সেমি-ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে সুপার টুয়েলভে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ।
Published : 02 Nov 2022, 12:13 PM
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৪/৬
বাংলাদেশ: (১৬ ওভারে ১৫১) ১৬ ওভারে ১৪৫/৬
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলা। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। ম্যাচটি হয়েছিল অ্যাডিলেইডে, যে মাঠ বাংলাদেশ ক্রিকেটের রূপকথায় আলাদা স্থান নিয়ে আছে ওই জয়ের কারণে।
কোয়ার্টাল-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ওই ম্যাচে জন্ম হয় নানা বিতর্ক। এরপর থেকে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই পায় নতুন মাত্রা। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ কিংবা বহু দলীয় কোনো প্রতিযোগিতায় দুই দল মাঠে নামলেই ছড়িয়ে পড়ে বাড়তি উত্তেজনা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ লড়াবে অ্যাডিলেইডেই। সুখস্মৃতির সঙ্গী এই মাঠে ম্যাচটি গড়াবে বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর অ্যাডিলেইডে প্রথম খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড-বধের সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা তাই নিতেই পারেন সাকিব আল হাসানরা।
শক্তি-সামর্থ্যে ভারত ও বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক। তবে দুই দলের লড়াইয়ে কাগজ-কলমের হিসেব গত কয়েক বছরে এসেছে খুব কম সময়ই। কারণ প্রতিবেশী দুই দেশের দেখায় উত্তেজনার পারদ যে থাকে তুঙ্গে। ছড়ায় বাড়তি রোমাঞ্চ।
তবে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের প্রত্যাশাকে কমিয়েই রাখতে চাইছে বাংলাদেশ। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে ভাবছে তারা।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলোর একটি ভারতকে হারাতে পারলে এটা হবে ‘আপসেট।’ অবশ্য এই অঘটন ঘটাতে চাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে ভারত। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে তারা শিরোপা দাবিদার দলগুলোর একটি। বাংলাদেশের বাস্তবতা অন্যদিকে ভিন্ন। ২০ ওভারের ক্রিকেটে যে তাদের পায়ের নিচের মাটিই এখনও শক্ত হয়নি।
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে খেলা ১১ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় স্রেফ একটি। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখায় তিন ম্যাচেই জিতেছে ভারত।
পরিসংখ্যান নিজেদের পক্ষে থাকলেও প্রতিপক্ষকে একদমই খাটো করে দেখছে না ভারত। কারণ টি-টোয়েন্টির সংস্করণই এমন, চোখের পলকে বদলে যেতে পারে পরিস্থিতি। হতে পারে যেকোনো ফল। তাই মাঠের লড়াইয়ে নামার আগের দিন দলটির কোচ ও ব্যাটিং গ্রেট রাহুল দ্রাবিড়ের কণ্ঠে ছিল বাংলাদেশের প্রতি সমীহ।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন ফিল্ডিং।
"অবশ্যই মেঘলা আবহাওয়া এবং আমরা ঠিক জানি না এই পিচে কত রান ভালো।"
"আমাদের জন্য বড় ম্যাচ। ছেলেরা চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি আছে। তারা জানে আমাদের সামনে কী আসছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে এবং আমি মনে করি, আমরা যথাযথ প্রস্তুত আছি।"
"ছেলেদের মধ্যে বন্ধন বেশ দৃঢ়। সবাই একসঙ্গে অনেকদিন ধরে খেলছে। সবাই এ বিশ্বকাপের অপেক্ষায় ছিল। এই মুহূর্তে আমরা ভালো যাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ভালো কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাওয়া।"
টস হেরেও চাওয়া পূরণ হয়েছে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার।
"আমরা ব্যাটিংই করতাম। খুব ভালো পিচ। বোর্ডে রান থাকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে ম্যাচ জিততে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আছি।"
"এই ফরম্যাটে সব ম্যাচই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। শেষ ম্যাচে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। আশা করি, আজকে ভালো খেলে দুই পয়েন্ট নিতে পারব।"
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পাওয়া দলে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। সেই পরিবর্তন অবশ্য বেশ চমক জাগানিয়া। ওপেনার সৌম্য সরকারের জায়গায় ফিরিয়েছে শরিফুল ইসলামকে। তাতে বাংলাদেশ খেলছে চার পেসার নিয়ে।
দল ঘোষণার সময় ভারত ও পাকিস্তানের টপ অর্ডারের বিপক্ষে নাসুম আহমেদের ম্যাচ আপের কথা বলেছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। তবে জায়গা হয়নি বাঁহাতি স্পিনারের।
ব্যাটিংয়ে শক্তি কমানোয় ব্যাটসম্যানদের কাছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চাওয়া একটু বেশিই।
"ব্যাটিং একটি জায়গা, যেখানে আমরা সবসময়ই উন্নতি করতে পারি। আমাদের ফাস্ট বোলিং খুব ভালো হচ্ছে। আমরা আজকে আরেকজন ফাস্ট বোলার বাড়িয়েছি। আশা করছি ভারতকে কম রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারব।"
বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, ইয়াসির আলি চৌধুরি, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, হাসান মাহমুদ, নাজমুল হোসেন শান্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে যাওয়া দলে একটি পরিবর্তন এনেছে ভারত। দিপক হুড়ায় জায়গায় ফিরেছেন বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার আকসার প্যাটেল।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, আকসার প্যাটেল, দিনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক), হার্দিক পান্ডিয়া, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদিপ সিং।
জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস ম্যাচে একদমই বাগড়া দেয়নি বৃষ্টি। তবে বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচে টসের একটু পরই শুরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। ঢেকে দেওয়া হয় উইকেট।
বৃষ্টি অবশ্য থেমে যায় একটু পরেই। খেলা শুরু হয় সময় মতোই।
তাসকিন আহমেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় দিয়েছিলেন সহজ ক্যাচ। কিন্তু নিদারুণ ব্যর্থতায় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি হাসান মাহমুদ।
১ রানে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে জীবন পান ভারত অধিনায়ক। অতীতে বেশ কয়েকবার শুরুতে জীবন পেয়ে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন তিনি।
৩ ওভারে ভারতের রান বিনা উইকেটে ১১।
ক্যাচ হাতছাড়া করার পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে সাফল্য পেলেন হাসান মাহমুদ। ফিরিয়ে দিলেন যার ক্যাচ ছেড়েছিলেন, সেই রোহিত শর্মাকে।
অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আপার কাট করতে চেয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু বল তার প্রত্যাশা মতো উঠেনি। তাই যতটা তুলতে চেয়েছিলেন, পারেননি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
১ রানে জীবন পেয়ে ২ রানে ফেরেন রোহিত। অতীতে বেশ কয়েকবার জীবন পেয়ে বাংলাদেশকে ভোগালেও এবার পারেননি।
৪ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ২২। ক্রিজে লোকেশ রাহুলের সঙ্গী বিরাট কোহলি।
বোলিং ভালো করলেও পাওয়ার প্লেতে কেবল একটি উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বলে ক্যাচ ছাড়ার পর রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
শুরু থেকেই আস্থার সঙ্গে খেলছেন রোহিত শর্মা। আগের তিন ম্যাচে রান না পাওয়া লোকেশ রাহুল দিয়েছেন ছন্দে ফেরার আভাস।
৬ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ৩৭। দু্ই ছক্কা ও এক চারে ২০ বলে ২১ রানে ব্যাট করছেন রাহুল। ৯ বলে তিন চারে ১৩ রানে খেলছেন কোহলি।
এক স্পেলেই তাসকিন আহমেদের চার ওভার করিয়ে ফেললেন সাকিব আল হাসান। গতিময় পেসার দিলেন কেবল ১৫ রান।
অনেকবার একটুর জন্য কানা নেয়নি বল। বেশিরভাগ সময় ব্যাটসম্যানদের নিলেন পরীক্ষা। একটি উইকেটও পেতে পারতেন। কিন্তু রোহিত শর্মার ক্যাচ নিতে পারেননি হাসান মাহমুদ। তার ব্যর্থতায় চলতি আসরে প্রথমবার উইকেটশূন্য থাকলেন তাসকিন।
৭ ওভারের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল তার কোটার চার ওভার।
বিরাট কোহলি ক্রিজে যাওয়ার পর বাড়ছে রানের গতি। মন্থর শুরুর পর গা ঝাড়া দিয়েছেন লোকেশ রাহুলও। তাদের জুটি পঞ্চাশ ছুঁয়েছে কেবল ৩২ বলে।
শরিফুল ইসলামের ‘নো’ বলে রাহুলের ছক্কায় আসে জুটির পঞ্চাশ। ফ্রি হিটে আরেকটি ছক্কা মারেন ভারতীয় ওপেনার। পরের বলে মারেন আরেকটি বাউন্ডারি। ওভার থেকে আসে ২৪ রান।
৯ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ৭৪। পঞ্চাশের দুয়ারে রাহুল, মাহেলা জয়াবর্ধনেকে ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়ে গেছে কোহলির।
সাকিব আল হাসানের প্রথম বলে দুই রান নিয়ে আসরে নিজের প্রথম পঞ্চাশে পৌঁছালেন লোকেশ রাহুল। পরের বলে তুলে মারার চেষ্টায় ধরা পড়লেন শর্ট ফাইন লেগে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এতে ভাঙল ৩৭ বলে গড়া ৬৭ রানের জুটি।
৩২ বলে চার ছক্কা ও তিন চারে ৫০ রান করেন রাহুল।
১০ ওভারে ভারতের রান ২ উইকেটে ৮৬। ১৯ বলে চারটি চারে ২৪ রানে খেলছেন কোহলি। ৩ বলে সূর্যকুমার যাদবের রান ৭।
একাদশ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে হাতছাড়া হলো বিরাট কোহলিকে রান আউটের সুযোগ। সাকিব আল হাসানের করা পরের ওভারে শর্ট ফাইন লেগে সূর্যকুমার যাদবের কঠিন ক্যাচ ছাড়লেন মুস্তাফিজুর রহমান।
সাকিবের ওভারের পঞ্চম বলে আরেকটা খুব কঠিন সুযোগ এসেছিল। সূর্যকুমারের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে কিপার নুরুল হাসান সোহানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় বল।
১২ ওভারে ভারতের রান ২ উইকেটে ১০১।
আগের ওভারে হাসান মাহমুদকে তিন চার মারা সূর্যকুমার যাদবকে বোল্ড করে বিদায় করলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক ভাঙলেন ২৫ বলে গড়া ৩৮ রানের জুটি।
সাকিবের স্টাম্প তাক করে দেওয়া ডেলিভারিতে কাট করতে চেয়েছিলেন সূর্যকুমার। শরীরের খুব কাছের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
১৬ বলে চারটি চারে ৩০ রান করেন সূর্যকুমার।
১৪ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ১১৯। ক্রিজে বিরাট কোহলির সঙ্গী হার্দিক পান্ডিয়া।
অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের শর্ট বল তাড়ার চেষ্টায় থামলেন হার্দিক পান্ডিয়া। হাসান মাহমুদ পেলেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট।
মারার মতোই বল ছিল কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি পান্ডিয়া। ক্যাচ যায় পয়েন্টে। সেখানে কোনো ভুল করেননি ইয়াসির আলি চৌধুরি।
৬ বলে ৫ রান করেন পান্ডিয়া।
১৬ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১৪০। ক্রিজে বিরাট কোহলির সঙ্গী দিনেশ কার্তিক।
এক সময়ে রান ছিল ছিল ২৮ বলে ৩২, সেখান থেকে ৩৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন বিরাট কোহলি। ভারতের রান স্পর্শ করল দেড়শ। এরপরই রান আউট হয়ে গেলেন দিনেশ কার্তিক।
দারুণ ফিল্ডিংয়ে এতে বড় অবদান সাকিব আল হাসানের। এক্সট্রা কাভারে বল পাঠানো কোহলির রানের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। তবে দারুণ উৎসাহী ছিলেন কার্তিক। বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আর সময় মতো ফিরতে পারেননি। সাকিবের থ্রো ধরতে গিয়ে তালগোল প্রায় পাকিয়েই ফেলেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তবে কোনোমতে ফেলতে পারেন বেলস।
নিজের শেষ ওভার করতে এসে উইকেটের দেখা পেলেন হাসান মাহমুদ। তরুণ এই পেসার ফিরিয়ে দিলেন আকসার প্যাটেলকে।
ড্রাইভ করতে গিয়ে ‘চেক’ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যাচ যায় কাভারে। সেখানে বেশ কিছুটা পিছন দিকে গিয়ে মুঠোয় জমান সাকিব আল হাসান।
৬ বলে আকসার করেন ৭। ওভারের শেষ দুই বলে হাসানকে চার-ছক্কা মেরে রান বাড়িয়ে নেন বিরাট কোহলি।
১৯ ওভারে ভারতের রান ৬ উইকেটে ১৭০। ৪২ বলে ৬১ রানে খেলছেন কোহলি। ২ বলে ২ রানে ব্যাট করছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ফিফটি এবং সূর্যকুমার যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দুটি ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ গড়েছে ভারত।
৬ উইকেটে ১৮৪ রান করেছে রোহিত শর্মার দল। শেষ ১০ ওভারে এসেছে ৯৮ রান।
প্রথম ৭ ওভারের মধ্যে বোলিং শেষ করে ফেলা তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে দিয়েছেন কেবল ১৫ রান। মুস্তাফিজ দিয়েছেন ৩১ রান। সাকিব আল হাসান ২ উইকেট নিয়েছেন ৩৩ রানে।
৩ উইকেট পেলেও বেশ খরুচে হাসান মাহমুদ। তিনি দিয়েছেন ৪৭ রান। দলে ফেরার ম্যাচ একদমই ভালো কাটেনি শরিফুল ইসলামের। বাঁহাতি এই পেসার ৫৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এর চেয়ে খরুচে বোলিং আছে কেবল একটি। তাদের ৮ ওভার থেকে এসেছে ১০৪ রান!
৪৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। ৩২ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৪/৬ (রাহুল ৫০, রোহিত ২, কোহলি ৬৪*, সূর্যকুমার ৩০, পান্ডিয়া ৫, কার্তিক ৭, আকসার ৭, অশ্বিন ১৩*; তাসকিন ৪-০-১৫-০, শরিফুল ৪-০-৫৭-০, হাসান ৪-০-৪৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-৩৩-২)
আর্শদিপ সিংকে দুটি চার মারার পর কট বিহাইন্ড হতে হতে বেঁচে গেছেন লিটন দাস। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ছুঁয়ে যায় ঘাস। পরের বলে আরেকটি চার মারেন লিটন।
২ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ১৪।
ভুবনেশ্বর কুমারকে ছক্কার পর মারলেন দুই চার। এরপর কিপার ও স্লিপের মাঝ দিয়ে আবার পাঠাতে চাইলেন বল। এবার ক্যাচ ছিল দিনেশ কার্তিকের নাগালে। কিন্তু ডাইভ দিয়েও গ্লাভসে নিতে পারেননি তিনি। সে সময় ২৭ রানে ছিলেন লিটন।
৩ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৩০। ১১ বলে লিটনের রান ২৮। ৭ বলে ২ রানে ব্যাট করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
মোহাম্মদ শামির বলে চারের পর মারলেন ছক্কা। ২১ বলে হয়ে গেল লিটন দাসের ফিফটি। এক বল পর মারলেন আরেকটি চার।
পাওয়ার প্লেতেই ডানহাতি এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান করে ফেললেন ৫৬ রান! ২৪ বলের ইনিংসে এখন পর্যন্ত তিন ছক্কার সঙ্গে সাতটি চার মেরেছেন লিটন।
আরেক পাশে বেশ ভুগছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু লিটনের ব্যাটে আড়ালেই পড়ে গেছে তা।
পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬০ রান করেছে বাংলাদেশ। ৫৬ রানে খেলছেন লিটন। ১২ বলে শান্তর রান ৪।
৩২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে দল ও উদ্বোধনী জুটির রান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান হয়েছে বাংলাদেশের। ৩৩ ম্যাচ পর শুরুর জুটিতে পঞ্চাশ পেয়েছে তারা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন লিটন দাস ও নাইম শেখ। তারপর পেল এই প্রথম।
লিটন দাসের ঝড় থামাতে পারছিলেন না ভারতীয় কোনো বোলার। সেটা থামাল বৃষ্টি। খেলা আপাতত বন্ধ।
৭ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৬৬।
ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে এই সময়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৪৯ রান। সাকিব আল হাসানের দল ১৭ রানে এগিয়ে।
বৃষ্টি কখনও কমছে, জাগছে খেলা শুরুর আশা। কখনও বাড়ছে, ফিরে আসছে আর মাঠে নামতে না পারা শঙ্কা। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ওভার কাটা।
বৃষ্টিতে কমল চার ওভার। ১৬ ওভারে বাংলাদেশের চাই ১৫১ রান। শেষ ৯ ওভারে তাদের করতে হবে ৮৫ রান।
খেলা শুরুর পর প্রথম বলেই সিঙ্গেল নেওয়ার পথে স্লিপ কেটে পড়ে গেলেন লিটন দাস। ব্যথা পেলেন কব্জিতে।
বৃষ্টির পর প্রথম ওভারে উইকেট হারাল বাংলাদেশ। রান আউট হয়ে ফিরলেন লিটন দাস। লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রো বেলস ফেলে দেওয়ার সময় বেশ দূরে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ঘাসের ওপর দিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন লিটন। সে কারণেই হয়তো এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগলে আর পেরে ওঠেননি।
২৭ বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে ৬০ রান করেন লিটন।
৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৭৪। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী সাকিব আল হাসান।
অনেকক্ষণ ধরে আছেন উইকেটে কিন্তু টাইমিং করতে পারছেন না। এদিন রান প্রয়োজন ওভার প্রতি ১০ করে। তাই করণীয় বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর। আগের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে ছক্কা মারার পর পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করলেন মোহাম্মদ শামির বিপক্ষে। এবার পারলেন না, ধরা পড়লেন সীমানায়।
২৫ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ২১ রান করেন শান্ত।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮৮। ক্রিজে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী আফিফ হোসেন।
১১ ও।ভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৯৯। শেষ ৫ ওভারে ৫২ রান চাই বাংলাদেশের। ক্রিজে আছেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন।
আবার খেলা শুরু হওয়ার পর সেভাবে গতি পাচ্ছে না বাংলাদেশের ইনিংস। নাজমুল হোসেন শান্তর মতো ছক্কার চেষ্টায় ফিরে গেলেন আফিফ হোসেন ও সাকিব আল হাসানও।
আর্শদিপ সিংকে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন আফিফ। অনায়াসে ক্যাচ নেন সূর্যকুমার যাদব। একই চেষ্টায় বিদায় হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
১২ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১০১। ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি ও নুরুল হাসান সোহান।
প্রয়োজন বড় শট, বাউন্ডারি। তখন কি না একের পর এক ডট বল খেলছেন ব্যাটসম্যানরা। এলোপাথারি শট খেলে বিলিয়ে আসছেন উইকেট। সেই মিছিলে যোগ দিলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও মোসাদ্দেক হোসেনও।
হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলে ইয়াসির ধরা পড়লেন পয়েন্টে। ৩ বলে ইয়াসির তিনি ১ রান।
ক্রিজে গিয়েই দারুণ এক ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক হোসেন। এক বল পরেই স্টাম্প ছেড়ে মারার চেষ্টায় হয়ে যান বোল্ড। ৩ বলে তিনি করেন ৬।
১৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১০৮। জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৪৩ রান চাই তাদের।
দারুণ চেষ্টা করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ। কিন্তু তাদের অসাধারণ লড়াইয়ের পরও পেরে উঠল না বাংলাদেশ। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে হেরে গেল ৫ রানে।
বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৬ ওভারে ১৫১ রান। সাকিব আল হাসানের দল থামল ১৪৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৪/৬ (রাহুল ৫০, রোহিত ২, কোহলি ৬৪*, সূর্যকুমার ৩০, পান্ডিয়া ৫, কার্তিক ৭, আকসার ৭, অশ্বিন ১৩*; তাসকিন ৪-০-১৫-০, শরিফুল ৪-০-৫৭-০, হাসান ৪-০-৪৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-৩৩-২)
বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৫১) ১৬ ওভারে ১৪৫/৬ (শান্ত ২১, লিটন ৬০, সাকিব ১৩, আফিফ ৩, ইয়াসির ১, সোহান ২৫*, মোসাদ্দেক ৬, তাসকিন ১২*; ভুবনেশ্বর ৩-০-২৭-০, আর্শদিপ ৪-০-৩৮-২, শামি ৩-০-২৫-১, আকসার ১-০-৬-০, অশ্বিন ২-০-১৯-০, পান্ডিয়া ৩-০-২৮-২)
ম্যাচ টাই করতে শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ছয় রান। কিন্তু আর্শদিপ সিংয়ের ইয়র্কার লেংথের ডেলিভারিতে নুরুল হাসান সোহান নিতে পারেন কেবল সিঙ্গেল।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। একটি করে ছক্কা-চারে তারা নিতে ১৪ রান।
১৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন কিপার-ব্যাটসম্যান সোহান। একটি করে ছক্কা ও চারে ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ।
লিটন দাস অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংসে দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়ার পর বাকি ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব ছিল সেটা টেনে নেওয়া। সেটা খুব একটা ভালোভাবে করতে পারেননি তারা।
একই ওভারে ফেরেন দুই ব্যাটিং ভরসা আফিফ হোসেন ও সাকিব আল হাসান। পরে আবার একই ওভারে বিদায় নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও মোসাদ্দেক হোসেন। সেখানেই ম্যাচ থেকে বেশ দূরে সরে যায় বাংলাদেশ।
এরপরও চেষ্টা করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ। তবে মেলাতে পারেননি কঠিন সমীকরণ।
ভারতীয় বোলিং গুঁড়িয়ে ২৭ বলে ৬০। তিন ছক্কার সঙ্গে সাত চার। কোনো বোলার একটুও ভাবাতে পারেননি তাকে। বরাবরের মতোই অনিন্দ্য সুন্দর ব্যাটিং। স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ে কেড়ে নিলেন মন। গড়ে দিলেন ভিত।
এরপরও জিততে পারল না বাংলাদেশ। হারাল ভারতকে হারানোর অনেক বড় সুযোগ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৯ ওভারে ৮৫ রান খুব কঠিন কোনো সমীকরণ নয়। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৫ ওভারে ৫২ রানও করতে না পারার কোনো কারণ নেই। তবুও হারের পথ বের করে ফেললেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
তাদের নিদারুণ ব্যর্থতায় শেষ চারের আশা প্রায় শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের।
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে শীর্ষে উঠে গেল ভারত। ৪ ম্যাচে রোহিত শর্মাদের পয়েন্ট ৬। ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে বাংলাদেশ। পরের তিনটি স্থানে আছে যথাক্রমে জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।
ভারতের বিপক্ষে আমরা সব সময়ই আশা জাগাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারি না, সাকিবের সরল উক্তিতে মিশে থাকল অনেক কিছু। হতাশা, অতৃপ্তির সঙ্গে উঠে এলো বাস্তবতাও। আরও একবার প্রতিবেশী দেশটিকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল।
ব্যবধান স্রেফ ৫ রান। ব্যাটিংয়ে আরেকটু মাথা খাটাতে পারলে, ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুড়ে আসার প্রতিযোগিতায় না নামলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতেই পারত।