কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের মতে, বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার জন্য যোগ্যতার প্রমাণ যথেষ্টই দিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান।
Published : 31 Dec 2023, 02:36 PM
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বের পরীক্ষা আপাতত শেষ। তার অধিনায়কত্ব মূল্যায়ন করার পালা চলছে। সামনে কোনো একটা সময়ে আসবে সিদ্ধান্ত। তবে সেই সিদ্ধান্তের আগেই তাকে নিজের ভোট আবারও দিয়ে রাখলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ কোচের মতে, পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ প্রবলভাবেই দিতে পেরেছেন শান্ত।
সাকিব আল হাসান চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকায় দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ও এই নিউ জিল্যান্ড সফরে সীমিত ওভারের সিরিজে অধিনায়কত্বের ভার পান শান্ত। তার জন্য এটিকে নেতৃত্বের ‘ট্রায়াল’ হিসেবেও দেখা হচ্ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তিন সংস্করণেই অধিনায়ক সাকিব। তবে সামনেই বদল আসতে পারে কোনো একটি-দুটি বা সব সংস্করণেই।
শান্তর নেতৃত্বে এই মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডকে টেস্টে হারাতে পারে বাংলাদেশ। টেস্ট নেতৃত্বের সূচনায় সেঞ্চুরিও আসে তার ব্যাট থেকে।
পরের টেস্টে তুমুল লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ হেরে যায়। তবে শান্ত নেতৃত্বের দক্ষতার ছাপ রাখেন দুই টেস্টেই।
এরপর নিউ জিল্যান্ড সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্বের পালা। সেখানেও ‘প্রথম’ অর্জনের পালা চলতে থাকে। ওয়ানডে সিরিজ হেরে গেলেও শেষ ম্যাচে দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ, কিউইদের বিপক্ষে তাদের মাঠে ওয়ানডেতে যেটি প্রথম জয়। এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ধরা দেয় দারুণ এক জয়। নিউ জিল্যান্ডের মাঠে এই সংস্করণে যেটি বাংলাদেশের প্রথম জয়।
দলের সাফল্যের কৃতিত্ব অধিনায়ক হিসেবে কিছুটা তো প্রাপ্যই শান্তর। এমনিতেও মাঠে বেশ কুশলী ও কৌশলী ছিলেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব হলেও বেশ আত্মবিশ্বাস ও কর্তৃত্বের ছাপ পড়েছে তার নেতৃত্বে।
গত এক মাসে একাধিকবার শান্তর নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন হাথুরুসিংহে। নিউ জিল্যান্ড সফরের শেষ দিনেও কোচের কণ্ঠে আবার ফুটে উঠল সেই স্তুতি।
সংবাদ সম্মেলনে কোচের কাছে প্রশ্ন ছিল, আগে নিউ জিল্যান্ডে সাফল্য না পেলেও এবার বাংলাদেশের সাফল্যের রহস্য কী। সাফল্যের কারণ হিসেবে ক্রিকেটারদের মানসিকতার পাশাপাশি শান্তর অধিনায়কত্বের কথা নিজ থেকেই বললেন কোচ।
“ক্রিকেটারদের মানসিকতা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই তরুণ দলটির কোনো ভয়ডর নেই। মাঠে নেমে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়।”
“আরেকটা ব্যাপার হলো, শান্তর নেতৃত্ব। সে অসাধারণ ছিল। ট্যাকটিক্যালি সে নিখুঁত ছিল। ক্রিকেটারদেরকে বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব স্বচ্ছ ছিল- তারা কী আশা করতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে তার প্রত্যাশা কী। এছাড়াও এবার মৌলিক ব্যাপারগুলি আমরা আগের চেয়ে লম্বা সময় ধরে ঠিকঠাক করতে পেরেছি।”
সিনিয়র ক্রিকেটারদের বেশ কজন না থাকায় দলের মানসিকতায় এমন পরিবর্তন কি না, এই প্রশ্নও উঠল। হাথুরুসিংহে অবশ্য এই প্রসঙ্গের পালে হাওয়া দিলেন না। তবে দলের মানসিকতার ক্ষেত্রেও শান্তর নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরলেন কোচ।
“আমি যদি এটা নিয়ে কিছু বলি… তাহলে অনুমান করা হয়ে যাবে। সত্যি বলতে, জানি না… এই ছেলেদের মানসিকতার সঙ্গে সিনিয়রদের না থাকার সম্পর্ক নেই।”
“আমার মনে হয়, ওরা নিজেদের ক্রিকেট উপভোগ করতে চায় এবং ড্রেসিং রুমের আবহ আরও ভালো, কারণ শান্তর দিক থেকে যোগাযোগ খুবই স্বচ্ছ। এই ছেলেরা জানে যে, লড়াই করার মতো যথেষ্ট ভালো তারা। এজন্যই কোনো ভয়ডর নেই ক্রিকেটারদের মানসিকতায়।”
প্রশ্নটি এরপর সরাসরিই করা হলো, দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক হিসেবে শান্তকেই কি বিবেচনা করা উচিত বিসিবির? হাথুরুসিংহে উত্তরও দিয়ে রাখলেন সরাসরিই।
“আমার মনে হয়, তারা জোর দিয়েই ভাববে এটা। অবশ্যই এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। তবে শান্তকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সে দিয়েছে।”
মাসের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পরও হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার লড়াইয়ে জোরাল দাবিদার থাকবেন শান্ত।