ব্যাটসম্যানের মন খারাপ হবে ভেবে উদযাপন করেন না হাসান

ফাস্ট বোলারদের অনেক সময় বুনো ও খ্যাপাটে উদযাপনে মেতে উঠতে দেখা গেলেও বাংলাদেশের তরুণ এই পেসার ব্যতিক্রম।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 02:20 PM
Updated : 23 March 2023, 02:20 PM

ফাস্ট বোলার মানেই বুনো ও খ্যাপাটে। বোলিংয়ে যেমন, তেমনি শরীরী ভাষাতেও থাকে বারুদ। হাসান মাহমুদ এখানে ব্যতিক্রম। তার বোলিংয়ে আগুনের হলকা থাকলেও তার কথা, মাঠে তার বিচরণ, সবকিছুই যেন বইয়ে দেয় শীতল হাওয়া। এমনকি উইকেটের উদযাপনও সেভাবে করেন না তিনি, উদযাপন দেখে যদি ব্যাটসম্যানের খারাপ লাগে!

ফাস্ট বোলারদের আগ্রাসনের বড় একটা প্রকাশ থাকে উইকেটের উদযাপনেও। আউট করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আর দাপট তারা সাধারণত বুঝিয়ে দিতে চান উদযাপন দিয়েই। কত জনের কত ‘ট্রেড মার্ক’ উদযাপনও থাকে। হাসানের নেই তেমন কিছুই। এমনকি প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার মুহূর্তেও তাকে দেখা যায়নি তেমন কিছু করতে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে শেষ ওয়ানডেতে বৃহস্পতিবার তিনি ৫ উইকেট নেন ৩২ রানে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তো বটেই, স্বীকৃত ক্রিকেটেই ২৩ বছর বয়সী পেসার প্রথমবার পেলেন এই স্বাদ। অথচ মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে ‘হাই ফাইভ’ ছাড়া তেমন বিশেষ কিছু করতে তাকে দেখা যায়নি।

পরে ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা পেসারকে জিজ্ঞেস করা হলো উদযাপন না করার কারণ। তার ছোট্ট উত্তর, “করি না (উদযাপন)… জাস্ট এমনিতেই…।”

কিন্তু বোলারদের মূল লক্ষ্যই তো উইকেট শিকার করা। প্রতিটিই উইকেটই অনেক আরাধ্য! এটুকু বলার পর কারণটা একটু করে বললেন তিনি, “ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর উদযাপন করলে ও আরেকটু মন খারাপ বেশি হতে পারে। এটা ভেবে করি না (উদযাপন)…।”

জীবনে প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার প্রতিক্রিয়াতেও তার নেই আনন্দের আতিশয্য, “এটা আমার প্রথম ৫ উইকেট। ঘরোয়াতেও কখনও ৫ উইকেট পাওয়া হয়নি আগে। সবমিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।”

তবে মৃদুভাষী আর আচরণে ম্রিয়মান হলেও তার বোলিংয়ে ধার কম নয়। সেটা আইরিশ ব্যাটসম্যানরা এ দিন যেমন বুঝেছেন, সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বুঝেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরাও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই টি-টোয়েন্টিতে সিরিজে তার ভূমিকা ছিল ভিন্ন।

ওই সিরিজে তিনি বোলিংয়ে এসেছেন পাঁচ ও চার নম্বর বোলার হিসেবে। শেষের ওভারগুলোতে দারুণ বোলিং করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ম্যাচ শুরু করে হাসানকে দিয়েই। তিনি এই দায়িত্বও দারুণভাবে পূরণ করেন নতুন বলে তিন উইকেট নিয়ে। পরে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে উইকেট নেন আরও দুটি।

হাসান জানালেন, এই ভূমিকা আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। সেই অনুযায়ীই তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন।

“আমাকে আগেই বলা হয়েছিল শেষ ম্যাচে খেলানো হবে এবং নতুন বলে শুরু করতে হবে। ওটারই প্রস্তুতি নিয়েছি গত দুই দিন ধরেই। আসলে টি-টোয়েন্টিতে একরকম মাইন্ড সেট-আপ, ওয়ানডেতে আরেকরকম। কীভাবে শুরু করছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি চেষ্টা করছি দুই ফরম্যাটেই ভালো বোলিং করার জন্য, ফোকাসড থাকার জন্য।”

হাসানের ৫ উইকেটের সঙ্গে এ দিন তাসকিন আহমেদ নেন ৩ উইকেট, ইবাদত হোসেন চৌধুরি ২টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সবকটি পেস বোলিংয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ।

পেসারদের এই সাফল্য শুধু এই ম্যাচে বা একটি সংস্করণেই নয়। তিন সংস্করণেই গত বছর দুই-তিন ধরে উন্নতির ছাপ পেসারদের পারফরম্যান্সে। পেস আক্রমণের গভীরতাও বেড়েছে আগের চেয়ে। দলের অভিজ্ঞতম পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও দলে অপরিহার্য নন এখন।

পেসারদের এই সাফল্যকে পেসারদের ঘাম ঝরানোর ফসল বলে মনে করেন হাসান। পরস্পরকেও তারা সহায়তা করেন দারুণভাবে।

“আমাদের যে ফাস্ট বোলাররা আছে, আমরা কয়েক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করছি। ভালো একটা অবস্থায় আছি আমরা সবাই। চেষ্টা করছি আরও উন্নতির।”

“আমরা একটা কথাই বলি যে সবাই সবার সেরাটা দেবে এবং চেষ্টা করে যাবে। তাসকিন ভাই ও অন্যরা আমার সিনিয়র, তারা চেষ্টা করেন আগলে রাখার। ভালো দিকগুলো বলেন, খারাপগুলো এড়াতে বলেন। কী কী দরকার ম্যাচে, কী করতে হবে, কী করলে উন্নতি হবে, এসব বলেন।”

পেস বোলিংয়ের এই বিপ্লবে বড় ভূমিকা আছে বাংলাদেশের আগের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ও এখনকার পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের। গত এক বছর ধরে দায়িত্বে আছেন ডোনাল্ড, পেসারদের স্কিল, মানসিকতা ও সার্বিক উন্নতি দৃশ্যতার তার সময়ে ভালোভাবেই। হাসানও সেই কৃতিত্ব দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তিকে।

“তিনি তার অভিজ্ঞতা ভাগভাগি করেন, তার ধারণার কথা বলেন… কীভাবে ক্রিকেটে টিকে থেকেছেন, কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে বোলিং করতে হবে, কীভাবে নিজের সামর্থ্যে আস্থা রাখতে হবে, এগুলো ভাগাভাগি করেন। আর স্কিলের ব্যাপারে তো তিনি অসাধারণ। ভালো কাজ করেন, আমাদের নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেন।”

আপাতত সবকিছুই চলছে সঠিক পথ ধরে। তবে হাসানের ক্যারিয়ারে এখনও চলছে হাঁটি হাঁটি পা পা। মোটে ৮টি ওয়ানডে ও ১৩ টি-টোয়েন্টি খেললেন তিনি। আরও অনেক কঠিন পরীক্ষা আসবে, আরও অনেক শেখার আছে তার। তবে আপাতত তার যা লক্ষ্য, সেটি জানিয়ে রাখলেন অল্প কথায়।

“উন্নতি বলতে গেলে… ফিটনেসে একটু উন্নতি করতে হবে এবং বোলিং আরেকটু গোছানো হতে হবে, শেপ-এ আনতে হবে নিজেকে।”