Published : 22 Dec 2022, 05:59 PM
লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম বল। একটু গা গরম করে নেওয়া, নতুন করে থিতু হওয়ার পালা তখন। কিন্তু সাকিব আল হাসানকে দেখে মনে হলো, ম্যাচ জিততে বুঝি এক বলে চার বা ছয় লাগে বাংলাদেশের! উড়িয়ে মারলেন তিনি, মিড অফে সহজ ক্যাচ নিলেন চেতেশ্বর পুজারা। দুই হাত ছড়িয়ে উদযাপনে মেতে উঠলেন উমেশ যাদব। এত দ্রুত সাফল্য ধরা দেবে, ভারতে পারেননি হয়তো তিনি নিজেও। তাই তো সতীর্থরা কাছে এসে জড়িয়ে ধরতেই হাসি আর থামে না ভারতীয় পেসারের।
দৃশ্যটি ভারতের জন্য যতটা আনন্দের, বাংলাদেশের জন্য ছিল ঠিক বিপরীত। মিরপুরের গ্যালারির হাজারখানেক দর্শক তো বটেই তখন হতাশায় নিশ্চুপ, ড্রেসিংরুমে বসে থাকা ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স স্তব্ধ অধিনায়কের এমন শটে। দিনের খেলা শেষে সাকিবের এমন আউটের ব্যাখ্যা দিতেও খানিকটা সময় নেন এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্বিঘ্নে প্রথম ঘণ্টা কাটায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ঘণ্টার শুরুতেই চার বলের ব্যবধানে সাজঘরের পথ ধরেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর বেশ চমক জাগিয়ে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক সাকিব।
১১৯ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে স্রেফ পঞ্চমবার চারে নামলেন তিনি। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিডন্স জানান, নিজের সিদ্ধান্তেই ওপরে নেমেছেন সাকিব।
“সাকিব নিজেই (চার নম্বরে) যেতে চেয়েছে। তার মনে হয়েছে সে ফর্মে আছে। তাই বাকিদের নিচে ঠেলে ব্যাটিং অর্ডার লম্বা করার পরিকল্পনা ছিল। আমরা দ্রুত উইকেট হারাচ্ছিলাম। সেটি থামাতে চেয়েছে সে। আমার মতে, এটি ভালো যে অধিনায়ক নিজে বিশ্বাস রাখে, সে করতে পারবে। যদিও আজকে তা কাজে লাগেনি।”
২০১৮ সালের জুলাইয়ের পর প্রথমবার চার নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে নামলেও সাকিবের ব্যাটিংয়ে দায়িত্বশীলতার ছাপ দেখা যায়নি। বরং শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে খেলে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টাই বেশি করেন তিনি।
জয়দেব উনাদকাট ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে কয়েকবার পরাস্ত হওয়ার পর সাময়িক সফলতাও পান সাকিব। ২২তম ওভারে অশ্বিনকে মারেন চার ও ছক্কা। জোড়া বাউন্ডারির পরও সাকিবের ব্যাটিংয়ে স্থিরতা দেখা যায়নি। লাঞ্চ বিরতির আগের ওভারে অশ্বিনের বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে অল্পের জন্য স্টাম্পিংয়ের হাত থেকে বাঁচেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে বিরতির পর ফিরে দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আর রক্ষা পাননি। উমেশের প্রথম বলেই অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে শরীরের বেশ দূর থেকেই ড্রাইভের চেষ্টা করেন সাকিব। টাইমিংয়ে হয় গড়বড়। সেশনের শুরুতেই অধিনায়ককে হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে যখন ব্যাটিং কোচ, অবধারিতভাবেই প্রশ্ন ওটে সাকিবের শট নিয়ে। ওই শট খেলার যৌক্তিকতা খোঁজারও চেষ্টা করেন সিডন্স, তবে শেষ পর্যন্ত হতাশা লুকাননি।
“একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এটি হতাশাজনক... সে মনস্তাত্ত্বিক ভুল করেছে, এই তো! পুরো ইনিংসেই সে বারবার উইকেট ছেড়ে এগিয়ে খেলছিল। হয়তো বোলারদের লেংথ পরিবর্তনে বাধ্য করার চেষ্টা ছিল। আমার মনে হয়, তাদের (ভারতের বোলার) বোলিং লেংথ নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছিল সে। তাই লেংথ বদলানোর চেষ্টা করছিল।”
বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের মতে, ওই সময়ে তাড়াহুড়ো না করলে রান করার আরও সহজ সুযোগ পেতে পারতেন সাকিব।
“লাঞ্চ বিরতির ঠিক পরপর বোলারদেরও কিছুটা জড়তা থাকে। সে উইকেটে থাকলে হয়তো কিছু বাজে ডেলিভারি পেত। এটি (লাঞ্চের পর প্রথম বলেই শট খেলা) পুরোপুরি তার সিদ্ধান্ত ছিল। আমার মনে হয় না এখানে কোচের কিছু করার আছে আছে।”
“এটি পুরোপুরি মানসিক বিষয় যে, সে প্রথম বলেই এগিয়ে গিয়ে মারতে চেয়েছে। বাইরে বসে খেলোয়াড়দের এমন ভুল করতে দেখা আমার জন্য খুবই হতাশাজনক। এগুলো পুরোপুরি মনস্ত্বাত্তিক ত্রুটি। এসবের সমাধান কেবল তারা নিজেরাই করতে পারে।”