শেষ তিন ওভারে পাকিস্তান বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম রাখার শাস্তি পেলেও তাতে বড় ব্যবধান হয়েছে বলে মনে করেন না পার্দিক পান্ডিয়া।
Published : 29 Aug 2022, 03:46 PM
মন্থর ওভার রেটে শাস্তি এখন ম্যাচ চলার সময়ই। তাতেই বড় বিপত্তি। এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে একজন ফিল্ডারকে সীমানায় রাখতে না পারা মানে অনেকটাই পিছিয়ে যাওয়া। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যা টের পায় পাকিস্তান। ভারতের জয়ের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার যদিও দাবি, এটি ম্যাচে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেনি। সব ফিল্ডার সীমানায় থাকলেও তিনি অমন শটই খেলতেন।
এশিয়া কাপের ম্যাচে রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন ৩ বলে প্রয়োজন ৬ রান, মোহাম্মদ নওয়াজের বলে ছক্কা মেরে তখন ভারতকে দারুণ জয় এনে দেন পান্ডিয়া। শুধু শেষ ওভারেই নয়, শেষ তিন ওভারে ৩২ রানের কঠিন সমীকরণ মেলান পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা।
তবে ওই তিন ওভারেই একটি বাড়তি সুবিধা পায় ভারত। মন্থর ওভার রেটের কারণে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে চারজনের বেশি ফিল্ডার রাখতে পারেনি পাকিস্তান।
গত জানুয়ারি থেকে নতুন এই নিয়ম চালু করেছে আইসিসি। প্রতিটি ইনিংসেই শেষ ওভারের প্রথম বলটি করার জন্য একটি ‘কাট অফ’ সময় বেধে দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ ওভার শুরু করতে না পারলে তখন যত ওভার বাকি থাকে, পুরোটাই বোলিং করতে হয় বৃত্তের ভেতর ৫ জন্য ফিল্ডার নিয়ে। এই শাস্তির কেতাবি নাম ‘ইন-ম্যাচ পেনাল্টি।’
এই নিয়মের খাড়ায় ভারতও এই ম্যাচে শেষ তিন ওভার বোলিং করে বৃত্তের ভেতর একজন ফিল্ডার বেশি নিয়ে। সেই সুবিধা পাকিস্তান পায় নিজেদের ব্যাটিংয়ে। তবে বাস্তবতা বলছে, প্রথম ইনিংসে এটির প্রভাব যতটা থাকে, পরের ইনিংস আরও বেশি থাকতে পারে। বিশেষ করে, এরকম কঠিন লড়াইয়ের রান তাড়ায় একজন বাড়তি ফিল্ডার বৃত্তের ভেতরে থাকা গড়ে দিতে পারে বড় ব্যবধান।
রান তাড়ার ১৯তম ওভারে এ দিন হারিস রউফের বলে তিনটি বাউন্ডারিতে সমীকরণ নাগালে নিয়ে আসেন পান্ডিয়া। এরপর শেষ ওভারে ওই ম্যাচ জেতানো ছক্কা তো আছেই।
তবে ম্যাচের পর রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে আলাপচারিতায় পান্ডিয়া বললেন, ম্যাচের ওই পরিস্থিতিতে ফিল্ডার কম-বেশি থাকা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।
“(শেষ ওভারে) ৭ রান খুব বড় কিছু মনে হয়নি আমার কাছে। কাল বাঁহাতি স্পিনার ছিল বোলিংয়ে । ৫ ফিল্ডার ভেতরে থাকার কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ ৫ ফিল্ডার কেন, ১০ ফিল্ডার বাইরে থাকলেও আমাকে মারতেই হতো। আমার তাই ওটায় কিছু যায়-আসেনি।”
শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন স্রেফ ৭ রান, প্রথম বলেই নওয়াজকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন রবীন্দ্র জাদেজা। দুটি করে চার-চক্কায় ২৯ বলে ৩৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও তিনি শেষ করতে পারেননি কাজ। নিজের শটের পেছনের ভাবনাও জানালেন জাদেজা।
“আমি ঠিক করেছিলাম প্রথম বলেই ছক্কার চেষ্টা করব। কারণ প্রথম বলে ছক্কা মারলে ম্যাচ ওখানেই শেষ।”
জাদেজাই তখন জানতে চান, তিনি আউট হওয়ার পর পান্ডিয়া চাপ অনুভব করছিলেন কিনা। পান্ডিয়া শোনালেন তার ওই সময়ের ভাবনা।
“পুরো ইনিংসে একবারই আমি বিচলিত হয়েছি, আপনি আউট হওয়ার পর। তবে মাথায় কোনো চাপ সত্যি বলতে আসেনি। কারণ আমার মতে, চাপ বেশি ছিল বোলারের। অপেক্ষায় ছিলাম যে সে একটা ভুল করবে। ফিল্ডিং সে যেভাবে সাজিয়েছিল, তাতে আমরা জানতাম যে সে ‘ব্যাক অব লেংথ’ বল করবে। প্রস্তুত ছিলাম তাই।”
চতুর্থ বলটি সত্যিই একটু খাটো লেংথে করেন নওয়াজ, পুল করে সেটি ছক্কায় পরিণত করেন পান্ডিয়া। ম্যাচ জিতিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন আকাশে।
সবশেষ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ঠিক এই মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিভীষিকাময় এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। বোলিংয়ের সময় পিঠের ব্যথায় তিনি পড়ে যান মাঠে। তাকে মাঠ ছাড়তে স্ট্রেচারে করে। সেই চোট এরপর তাকে ভোগায় অনেক। প্রায় চার বছর পর সেই মাঠে সেই প্রতিপক্ষের সঙ্গেই দারুণ এক জয়ের নায়ক তিনি।
জাদেজা তুলে আনলেন সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ। আবেগ ছুঁয়ে গেল পান্ডিয়াকেও। পাশাপাশি তিনি কৃতিত্ব দিলেন ফিটনেস ট্রেনারসহ সাপোর্ট স্টাফের সদস্যদের।
“আমার সবকিছু মনে পড়ছিল। এখান থেকেই স্ট্রেচারে করে বাইরে গিয়েছিলাম। সেই একই ড্রেসিং রুম…এরপর আজকে এসে কিছুটা অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয়। কারণ যা কিছু হয়েছে, এরপর আজ এরকম সুযোগ পাওয়া দারুণ ব্যাপার।”
“এই ভ্রমণটা অনেক সুন্দর। সেটার ফল আমি পাচ্ছি। কিন্তু আড়ালে থেকে যে লোকগুলো কাজ করেছে, কৃতিত্ব তাদের প্রাপ্য।”