গরমে নাটোরে প্রবাসী, ঝিনাইদহে গরু ব্যবসায়ী, সিরাজগঞ্জে কৃষক এবং মুন্সীগঞ্জে কৃষকসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
Published : 30 Apr 2024, 06:24 PM
দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে নাটোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাদের মৃত্যু হয়।
চলতি মৌসুমে টানা ৩১ দিন ধরে চলা দাবদাহ আরও দুয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া কার্যালয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র গরমের মধ্যে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ভুট্টা তুলতে গিয়ে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে এক সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া ৫০ বছর বয়সি মো. খায়রুল ইসলাম ওই এলাকার মো. আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি ১৫ দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন মো. মশিউর রহমান বলেন, “সৌদী প্রবাসী খায়রুল সকালে শ্রমিকদের সঙ্গে তার ভুট্টার জমিতে কাজ করছিলেন। বেলা ১১টার দিকে তীব্র গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় শ্রমিকেরা তাকে উদ্ধার করে খাজুরা বাজারে আনলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।”
ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী পর্যবেক্ষক মো. নাজমুল হক বলেন, নাটোরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সোমবার নাটোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় গরমে অসুস্থ হয়ে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃত জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২) উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।
প্রতিবেশী মফিজ উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মালিপাড়া থেকে গরু নসিমনে উঠানোর সময় হঠাৎ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর হোসেন। তার মাথায় পানি দেওয়া হয়।
তাকে প্রথমে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, “তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় ধান ক্ষেত পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত জিল্লুর রহমান (৩৫) উপজেলার সলপ ইউনিয়নের চর তাড়াবাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।
সলপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে নিজের ধান ক্ষেত পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের জিল্লুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন।
“আশপাশ থেকে অন্য কৃষকরা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিরাজগঞ্জ সদরে নেওয়ার পথে তিনি মারা যায়।”
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদরে তীব্র তাপপ্রবাহে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ওমর আলী (৬৫) মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মোল্লারচর এলাকার বাসিন্দা এবং বাতেন মাঝি (৬৮) শহরের মানিকপুরের বাসিন্দা।
মৃত বাতেন মাঝির চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, “চাচা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। আজ তিনি জমি বিক্রির কাজে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সেখানে গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তার মাথায় পানি দেই। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শৈবাল বসাক বলেন, “প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে হিটস্ট্রোকে ওই দুজন মারা গেছেন।”
মৃত ওমর আলীর স্বজনদের বরাতে ওই চিকিৎসক বলেন, তীব্র গরমের মধ্যে কৃষক ওমর আলী ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে আসার আগে তিনি মারা যান।
জেলা সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। এই জেলাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। জনসাধারণের প্রতি আহ্বান থাকবে তারা যেন যথাযথ স্বাস্থ্যবার্তা অনুসরণ করে এই গরমে কাজকর্মে যান।
কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করা বা ছায়ায় বসা। তাছাড়া, যারা কৃষিকাজ করেন তাদের কাজগুলো দুপুর ১টার আগে শেষ করা পরামর্শ দেন তিনি।