ইনিংস ও ২২২ রানের জয়ে শ্রীলঙ্কাকে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশড করল বাবর আজমের দল।
Published : 27 Jul 2023, 05:29 PM
চার বলের মধ্যে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে ম্যাচ শেষ করে দিলেন নাসিম শাহ। তবে সেটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামানোর কাজ তো আগেই সেরে ফেলেন নোমান আলি! ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে একে একে শিকার করেন তিনি প্রথম ৭ উইকেটই!
এরপর আগুনে বোলিংয়ে শেষটা হলো নাসিমের হাত ধরে। ব্যাটসম্যানদের দাপুটে পারফরম্যান্সের পর বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে লঙ্কানদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিল পাকিস্তান।
কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিনে শ্রীলঙ্কাকে ইনিংস ও ২২২ রানে হারায় বাবর আজমের দল।
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার এটিই। আগেরটি ছিল ১৯৯৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ও ২০৮ রানে।
লঙ্কানদের বিপক্ষে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইনিংস ও ১৭৫ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড।
সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে শুরু থেকেই দাপট দেখায় পাকিস্তান। প্রথম দিনেই শ্রীলঙ্কাকে ১৬৬ রানে থামিয়ে দেয় তারা। পরে আবদুল্লাহ শফিকের দ্বিশতক ও আঘা সালমানের শতকে বৃহস্পতিবার ৫ উইকেটে ৫৭৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দলটি।
৪১০ রানের লিড নিয়ে প্রতিপক্ষকে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা গুঁড়িয়ে দিল ১৮৮ রানে।
প্রথম টেস্টে ৪ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান দুই ম্যাচের সিরিজে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করল। ১৯৯৪ সালের পর লঙ্কানদের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কায় আবার এই স্বাদ পেল তারা।
শেষ দিনের নায়ক নোমান দ্বিতীয় ইনিংসে ৭০ রানে নেন ৭ উইকেট। টেস্টে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ১০৭ রানে ৬ উইকেট। একটা সময় তো ১০ উইকেটের সবকটি নেওয়া কীর্তির দিকে ছুটছিলেন তিনি। কিন্তু রিভার্স সুইংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনীতে শেষ ৩ উইকেট নেন নাসিম।
২০১ রানের ইনিংস খেলা শফিকের হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। গল টেস্টে ৮৩ রান ও ৩ উইকেটের পর এবার অপরাজিত ১৩২ রান করে সালমান হন সিরিজ সেরা।
এদিন ৫ উইকেটে ৫৬৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে দুই ওভার ব্যাটিং করেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় পাকিস্তান। প্রবাথ জয়াসুরিয়ার ওভারে তিন চারের পর এক সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা মোহাম্মদ রিজওয়ান। সরফরাজ আহমেদের কনকাশন সাব হিসেবে নেমে সুযোগটি কাজে লাগান এই কিপার-ব্যাটসম্যান। টেস্ট ফিফটির স্বাদ পান তিনি ১২ ইনিংস পর।
দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার শুরুটা খারাপ ছিল না। নিশান মাদুশকা ও দিমুথ করুনারত্নের ব্যাটে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৯ রান পায় তারা। নোমানের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মাদুশকা বোল্ড হলে ভাঙে প্রতিরোধ। ঝুলিয়ে দেওয়া বল মিডল স্টাম্প থেকে অনেকটা টার্ন করে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।
এরপর শুরু লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। নোমানের দুর্দান্ত বোলিং আর লঙ্কানদের আলগা শটের বহর মিলিয়ে উইকেট পড়তে তাকে নিয়মিত।
লাঞ্চের পর লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নেকে (৪১) ফিরিয়ে দেন নোমান। ইনসাইড আউট শট খেলার চেষ্টায় কাভারে ধরা পড়েন কুসাল মেন্ডিস।
৯৯ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে আরও বিপদে ফেলে দ্রুত বিদায় নেন দিনেশ চান্দিমাল, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। ধনাঞ্জয়াকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে চতুর্থবার পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নোমান। তার সপ্তম শিকার রমেশ মেন্ডিস।
আরেক প্রান্তে বিষাক্ত রিভার্স সুইংয়ে দুর্দান্ত এক স্পেল করেও উইকেট পাচ্ছিলেন না নাসিম। দুইবার আম্পায়ার আউট দিলেও ব্যাটসম্যান রক্ষা পেয়ে যান রিভিউয়ে। রিভার্স সুইং এতটাই বেশি ছিল যে, দুবারই বল বেরিয়ে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে।
৬ ওভারের স্পেল শেষেও তাকে চালিয়ে যান অধিনায়ক বাবর আজম। তাতে কাজ হয়। ১০ বলের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকেই বোল্ড করে দেন ২০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
সতীর্থদের আরেকটি ব্যর্থতার দিনে একাই লড়াই চালিয়ে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২ ছক্কা ও ৭ চারে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করে।
দাপুটে পারফরম্যান্সে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের প্রথম সিরিজটি দারুণ কাটল পাকিস্তানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৬৬
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৫৬৩/৫) ১৩৪ ওভারে ৫৭৬/৫ ডিক্লে. (সালমান ১৩২*, রিজওয়ান ৫০*; আসিথা ২৫-১-১৩৩-৩, মাদুশঙ্কা ১৭-৩-৭৭-০, রমেশ ৩৬-২-১৩৯-০, জয়াসুরিয়া ৫৩-১১-১৯৪-২, ধনাঞ্জয়া ৩-১-১৩-০)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৬৭.৪ ওভারে ১৮৮ (মাদুশকা ৩৩, করুনারত্নে ৪১, মেন্ডিস ১৪, ম্যাথিউস ৬৩*, চান্দিমাল ১, ধনাঞ্জয়া ১০, সামারাবিক্রমা ৫, রমেশ ১৬, প্রবাথ ০, আসিথা ০, মাদুশঙ্কা ০; আফ্রিদি ১২-৫-৩০-০, নাসিম ১৭.৪-৫-৪৪-৩, আবরার ১০-১-৩৪-০, নোমান ২৩-৮-৭০-৭, সালমান ৫-১-৬-০)
ফল: পাকিস্তান ইনিংস ও ২২২ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই টেস্টের সিরিজ ২-০তে জয়ী পাকিস্তান।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবদুল্লাহ শফিক।
ম্যান অব দা সিরিজ: আঘা সালমান।