২৩ উইকেটের দিন শেষে পিচের আচরণ নিয়ে বিস্ময় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ভেতরেই।
Published : 04 Jan 2024, 10:44 AM
এক দল অল আউট ৫৫ রানে। আরেক দল অতটা খারাপ না করলেও শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে শূন্য রানে। সব মিলিয়ে টেস্টের প্রথম দিনেই শেষ ২৩ উইকেট! প্রশ্নটি তাই অবধারিতাবেই উঠে যায়, পিচ কেমন? সেই প্রশ্নের উত্তরেই বিস্ময়ের ছড়াছড়ি দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। স্বাগতিক দলই চমকে গেছে উইকেটের এমন আচরণে।
দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের কেপ টাউন টেস্টে রেকর্ডময় এক অদ্ভুত দিনে পতন হয়েছেন মোট ২৩ উইকেটের। টসজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেছে স্রেফ ৫৫ রানে। তাদের দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া বাকি কেউ পাঁচ রানও পেরোতে পারেননি। ভারত ব্যাটিংয়ে নেমে এক পর্যায়ে রান ছিল ৪ উইকেটে ১৫৩। সেখান থেকে তারা অল আউট ১৫৩ রানেই!
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ৬২ রান নিয়ে। এখনও তারা পিছিয়ে আছেন ৩৬ রানে। এই টেস্ট যদি তৃতীয় দিনের মুখ দেখে, সেটিই হবে বিস্ময়কর।
ডিন এলগার অবশ্য আগেই বিস্মিত। এটি তার বিদায়ী টেস্ট। টেম্বা বাভুমার চোটের কারণে দলকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। এই নিউল্যান্ডস স্টেডিয়াম তার প্রিয় মাঠ। এখান থেকে বিদায় নিতে পারছেন বলে নিজের রোমাঞ্চের কথাও বলেছিলেন আগে। কিন্তু এখন সেই রোমাঞ্চ উবে গেছে।
টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মিলিয়ে এই মাঠে অনেক খেলেছেন তিনি। দিন শেষে স্টার স্পোর্টসে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বললেন, তিনি চিনতেই পারছেন না প্রিয় আঙিনার পিচকে।
“এটি (পিচ) সাধারণত আরেকটু মন্থর থাকে এবং ব্যাটার হিসেবে তাতে মানিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু এবার দেখা গেছে, সেশন যত এগিয়েছে, ততই এটি আরও গতিময় হয়ে উঠেছে।”
“খালি চোখে দেখে পিচকে এতটা খারাপ মনে হয়নি। অতীতে এই মাঠের উইকেট, এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও কখনও এতটা বাজে আচরণ করেনি। বরং বেশ ভালো ছিল আগে। এতটা ভয়ঙ্কর কখনোই মনে হয়নি।”
কতটা ভয়ঙ্কর বা কেন ব্যাটসম্যানদের জন্য এরকম বিভীষিকা হয়ে উঠেছে উইকেট, তা বোঝা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং পরামর্শক অ্যাশওয়েল প্রিন্সের কথায়। খেলোয়াড়ি জীবনের বেশির ভাগ সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ঘরের মাঠ ছিল এটিই। নিউল্যান্ডসে এরকম উইকেট তার কাছেও অচেনা বলে জানালেন দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে।
“এই মাঠের পিচ এরকম আগে কখনও দেখিনি। প্রথম দিনেই এত গতিময় উইকেট আগে দেখিনি। পাশাপাশি অসমান বাউন্স ও অনেক সিম মুভমেন্টও ছিল। গতি বেশি থাকলে অবশ্য ব্যাটারদের সমস্যা নেই, তবে বাউন্স ধারাবাহিক হতে হয়। এখানে বাউন্স কিছুটা অধারাবাহিক ছিল, কিছু বল নিচু হয়েছে, কিছু লাফিয়েছে। এছাড়া সিম মুভমেন্টও ছিল অনেক। ম্যাচে প্রথম দিনে সিম মুভমেন্ট থাকতেই পারে। তবে অসম বাউন্সের সঙ্গে সিম মুভমেন্ট থাকলে, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে ওঠে।”
দিনজুড়ে উইকেটের দুই প্রান্তে বাউন্সের ধরনও ভিন্ন দেখা গেছে। যে প্রান্ত থেকে ৬ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ, সেই প্রান্তে বল ওঠা-নামা করেছে অনেক বেশি। অন্য প্রান্তে, যেখান থেকে ১ ওভারে ৩ উইকেট নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিডি, সেই প্রান্তে বল লাফিয়েছে একটু বেশি।
দুইরকম বাউন্সের কথা উল্লেখ করেই এলগার বললেন, “জানি না আসলে, এই উইকেটকে কেমন বলা যায়…।”
টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্তে অবশ্য আক্ষেপ নেই এলগারের। তবে এটাও স্বীকার করেছেন, উইকেটের আচরণ এমন হবে বুঝতে পারলে আগে ব্যাট করতেন না তারা।
টসের সিদ্ধান্তে ভুল কিছু দেখেন না প্রিন্সও।
“মাঠে আসার পর যদি দেখতাম আকাশ মেঘলা, তাহলে হয়তো (আগে বোলিং করা যেত…)। কিন্তু নীল আকাশ আর ঝকঝকে আবহাওয়া ছিল। উইকেটে যদিও হালকা ঘাসের ছোঁয়া ছিল। তবে বাউন্স ও মুভমেন্ট যদি ধারাবাহিক থাকে, তাহলে সেই বাউন্সে তো আমাদের ব্যাটারদের কখনোই সমস্যা হয়নি।”
নিউল্যান্ডসের উইকেটের আচরণ বদলে যাওয়া নিয়ে সম্ভাব্য একটি কারণ অনুমান করছেন প্রিন্স।
“আমার মনে আছে, বেশ কবছর আগে যখন ইংল্যান্ডে খেলেছি, বিশেষ করে নটিংহ্যামে, স্থানীয়রা বলছিল যে, এখানে যখন নির্মাণকাজ চলেছে, উইকেটের চরিত্রে তখন বদল এসেছে। জানি না, এখানেও সেটা ভূমিকা রেখেছে কি না। কারণ, প্রচুর নির্মাণকাজ চলছে এখানে।”
কয়েক বছর ধরে নিউল্যান্ডসে বেশ কিছু নতুন ভবন ও কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। নতুন কিউরেটরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিউরেটর ব্রাম মংয়ের তৈরি করা প্রথম টেস্ট উইকেট এটি।