আফিফ হোসেনকে দূরে না ঠেলে দলের সঙ্গে রাখাই ভালো, বললেন বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ।
Published : 06 Mar 2024, 04:35 PM
সতীর্থ ক্রিকেটারদের অনেকে ব্যস্ত জাতীয় দলের সিরিজে। সেখানে আফিফ হোসেনের সময় কাটছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের জন্য আবাহনী লিমিটেডের অনুশীলনে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা বলের দুই সংস্করণেই জায়গা হারিয়েছেন তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার সুযোগ না পাওয়াটা অবাক করেছে খালেদ মাহমুদকে। অন্তত ওয়ানডে দলে তার থাকা উচিত ছিল বলে মনে করছেন আবাহনী কোচ এই বিসিবি পরিচালক।
আগামী সোমবার শুরুর কথা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। গত কয়েক মৌসুমের মতো এবারও আবাহনীর হয়ে খেলবেন আফিফ। জাতীয় দলের বাইরে থাকায় প্রথম ম্যাচ থেকেই তাকে পাবে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। অথচ সব ঠিক থাকলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই সিরিজেই দলের সঙ্গে থাকার কথা ছিল আফিফের।
গত বছরের ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সফরে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই ইনিংসে তিনি করেছিলেন ১ ও ১৪ রান। এর আগে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়ে খেলেছিলেন ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। তবু পরের দুই ম্যাচে আর একাদশে জায়গা হয়নি তার।
এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পাশাপাশি প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য ঘোষিত দলেও রাখা হয়নি আফিফকে। মাঝে খুলনা টাইগার্সের হয়ে বিপিএলে ১২ ইনিংসে ১২০.৮৬ স্ট্রাইক রেট ও ২৭.৮০ গড়ে ২৭৮ রান করেন তিনি।
মিরপুরের একাডেমি মাঠে বুধবার আবাহনীর অনুশীলনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দলে আফিফের না থাকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন খালেদ মাহমুদ।
“আফিফের কোচ হিসেবে একটা কথা বলতে পারি, যেহেতু আবাহনীতে ওকে অনেকদিন ধরে দেখছি, আমি কিছুটা বিস্মিত যে, ও ওয়ানডে দলে নেই। সবশেষ ওয়ানডেতেও ওর একটা রান ছিল ৩৯ (৩৮)। ও কেন নেই, এই প্রশ্নটা আসলও কিন্তু ...।”
“ছেলেটা কঠোর পরিশ্রম করে, নিবেদিত একজন ক্রিকেটার। লড়াই করতে জানে, খুবই ভালো ফিল্ডার। কিছুটা বিস্ময়কর, তবে যাকে নিয়েছে (তার জায়গায়), সেখানে অবশ্যই নির্বাচকরা চিন্তা করেই নিয়েছে। আমার কিছু বলার নেই।”
জাতীয় দলে জায়গা হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে এখন মনোযোগ আফিফের। বুধবার দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে দেখা যায় তাকে। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে আবাহনীর শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল তার। টপ-অর্ডারে ব্যাটিং করে ৫৫ গড় ও ১১০.৬৭ স্ট্রাইক রেটে সেবার ৫৫০ রান করেন তিনি। বেশ কিছু ম্যাচে দলকে জেতানো ইনিংস খেলেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়েও ২৭ ইনিংসের ছোট্ট ক্যারিয়ারে দলের জয়ে অবদান রাখা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন আফিফ। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাই তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে জাতীয় দলের সঙ্গে রাখাই ভালো হবে বলে মনে করেন বিসিবির এই প্রভাবশালী পরিচালক।
“আমার মত যদি বলতে হয়, আফিফ বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার। অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে বাংলাদেশকে। ওর মতো ছেলেকে যেন আমরা অবহেলা না করি। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। কারণ এই ছেলেরাই বাংলাদেশকে জেতাবে, বিশ্বাস রাখি।”
“এরকম একটা ইয়াং স্টার... আর এখন তো আফিফ অভিজ্ঞ, এমন নয় যে, ও বাচ্চা ছেলে বা ছোট। ভালো-খারাপ দিন আসবে। আমার মনে হয়ে, দূরে না সরিয়ে না রেখে ওকে দলের সঙ্গে রাখাই ওর জন্য ভালো, বাংলাদেশ দলের জন্যও ভালো।”
জাতীয় দলে যেটুকু খেলেছেন আফিফ, নিজের পছন্দের পজিশনে খুব একটা ব্যাটিং তিনি করতে পারেননি। তবে গত মৌসুমের মতো এবারও ঢাকা লিগে তাকে ওপরের দিকে ব্যাটিং করতে দেখা যাবে, নিশ্চিত করলেন আবাহনীর কোচ।
"আফিফ ওপরে ব্যাটিং করতে পারে, এটা সবসময় সবাই জানে। আমিও চেষ্টা করি আবাহনীতে ওকে চার-পাঁচে ব্যাটিং করাতে, যখন যতটা আমি পারি। সবসময় সুযোগ হয় না। গত বছর সে চার নম্বরে ব্যাটিং করেছে। দারুণ খেলেছে। আমাদের কিছু ম্যাচও জিতিয়ে।”
“প্রিমিয়ার লিগে সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হয়, কঠিন ক্রিকেট হয়। সেখানে সে রান করেছে। হ্যাঁ, সে প্ররে ব্যাটিং করত চায়, স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে চায়। হাথুরুর (কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে) সঙ্গে কী আছে, এটা তো আমি বলতে পারব না আসলে।"
আবাহনীর আরেক ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই সিরিজের দলেই আছেন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে হতাশ করলেও তার বোলিংয়ে মুগ্ধ খালেদ মাহমুদ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৪ ওভারে ৩২ রান খরচ করে কুসাল মেন্ডিসের উইকেট নেন রিশাদ। সাত ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে সেদিনই প্রথম কোটার পুরো ৪ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পান তিনি। এর মধ্যে তৃতীয় ওভারে দেন ১৮ রান। তার বাকি ৩ ওভারে ১৪ রানের বেশি নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও অবদান রাখার সুযোগ ছিল রিশাদের। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণে প্রথম বলে তিনি ছিলেন স্ট্রাইকে। দাসুন শানাকার লো ফুল টসে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের নিচের দিকে লেগে মিড অফে ধরা পড়েন রিশাদ। ওই বলে বাউন্ডারি মারতে পারলে ভিন্ন হতে পারত ম্যাচের গল্প।
সেদিন না পারলেও রিশাদের সামর্থ্যে পূর্ণ আস্থা আছে খালেদ মাহমুদের। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের মতে, অনেক দূর যাবেন ২১ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার।
“রিশাদ লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হবে, আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশকে অনেক বছর সার্ভিস দেবে। তবে ওর খেলায় যেন জড়তা না থাকে, সাবলিল ক্রিকেট যেন খেলে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও ও অনেক ভালো, বড় বড় ছয় মারতে পারে আমরা দেখেছি। সবশেষ ম্যাচে আমার কেন যেন মনে হয়েছে, রিশাদ চাপ নিতে পারেনি। চাপমুক্ত খেলতে হবে। যে দুইটা বল খেলেছে, একটা ঝয় মেরে দিতে পারলে খেলাটা সহজ হয়ে যেত।”
“ছেলেটার মধ্যে সেই সামর্থ্য আছে। আমি মনে করি, রিশাদ অবশ্যই এর চেয়ে আরও ভালো করবে। এখন তো মাত্র শুরু করেছে। খেলছে। প্রথম ম্যাচে লেগ স্পিনার হিসেবে পারফরম্যান্স খুবই ভালো ছিল। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়েছে, এরকম ফ্ল্যাট উইকেটে। আমার বিশ্বাস, রিশাদ এখান থেকে অনেক দূর যাবে অবশ্যই।”