নেন অভিজ্ঞ স্পিন অলরাউন্ডার। সেবার তৃতীয় হয়ে থামে তার যাত্রা।
২০১৯ সালের বিপিএলে ফাইনালে অবশ্য নিষ্প্রভ ছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ১৭১ রানের লক্ষ্যে ১৫ বলে ২১ রানের বেশি করতে পারেননি খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক। শামসুর রহমান পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেও ম্যাচটি ২১ রানে হারে খুলনা।
মুশফিকের ফাইনাল হারের সবশেষ ঘটনা এখনও টাটকা। বিপিএলের গত আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সিতে খেলেন তিনি। সেবার ফাইনালের জন্যই যেন নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা জমিয়ে রাখেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান।
কুমিল্লার বোলারদের তুলাধুনা করে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় মুশফিক খেলেন ৪৮ বলে ৭৪ রানের ইনিংস। সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তও ৬৪ রান করলে ১৭৫ রানে পৌঁছায় সিলেট। কিন্তু জনসন চার্লসের ৫২ বলে ৭৯ রানের সৌজন্যে নিজেদের চতুর্থ শিরোপা পায় কুমিল্লা।
জাতীয় দলের অভিজ্ঞ তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু মুশফিক, মাহমুদউল্লাহই পাননি বিপিএল শিরোপার স্বাদ। মাশরাফি বিন মুর্তজা অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন চারটি বিপিএল। সাকিব আল হাসানও একাধিকবার পেয়েছেন ট্রফির ছোঁয়া। কুমিল্লার হয়ে ষষ্ঠ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তামিম ইকবাল।
এবার তামিমের নেতৃত্বে কুমিল্লাকে হারিয়েই শিরোপা খরা কাটানোর অপেক্ষায় মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। এমনিতে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানে টুর্নামেন্টের দশ আসরে অনেকের চেয়ে এগিয়ে তারা দুজন।
এখন পর্যন্ত ১১৯ ইনিংসে ৩ হাজার ২৪৯ রান করেছেন মুশফিক। পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ২১ ম্যাচে। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৯৮ রানের। মাহমুদউল্লাহ ১১০ ইনিংসে করেছেন ২ হাজার ৫১৩ রান। তার পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস ১২টি। বিপিএলের দশ আসর মিলিয়ে এই দুজনের চেয়ে বেশি রান আছে শুধু তামিমের।
বিপিএলে ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে উজ্জ্বল মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর সাফল্যের ভাণ্ডার হয়তো পূর্ণ হবে শিরোপা যুক্ত হলে। কোয়ালিফায়ার জয়ের পর সেই আশার ছোঁয়া ছিল মুশফিকের কণ্ঠে।
“দেখা যাক, আমার তো ইচ্ছা আছে (প্রথমবার ট্রফি জয়ের)। সবারই তো ইচ্ছা থাকে, বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা। এত দূর এসেছি… চেষ্টা থাকবে যেন চ্যাম্পিয়নশিপটা নিতে পারি। কুমিল্লা কখনও হারেনি ফাইনালে। কে জানে, হয়তো এবারই প্রথম হারবে!”
ফাইনালে কুমিল্লাকে হারাতে পারলে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মতো বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজিরও প্রথম শিরোপা হবে এটি। প্রথম আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে ফাইনাল হেরেছিল বরিশাল বার্নার্স। এক আসর পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে হেরে যায় বরিশাল বুলস।
আরেক দফা নাম বদলের পর ২০২২ সালের আসরে আবার ফাইনালে ওঠে তারা। সেবার ফরচুন বরিশালকে স্রেফ ১ রানে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আরও একবার বরিশালের মতোই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর বাধা কুমিল্লা।