শেষ ওভারে একের পর সতীর্থ আত্মঘাতী শট খেলে দলকে বিপদে ফেললেও জয়ের বিশ্বাস হারাননি তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
Published : 15 Jul 2023, 12:12 AM
বেঙ্গালোরের দুঃসহ স্মৃতি তো মনে পড়তে বাধ্যই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রান করতে না পারার সেই বেদনা বাংলাদেশকে পোড়াবে হয়তো আরও বহু বছর। মুঠো থেকে জয় ফেলে দেওয়ার ঘটনা এদেশের ক্রিকেটে আছে আরও কিছু। সব ম্যাচগুলিই কম-বেশি বারবার উঁকি দিচ্ছিল শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ১৫ হাজার দর্শকে ঠাসা মাঠের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছিল একটি শঙ্কায়- তবে কী আরও একবার!
তবে সেই শঙ্কা একজনকে পেয়ে বসেনি। তিনি বিশ্বাস হারাননি। অন্তত তার নিজের দাবি সেরকমই। তাওহিদ হৃদয় বিশ্বাস করে গেছেন, তিনি পারবেন। তারা পারবেন।
সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর যখন জয়টা বহু দূরের পথ, সেই বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার বিশ্বাস হৃদয়ের ছিল। শেষ ওভারে একের পর এক সতীর্থের আত্মঘাতী শটের প্রতিযোগিতায় যখন শঙ্কার কালো মেঘ উড়ছে, হৃদয়ের ভেতরটায় তখনও রোদের ঝলকানি।
বিশ্বকাপজয়ী দলের আর যা-ই হোক, অন্তত বিশ্বাসের কমতি থাকে না। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সেনানী হৃদয়, শামীম হোসেনদেরও তা অটুট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জয় ধরা দিল তাদের সেই বিশ্বাসের পথ ধরেই।
৩২ বলে ৪৭ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংসে দলকে জয়ের কাছ নিয়ে যান হৃদয়। কিন্তু শেষ ওভারে তিনি কেবলই দর্শকের ভূমিকায়। ৬ বলে ৬ রানের সহজ সমীকরণ আরও অনায়াস হয়ে গেল মেহেদী হাসান মিরাজের বাউন্ডারি। এরপর?
টানা তিন বলে মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদের বিদায়। যেন একের পর এক দুঃস্বপ্নের হানা। একটু আগেও যে গ্যালারিতে ছিল গর্জন, সেখানেই নেমে আসে প্রায় স্তব্ধতা।
শেষ পর্যন্ত শরিফুল ইসলামের শটে জয় ধরা দিয়েছে। মিলেছে স্বস্তি। তবে অস্থির ওই সময়টাতেও হৃদয় সুস্থিরই ছিলেন বলে জানালেন। ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, হারের ভয় তাকে আঁকড়ে ধরতে পারেনি।
“আমার বিশ্বাস ছিল সবার ওপরে। কারণ, তাসকিন ভাই, নাসুম ভাই, এমনকি শরিফুল, সবাই খুব ভালো ব্যাটিং করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে তাসকিন ভাই পরপর দুটি চার মারার পর আমরা ম্যাচ জিতে গেছি। শরিফুলের ওপর বিশ্বাস আমার ছিল আগে থেকেই, কারণ ওর সম্ভাবনা আমি জানি। আমরা একসঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে খেলছি এবং সে বড় বড় ছয় মারতে পারে। শরিফুল আসা পর্যন্ত আমার তাই বিশ্বাস ছিল। শরিফুলকে একটা কথাই বলেছিলাম, ‘ব্যাটে বল না লাগলেও দৌড়াবি।’ পরে শেষদিকে বলেছি, ‘ম্যাচটি তুই-ই জেতাবি।”
“আমি নরম্যাল ছিল। কারণ জানতাম, ২ রান লাগে মাত্র। একটা বলের ব্যাপার। বল ব্যাটে লাগলেই ১-২ রান হয়ে যাবে। সেই সময়টায় শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। যেহেতু নন স্ট্রাইকে ছিলাম, চেষ্টা করেছি আমার পার্টনারদের যতটুকু ইনফরমেশন দেওয়া যায় যে বোলার কী বল করতে পারে। এটুকুই।”
শেষে অমন ভজকট পাকানোর আগে ইনিংসের শুরুটাও বাংলাদেশের জন্য ভালো ছিল না। পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান আসেনি। শুরুর চার ব্যাটসম্যান ভালো করতে পারেননি। একাদশ ওভারে যখন সাকিব বিদায় নেন, দলের রান ৪ উইকেটে ৬৪। শামীম হোসেনকে নিয়ে হৃদয়ের ম্যাচ জেতানো জুটির শুরু সেখান থেকেই।
৮ ওভারে যখন প্রয়োজন ৭৬ রান, আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের এক ওভারে আসে ২১ রান। হৃদয় বললেন, অমন একটা ওভারের অপেক্ষাই তারা করছিলেন তখন।
“শামীমকে একটি কথাই বলেছিলাম, এরকম ম্যাচ আমরা অনেক জিতিয়েছি। হতে পারে সেটা ঘরোয়াতে। যেহেতু আমরা মিডল অর্ডারে ব্যাট করি, এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি অনেক। ওকে এটাই বলেছিলাম যে একটি-দুটি ওভারে মোমেন্টাম আনতে পারলেই খেলাটা ঘুরে যাবে। আমরা সেটিই করতে পেরেছি। মাঝে দুটি ওভারেই মোমেন্টাম বদলে গেছে।”
“আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি এবং সবসময় একটা ব্যাপার মাথায় ছিল যে, পরিস্থিতি যেমনই আসুক, পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী আমরা কাজ করব।”
সেটি তারা পেরেছেন ভালোভাবেই। ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটিই দলকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের কাছে। শামীম যদিও কাজ শেষ করতে পারেননি। হৃদয় ফিরেছেন জয়কে সঙ্গী করেই।
সেই তৃপ্তি তার আছে। শুধু এমন ম্যাচ জয়ের আনন্দই তার প্রাপ্তি নয়, এই জয়কে ভবিষ্যতের জন্য দারুণ সঞ্চয়ও মনে করেন তিনি।
“এই ধরনের ম্যাচ যার সঙ্গেই জিতি না কেন, আত্মবিশ্বাস প্রতিটি খেলোয়াড়কেই দেবে। কারণ, এরকম ম্যাচ কমই হয়। আমি যেহেতু ছিলাম, এরকম জায়গা থেকে ম্যাচ শেষ করে আসতে পেরেও অনেক ভালো লাগছে। কারণ এরকম পরিস্থতি সবসময় আসে না। যখন এরকম সুযোগ আসে, তখন এটা শেষ করতে পারার লক্ষ্য প্রতিটি ব্যাটসম্যানের থাকে। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।”