দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সংযুক্ত আমিরাতকে অনায়াসেই ৩২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
Published : 27 Sep 2022, 07:46 PM
প্রথম ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে কোনোমতে এড়ানো গেছে বিব্রতকর হার। দল জয়ে ফিরলেও তাই অনেক প্রশ্ন রয়েই গেছে। সেগুলোর জবাব খোঁজার আরেকটি সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।
প্রথম ম্যাচে ৭ রানে জেতা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা ব্যাটিং। আফিফ হোসেন ছাড়া আর কারও ব্যাটে নেই ধারাবাহিকতা। যথেষ্ট অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে না ব্যাটিংয়ে।
বোলিংয়ে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন যেন ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ধারাবাহিক ছিলেন না মুস্তাফিজুর রহমান। মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ের জন্যই ১৫৮ রানের পুঁজি নিয়ে জিতে যায় বাংলাদেশ।
ফিল্ডিংয়েও নেই উন্নতির কোনো ছাপ। হাত থেকে ছুটেছে দুটি সহজ ক্যাচ। আরেকটু হলেই দিতে হতো এর চড়া মাশুল। উন্নতির জায়গা তাই অনেক।
আবারও টসে জিতলের সংযুক্ত আরব আমিরাত অধিনায়ক। এবারও তিনি নিলেন ফিল্ডিং। ফের দুবাইয়ে আগে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে।
দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। দুই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের জায়গা একাদশে এসেছেন দুই গতিময় পেসার ইবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
বাংলাদেশ একাদশ: নুরুল হাসান সোহান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, ইয়াসির আলি চৌধুরি, নাসুম আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ।
৭ রানে হেরে যাওয়া দলে একটি পরিবর্তন এনেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। জুনাইদ সিদ্দিকের জায়গায় দলে এসেছেন অভিজ্ঞ পেসার জহুর খান।
সংযুক্ত আরব আমিরাত একাদশ: সিপি রিজওয়ান (অধিনায়ক), ভ্রিতিয়া অরভিন্দ, চিরাগ সুরি, মুহাম্মদ ওয়াসিম, বাসিল হামিদ, আরিয়ান লাকরা, জাওয়ার ফরিদ, কার্তিক মিয়াপ্পান, জহুর খান, সাবির আলি, আয়ান খান।
ম্যাচের প্রথম ওভারে ব্যাটের কানায় লেগে সৌভাগ্যের বাউন্ডারিতে খোলেন রান খাতা। তৃতীয় ওভারে ফ্রি-হিট ওড়ান ছক্কায়। তবে এরপর আর বেশি দূর যেতে পারলেন না সাব্বির রহমান। বিদায় নিলেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
আরিয়ান লাকরা শুরু থেকেই ভোগাচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। বাঁহাতি স্পিনারের আঁটসাঁট বোলিংয়ে অস্বস্তিতে থাকা সাব্বির পা সামনে বাড়িয়ে লেগে ঘুরানোর চেষ্টা করেন। তবে বলের লাইন মিস করে হয়ে যান এলবিডব্লিউ।
একটি করে ছক্কা ও চারে ৯ বলে ১২ রান করেন সাব্বির। আগের ম্যাচে ফিরেছিলেন শূন্য রানে।
৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ২৮। ক্রিজে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী লিটন দাস।
পাওয়ার প্লে মোটামুটি কাজে লাগাতে পারল বাংলাদেশ। সাব্বির রহমানকে হারালেও ধরে রাখতে পারল রানের গতি।
৬ ওভারে বাংলাদেশ ১ উইকেটে করেছে ৪৮ রান। ১১ বলে দুই চারে ১৩ রানে ব্যাট করছেন লিটন দাস। মেহেদী হাসান মিরাজ তিন চারে ১৭ বলে খেলছেন ২২ রানে ।
একমাত্র উইকেটটি নেওয়া বাঁহাতি লাকরা ৩ ওভারের স্পেলে দিয়েছেন কেবল ১৪ রান।
শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন লিটন দাস। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাবলীল গতিতে। তবে বড় করতে পারলেন না ইনিংস। বিদায় নিলেন থিতু হয়ে।
তরুণ অফ স্পিনার আরিয়ান আফজাল খানের বলে জায়গা করে নিয়ে অফে খেলেছিলেন লিটন। তবে বের করতে পারেননি গ্যাপ। সহজ ক্যাচ নেন কার্তিক মিয়াপ্পন। ভাঙে ২৮ বল স্থায়ী ৪১ রানের জুটি।
২০ বলে চারটি চারে লিটন করেন ২৫।
সাব্বির রহমানকে নিয়ে ভালো শুরুর পর লিটন দাসের সঙ্গে চল্লিশ ছাড়ানো জুটি গড়া মেহেদী হাসান মিরাজ খেলে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। ছন্দে থাকা আফিফ হোসেন এরই মধ্যে দেখিয়েছেন ঝলক। তাতে বড় সংগ্রহের পথেই রয়েছে বাংলাদেশ।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮৩। ২৫ বলে তিন চারে ৩৩ রানে খেলছেন মিরাজ। দুই চারে ৭ বলে ১২ রান করেছেন আফিফ।
খুব বেশি ডট বল খেলছেন না ব্যাটসম্যানরা। এক-দুই নিয়ে খেলার ফাঁকে ফাঁকে মারছেন বাউন্ডারি। তাতে রান রেট আছে আটের উপরে।
ফুলটস বল, পাঠাতে পারতেন হয়তো যে কোনো জায়গায়। কিন্তু ছক্কার চেষ্টায় আফিফ হোসেন দিলেন ক্যাচ। বাংলাদেশ হারাল ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানকে।
অফ স্পিনার আয়ান আফজাল খানের স্টাম্পে থাকা ফুলটস বলে টাইমিংয়ের চেয়ে গায়ের জোরই যেন বেশি খাটাতে চেয়েছিলেন আফিফ। তাই যতটা দূরের নিতে চেয়েছিলেন পারেননি। সীমানা থেকে সামনের দিকে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন কার্তিক মিয়াপ্পন।
এক ছক্কা ও দুই চারে আফিফ ১০ বলে করেন ১৮ রান।
১১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৯১। ক্রিজে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন।
সাবির আলি বল করলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে। বলের লাইন মিস করে ব্যাটে খেলতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। বিস্ময়করভাবে এলবিডব্লিউ দিয়ে দিলেন আম্পায়ার।
আগের সেরা ৩৮ ছাড়িয়ে প্রথম ফিফটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মিরাজ। তাকে বিদায় নিতে হলো আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।
৩৭ বলে পাঁচ চারে ৪৬ রান করেন মিরাজ। ক্রিজে গিয়েই বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন ইয়াসির আলি।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১২৬।
মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ের পর কমে গেছে রানের গতি। বাউন্ডারির জন্য তাই ঝুঁকি নিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। টাইমিং করতে না পেরে দিলেন এর মাশুল।
লেগ স্পিনার কার্তিক মিয়াপ্পনের বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মোসাদ্দেকের ইনিংস। ২২ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় তিনি করেন ২৭ রান।
১৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৩৭। ক্রিজে ইয়াসির আলির সঙ্গী নুরুল হাসান সোহান।
লম্বা একটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে ঘিরে ইনিংস গড়ে তুললেন অন্য ব্যাটসম্যানরা। তাই কেউই খুব বড় কিছু করতে না পারলেও লড়াই করার মতো একটা পুঁজি পেল বাংলাদেশ।
সবার মিলিত অবদানে ৫ উইকেটে ১৬৯ রান করে সফরকারীরা।
১৩ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ইয়াসির আলি চৌধুরি অপরাজিত থাকেন ২১ রানে। ১০ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে নুরুল হাসান সোহান করেন ১৯ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৯/৫ (মিরাজ ৪৬, সাব্বির ১২, লিটন ২৫, আফিফ ১৮, মোসাদ্দেক ২৭, ইয়াসির ২১*, সোহান ১৯*; সাবির ৩-০-৩৬-১, লাকরা ৩-০-১৪-১, আয়ান ৪-০-৩৩-২, ফরিদ ২-০-১৬-০, মিয়াপ্পন ৪-০-২৯-১, জহুর ৪-০-৪১-০)
তাসকিন আহমেদের বলে কোনোমতে বেঁচে গেলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না চিরাগ সুরি। নাসুম আহমেদকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বোলারের হাতেই ধরা পড়লেন এই ওপেনার।
বাঁহাতি স্পিনারের বলে হাঁটু গেড়ে লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন চিরাগ। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। ক্যাচ নেন নাসুম নিজেই। ১০ বলে এক চারে ৫ রান করেন চিরাগ।
৩ ওভারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রান ১ উইকেটে ৯। ক্রিজে মোহাম্মদ ওয়াসিমের সঙ্গী আরিয়ান লাকরা।
নাসুম আহমেদকে পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়িয়ে ডানা মেলার আভাস দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তবে তাকে দ্রুতই ফিরিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদ।
গতিময় এই পেসারের বল অফে সরে গিয়ে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন ওয়াসিম। ব্যাটে খেলতে পারেননি এই ওপেনার। প্যাডে লাগরে জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার।
দুই ছক্কায় ওয়াসিম ১৬ বলে করেন ১৮।
৬ ওভারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রান ২ উইকেটে ২৮। ক্রিজে আরিয়ান লাকরার সঙ্গী ভ্রিতিয়া অরবিন্দ।
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আক্রমণে এলেন মোসাদ্দেক হোসেন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে আরও নাড়িয়ে দিলেন মন্থর শুরুর করা স্বাগতিকদের।
অফ স্পিনারকে তেড়েফুড়ে মারার চেষ্টায় সহজ ক্যাচ দেন আরিয়ান লাকরা (৯ বলে ৪)। স্টাম্পের বল সরে গিয়ে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান ভ্রিতিয়া অরবিন্দ (৫ বলে ২)।
৭ ওভার শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩০। ক্রিজে চুনদানগাপোয়িল রিজওয়ানের সঙ্গী বাসিল আহমেদ।
দ্রুত চার উইকেট হারানো সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিরোধ গড়েছে চুনদানগাপোয়িল রিজওয়ান ও বাসিল হামিদের ব্যাটে। পঞ্চম ওভারে এই দুই জনে গড়েছেন পঞ্চাশ রানের ব্যাটে। তবে ম্যাচের বিবেচনায় বল খেলেছেন অনেক বেশি- ৪৪টি।
তাই আর উইকেট না হারালেও ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাচ্ছে আমিরাত।
১৪ ওভারে স্বাগতিকদের রান ৪ উইকেটে ৮০। শেষ ৬ ওভারে ৯০ রান চাই তাদের। ২৯ বলে ৩২ রানে খেলছেন হামিদ। ১৬ বলে রিজওয়ানের রান ১৬।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে তো বটেই দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামেই টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটি উপহার দিলেন চুনদানগাপোয়িল রিজওয়ান ও বাসিল হামিদ। ১৯তম ওভারে তাদের বিচ্ছন্ন করলেন ইবাদত হোসেন।
গতিময় পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়েন হামিদ। চারটি চারে ৪০ বলে তিনি করেন ৪২। তার বিদায়ে ভাঙে ৭২ বলে গড়া ৯০ রানের জুটি।
এই ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে পৌঁছান রিজওয়ান, ৩৫ বলে।
১৯ ওভারে আমিরাতের রান ৫ উইকেটে ১২৫।
আগের ম্যাচের মতো ভুগতে হলো না এবার। রান তাড়ায় সেভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সম্ভাবনাই জাগাতে দিলেন না বোলাররা। এর আগে ব্যাটসম্যানরা মিলিত চেষ্টায় এনে দিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। দুই বিভাগেই বেশ উন্নতি করে অনায়াসেই জিতল বাংলাদেশ।
১৬৯ রান তাড়ায় আমিরাত থামল ১৩৭ রানে। দুই ম্যাচের সিরিজ হারল ২-০ ব্যবধানে।
২ ওভারে ৮ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন তাসকিন আহেমদ। আরেক গতিময় পেসার ইবাদত হোসেন ২৪ রান দিয়ে এক উইকেট।
৩৬ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন আমিরাত অধিনায়ক চুনদানগাপোয়িল রিজওয়ান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৯/৫ (মিরাজ ৪৬, সাব্বির ১২, লিটন ২৫, আফিফ ১৮, মোসাদ্দেক ২৭, ইয়াসির ২১*, সোহান ১৯*; সাবির ৩-০-৩৬-১, লাকরা ৩-০-১৪-১, আয়ান ৪-০-৩৩-২, ফরিদ ২-০-১৬-০, মিয়াপ্পন ৪-০-২৯-১, জহুর ৪-০-৪১-০)
সংযুক্ত আরব আমিরাত: ওভারে ১৩৭/৫ (ওয়াসিম ১৮, সুরি ৫, লাকরা ৪, অরবিন্দ ২, রিজওয়ান ৫১*, হামিদ ৪২, ফরিদ ৮*; সাইফ ৩-০-২৬-০, তাসকিন ৪-০-২২-১, নাসুম ৪-০-৩৬-১, ইবাদত ৪-০-২৪-১, মোসাদ্দেক ২-০-৮-২, সাব্বির ১-০-৯-০, মিরাজ ২-০-১২-০)