ইয়াসিরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে না পারায় আক্ষেপ করলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, তবে আফগানিস্তান সিরিজে নাঈম-আফিফদের সুযোগ দিতে চান তিনি।
Published : 04 Jul 2023, 03:39 PM
বছর চারেক আগে ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর থেকে আসা-যাওয়ার মধ্যেই রয়েছেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। কখনও ১-২ ম্যাচ খেলে, আবার কখনও কোনো ম্যাচ না খেলেই দল থেকে বাদ পড়ে যান মিডল-অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। সবশেষ সিরিজে কোনো ম্যাচ না খেলেই এবার তিনি বাদ পড়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে দল থেকে। অধিনায়ক তামিম ইকবাল মানছেন, যথেষ্ট সুযোগ পাননি ইয়াসির।
ইয়াসিরের নিয়মিত আসা-যাওয়ার সবশেষ চক্র ধরা যায় গত বছর ঘরের মাঠে ভারত সিরিজ থেকে। চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর ওই সিরিজে তাকে ওয়ানডে দলে ফেরান নির্বাচকরা। পরে ওই সিরিজে তিনি সুযোগ পান স্রেফ এক ম্যাচ খেলার।
চট্টগ্রামে ৪০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে পাঁচ নম্বরে নেমে ৩০ বলে ২৫ রান করেন ইয়াসির। এরপর চলতি বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে রাখা হয়নি তাকে। এক সিরিজ পরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে ফেরেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ওই সিরিজে দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পান ইয়াসির। শেষ দিকে নেমে খেলেন ১০ বলে ১৭ ও ৭ বলে ৭ রানের ইনিংস। পরে ইংল্যান্ড সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তাকে রাখা হয় দলে। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি।
ধারাবাহিক আসা-যাওয়ার পথ ধরেই এবার তিনি বাদ পড়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল থেকে। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাদ পড়লেও নজরেই আছেন ইয়াসির। তবে কখনও সে অর্থে ধারাবাহিকভাবে সুযোগ পাননি তিনি।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে প্রথমবার ওয়ানডে স্কোয়াডে আসেন চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যান। এরপর সুযোগ পান আরও কয়েক সিরিজের দলে। কিন্তু প্রথম ম্যাচের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় গত বছরের আফগানিস্তান সিরিজ পর্যন্ত।
অভিষেকের পর থেকে চারটি ভিন্ন সিরিজে সব মিলিয়ে ৯ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ইয়াসির। এর মধ্যে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম ওয়ানডেতে ৪৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে নিজেদের সামর্থ্যের ঝলক দেখান তিনি। তবে টানা কয়েক ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি তিনি।
ওয়ানডে দলের বর্তমান অধিনায়ক তামিম অনেকবারই বলেছেন, যে কোনো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার আগে ভালোভাবে সুযোগ দিয়ে পরখ করার কথা। তবে ইয়াসিরের ক্ষেত্রে যে তা হয়নি, তা মানছেন তিনি।
চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে যথেষ্ট সুযোগ না দিতে পারার কারণও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“আমার মনে হয় না ইয়াসির যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। কারণ (ঘরের মাঠে) আয়ারল্যান্ড সিরিজে ৪-৫ ওভার বাকি থাকতে ও ব্যাটিংয়ে নেমেছে। এরপর আয়ারল্যান্ডে (ইংল্যান্ড) গিয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। পরে ও আর দলে নেই।”
“আমি অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছি, কোনো ক্রিকেটারকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে এটাও বলেছি যে, প্রতিটি ক্রিকেটারকে সমান সুযোগ দেওয়া খুব কঠিন। কিছু ক্রিকেটার দেখবেন ৬-৭-৮ ম্যাচ পাচ্ছে, কিছু ক্রিকেটার আবার ২-৩ ম্যাচ পাবে। সবাইকে সমান ম্যাচ দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। তবে আমিও একমত যে, ইয়াসির যথেষ্ট সুযোগ পায়নি।”
ইয়াসিরের ব্যাপারে একরকম আক্ষেপ থাকলেও, আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের স্কোয়াডে থাকা নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেনকে ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে চান তামিম।
সংবাদ সম্মেলনে সোমবার প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেও জানান, এই সিরিজে কয়েকজন ক্রিকেটারকে পরখ করার কথা। ম্যাচের আগের দিন তামিম যেন কোচের বার্তার পেছনের ভাবনাটাই পরিষ্কার করেন।
“এই সিরিজে আমরা চেষ্টা করব, সবাইকে একটা হলেও সুযোগ দেওয়ার। তবে এটি নিশ্চিত নয় যে, এরকমই হবে। অবশ্যই চেষ্টা করব, বিশ্বকাপের আগে তাকে (নাঈম) কিছু গেম টাইম দিতে। নেটে সে দারুণ ব্যাটিং করছে। তাকে খুবই ভালো মনে হচ্ছে।”
“যদি ওই রকম সুযোগ আসে, আমরা অবশ্যই (সুযোগ দিতে) চেষ্টা করব। কারণ আমি কখনও মনে করি না যে, রিজার্ভে যারা আছে, ওরা সরাসরি কোনো একটা বড় ইভেন্টে ম্যাচ খেলুক। আমরা যদি তাদেরকে ২-৩টা ম্যাচও সুযোগ দিতে পারি, তাহলে এটি ওই ক্রিকেটারের জন্যও ভালো হবে।”
প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা নাঈমের পাশাপাশি এই সিরিজে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া দাবি রাখতে পারেন আফিফ হোসেনও। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ পারফর্ম করে এক সিরিজ পরই দলে ফেরা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাপারেও দলের পরিকল্পনা জানালেন তামিম।
“আমাদের স্কোয়াডে দুইজন (বাড়তি) ব্যাটসম্যান আছে- আফিফও কিন্তু আছে। তাকেও খেলানোর একটা ইয়ে (তাগিদ) আছে। যে একাদশ আমরা ঠিক করেছি, কালকে দেখার পর একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন যে, আমরা কোন পথে যাচ্ছি। একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নাকি গত সিরিজের মতো একজন বাড়তি বোলার নিয়ে যাচ্ছি। এই কম্বিনেশন মূলত করা হয়, প্রতিপক্ষ ও প্রতিপক্ষের শক্তির ওপর। ওভাবেই করে যাব, যদি সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে ভালো হবে।”
“তবে এটি একদম জরুরি নয়। কোনো জিনিস যখন ভালো চলছে, অপ্রয়োজনে সেটা ভাঙার দরকার নেই। একইসঙ্গে এটা বলব যে, বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে আমাদের কেউ যদি ফিট না থাকি, তাহলে আফিফ বা নাঈম, যাকেই নামাই না কেন, এটি তার জন্য ঠিক হবে না।”
অবশ্য আফিফ-নাঈমদের সুযোগ দেওয়ার ভাবনা থাকলেও, দুটি বড় টুর্নামেন্টের আগে হাতে সময় বেশি নেই, সেটিও মনে করিয়ে দেন অধিনায়ক।
“আমরা যদি আগেই (তাদের) গেম টাইম দিতে পারি, তাহলে ভালো হবে। তবে এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি, এই একটা সিরিজের পর এশিয়া কাপ, এরপর বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপে সবাই জিততে চায়, বিশ্বকাপে সবাই জিততে চায়। তো যদি সুযোগ আসে, আমরা দেব। যদি না আসে, তাহলে তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যখনই সুযোগ আসবে।”