১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি পারভেজ হোসেন, ১১ রানের জন্য নাঈম ইসলাম।
Published : 19 Dec 2023, 07:27 PM
সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে একবার নব্বই, তিনবার আশি পেরিয়েও কোনো শতক না পাওয়ার আক্ষেপ সঙ্গী হয় মুমিনুল হকের। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে প্রথমবার খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করলেন জাতীয় দলের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। অল্পের জন্য সেই স্বাদ পেলেন না তার সতীর্থ পারভেজ হোসেন। তাদের দল পূর্বাঞ্চল পেল বড় সংগ্রহ।
বিসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম দিন উত্তরাঞ্চলকে ১০৮ রানে গুটিয়ে দেওয়া পূর্বাঞ্চল দ্বিতীয় দিনে থামে ৩৫২ রানে। পায় ২৪৪ রানের বড় লিড।
দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরাঞ্চলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৬৭ রান। ইনিংস হার এড়াতেই এখনও ১৭৭ রান দরকার তাদের।
মুমিনুল ১৬৭ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় খেলেন ১১৭ রানের ইনিংস। হেলমেটে বলের আঘাত পেয়ে বাইরে চলে গিয়ে পরে আবার ব্যাটিংয়ে নামা পারভেজ করেন ৯০ রান। তরুণ এই ওপেনারের ২০০ বলের ম্যারাথন ইনিংসটি গড়া ১২টি চারে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২ উইকেটে ১২২ রান নিয়ে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে পূর্বাঞ্চল। আগের দিন পারভেজ ৬৬ ও মুমিনুল ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
৪৮তম ওভারে পেসার নাহিদ রানার বল ‘ডাক’ করার চেষ্টায় হেলমেটে আঘাত পান পারভেজ। মাঠে অনেকক্ষণ সেবাশুশ্রূষার পর ক্রিজ ছেড়ে যান তিনি। তখন খেলছিলেন ৭৪ রানে।
এরপর উইকেটে যাওয়া শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের বলে বাউন্ডারিতে শতক পূর্ণ করেন তিনি ১৪৮ বলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ২৮তম শতক এটি।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি শাহাদাত। মুরাদের বলে তিনি বোল্ড হন ৮৭ বলে ৫৬ রান করে। পারভেজ এরপর আবার ব্যাটিংয়ে নামেন।
একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ৩০৭ রানের শক্ত অবস্থানে ছিল পূর্বাঞ্চল। কিন্তু মুমিনুলের বিদায়ের পর ধসে নামে তাদের ব্যাটিংয়ে। অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলামকে বেরিয়ে এসে কাট করার চেষ্টায় স্টাম্পড হন মুমিনুল। শতক থেকে ১০ রান দূরে থাকতে নাহিদ রানার লাফিয়ে ওঠা বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন পারভেজ।
ইয়াসির আলি, ইরফান শুক্কুররা পারেননি বেশিক্ষণ টিকতে। পূর্বাঞ্চল শেষ ৬ উইকেট হারায় ৪৫ রানের মধ্যে, এর মধ্যে শেষ ৫ উইকেট পড়ে স্রেফ ৯ রানে!
৬৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে উত্তরাঞ্চলের সফলতম বোলার নাহিদ রানা। স্পিনার মুরাদের প্রাপ্তি ৩টি।
পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে শুরুটা ভালো করেন উত্তরাঞ্চলের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাব্বির হোসেন। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৩ রান। এরপরই ১৪ বল আর ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় তারা।
জয়কে (৩২ বলে ২৪) ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ চৌধুরি। আরেক পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ নিজের পরপর দুই ওভারে এলবিডব্লিউ করে দেন সাব্বির ও আইচ মোল্লাকে। প্রথম ইনিংসে খালেদের প্রাপ্তি ছিল ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১০৮
পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১২২/২) ৯৫.৪ ওভারে ৩৫২ (পারভেজ ৯০, মুমিনুল ১১৭, শাহাদাদ ৫৬, ইয়াসির ২৫, ইরফান ১২, নাসুম ০, রাজা ১, আবু জায়েদ ০, খালেদ ০*; নাহিদ ২২-৩-৬৮-৪, আসাদুল্লাহ ১৭-০-৫৬-১, নাহিদুল ১৬-০-৬৩-২, আবদুল্লাহ ১৪-৩-৩৫-০, মুরাদ ১৮.৪-১-৮৩-৩, আমিনুল ২-০-১৩-০, জয় ৬-০-২৬-০)
উত্তরাঞ্চল ২য় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৬৭/৩ (জয় ২৪, সাব্বির ১৮, আবদুল্লাহ ১৩*, আইচ ০, প্রিতম ৯*; খালেদ ৬-১-২৬-২, আবু জায়েদ ৮-০-২৭-১, নাসুম ৪-০-১২-০, রাজা ১-১-০-০)
নাঈমের শতক হাতছাড়া
আব্দুল হালিমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালালেন নাঈম ইসলাম। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ল কিপারের গ্লাভসে। শেষ জুটির সঙ্গীকে নিয়ে শতকের সম্ভাবনা জাগিয়েও বাজে এক শটে আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন মধ্যাঞ্চলের নাঈম আউট হন ৮৯ রানে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতকের রেকর্ডধারী ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ১৮১ বলের ইনিংসটি গড়া ১৩ চার ও এক ছক্কায়।
এ দিন প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে অল আউট হয়ে ৩৪ রানের লিড পায় মধ্যাঞ্চল। ৬৬ রান করেন মাহিদুল ইসলাম।
দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণাঞ্চলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৪৭ রান। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে এগিয়ে আছে তারা ১৩ রানে।
৩ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে মধ্যাঞ্চল। দিনের প্রথম ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে আউট হন তাইবুর রহমান। পরের ওভারে হালিমের বলে আঙুলে আঘাত পেয়ে ক্রিজে ছেড়ে যান প্রথম দিন ২২ রানে অপরাজিত থাকা নাঈম।
এরপর উইকেটে গিয়ে শুভাগত হোম আউট হন ৪২ বলে ১৭ রান করে। টিকতে পারেননি আবু হায়দার। তার বিদায়ের পর আবার ব্যাটিংয়ে নামেন নাঈম। তিনি ও মাহিদুল গড়েন ৪৫ রানের জুটি।
ফিফটির পর বেশিদূর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি মাহিদুল। এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ১১৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংস গড়া ৯ চারে।
দ্রুত আরও দুজনের বিদায়ের পর সালাউদ্দিন শাকিলের সঙ্গে শেষ জুটিতে শতকের পথে এগিয়ে যান নাঈম। কিন্তু শেষটা হয় তার হতাশায়। শেষ জুটিতে আসে ৪৭ রান।
দক্ষিণাঞ্চলের পেসার সুমন খান ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান নেন সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে চতুর্থ ওভারে শহিদুল ইসলামের শর্ট বলে আঙুলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। তিনে নেমে টিকতে পারেননি ফজলে মাহমুদ রাব্বি। দ্রুত ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুনও। দিন শেষ করেন মার্শাল আইয়ুব ও নাঈম হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২১৪
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৫৩/৩) ৭৪ ওভারে ২৪৮ (নাঈম ইসলাম ৮৯, তাইবুর ০, মাহিদুল ৬৬, শুভাগত ১৭, আবু হায়দার ৫, শহিদুল ১০, আরিফ ৪, শাকিল ১৪*; সুমন ১৬-২-৬৩-২, নাঈম ২৬-৮-৬৬-৩, হালিম ১৫-২-৪৮-২, আসাদুজ্জামান ৮-০-৪৮-০, মইন ৯-২-২২-২)
দক্ষিণাঞ্চল ২য় ইনিংস: ২০ ওভারে ৪৭/৩ (নাবিল ০ রিটায়ার্ড হার্ট, পিনাক ১৪, ফজলে মাহমুদ ৫, মিঠুন ১৩, মার্শাল ৬*, নাঈম হাসান ১*; আবু হায়দার ৩-২-৪-০, শহিদুল ৬-২-৭-১, শুভাগত ৪-১-১১-০, শাকিল ৬-১-১৩-২, আরিফ ১-০-৪-০)