অভিষেক টেস্ট খেলার এক যুগ পর বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট দিয়ে আবার ফিরলেন ভারতীয় পেসার।
Published : 22 Dec 2022, 10:26 AM
রিজার্ভ আম্পায়ারের কাছ থেকে লাল বল হাতে নিয়ে জয়দেব উনাদকাটের একটি ছবি। ক্যাপশনে লেখা ‘অধ্যাবসায় ও কঠোর পরিশ্রম ফল।’ এক যুগ পর টেস্ট খেলতে নামা উনাদকাটকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে এভাবেই সামাজিক মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে ভারতীয় বোর্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট দিয়ে অভিজাত এই সংস্করণে ফিরেছেন উনাদকাট। আগের টেস্ট ম্যাচটি এত আগে খেলেছেন তিনি, অনেকেরই স্মৃতির সীমানায় তা থাকার কথা নয়।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়নে টেস্ট অভিষেক বাঁহাতি এই পেসারের। এতদিন ধরে সেটিই ছিল উনাদকাটের ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট!
মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক উনাদকাটের। ভারতের এখনকার কোচ রাহুল দ্রাবিড় তখনও খেলছেন। বহাল তবিয়তে তখনও খেলে চলেছেন শচিন টেন্ডুলকার, বিরেন্দর শেবাগ, গৌতম গম্ভির, ভিভিএস লক্ষ্মণরা। বিরাট কোহলির তখন টেস্ট অভিষেকও হয়নি। এই ম্যাচের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল তো দৃশ্যপটেই নেই!
সেই ম্যাচের ভারতীয় একাদশের আর একজনই এখনও খেলার মধ্যে আছেন। সেই তিনিও এই টেস্টে নেই-পেসার ইশান্ত শর্মা। বাকি সবাই এখন অনেক দূরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
স্রেফ ৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল উনাদকাটের। দ্বিতীয় টেস্ট যখন খেলতে নামলেন, তার নামের পাশে ৯৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে উইকেট ৩৫৩টি।
সেই সেঞ্চুরিয়ন থেকে এবারের মিরপুর, তার দুই ম্যাচের মধ্যে ১১৮টি টেস্ট খেলেছে ভারত। দেশটির হয়ে দুই ম্যাচের মধ্যে এত লম্বা বিরতির নজির নেই আর।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের সৌজন্যে বেশ কিছু দিন ধরেই উনাদকাটকে দলে ফেরানোর দাবি জোরাল হচ্ছিল। তবু বাংলাদেশ সফরে শুরুতে দলে রাখা হয়নি তাকে। প্রথম টেস্টের আগে শেষ মুহূর্তে স্কোয়াডে যোগ করা হয় উনাদকাটকে।
সম্প্রতি ভারতের একদিনের ম্যাচের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে সৌরাষ্ট্রকে শিরোপা জেতানোর পথে ১০ ম্যাচে ১৯ উইকেট পেয়েছেন বাঁহাতি এ পেসার। লাল বলে তিনি সবশেষ খেলেন গত অক্টোবরে ইরানি ট্রফিতে। সেই ম্যাচে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলার পর ২০১৩ সালে ৭টি ওয়ানডে খেলেন উনাদকাট। মাঝে দীর্ঘ দিন থাকেন জাতীয় দলের বাইরে। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিজ্ঞতায় তিনি সমৃদ্ধ।
যার পুরস্কার হিসেবে পেলেন ১২ বছর পর টেস্ট খেলার স্বাদ। এতদিন এই রেকর্ডটি ছিল দীনেশ কার্তিকের। ২০১০ সালের জানুয়ারির পর ফের ২০১৮ সালের জুনে টেস্ট খেলেন তিনি। মাঝে পেরিয়ে যায় ৮৭টি ম্যাচ।
ম্যাচের হিসেবে দুই টেস্টের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতির বিশ্বরেকর্ডে দুই নম্বরে উঠে গেছে উনাদকাটের নাম।
১৪২ ম্যাচের বিরতি নিয়ে তালিকার চূড়ায় ইংল্যান্ডের গ্যারেথ ব্যাটি। ২০০৫ সালের পর ২০১৬ সালে তিনিও এই সংস্করণে ফেরার ম্যাচ খেলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে।
সময়ের হিসেবে ভারতের হয়ে রেকর্ডটি অল্পের জন্য হয়নি উনাদকাটের। এখানে আছেন তিনি তিন নম্বরে। ১৯৪৬ সালের জুনে ১২ বছর ১২৯ দিন বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলেছেন লালা অমরনাথ। ইফতিখার আলি খান পাতৌদির দুই টেস্টের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল ১২ বছর ১০ দিন।
এখানে বিশ্বরেকর্ডটি অবশ্য সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে রেখেছেন জন ট্রাইকস। ১৯৭০ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলেন তিনি। এরপর দেশটি নির্বাসনে চলে গেলে দীর্ঘ ২২ বছর ২২২ দিন পর নিজ দেশ জিম্বাবুয়ের হয়ে ফের এই সংস্করণের ম্যাচ খেলেন এই অফ স্পিনার।
টেস্ট অভিষেকে উনাদকাট ছিলেন উইকেটশূন্য। এক যুগ পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে তিনি স্বাদ পেলেন প্রথম টেস্ট উইকেটের। মিরপুর জাকির হাসানকে ফিরিয়ে ভারতকে তিনি এনে দিলেন প্রথম ব্রেক থ্রু।