চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
৯০ রানের ইনিংসে আফগানিস্তানের হয়ে লড়াই করলেন রেহমাত শাহ, তারপরও বড় ব্যবধানে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
Published : 21 Feb 2025, 10:36 PM
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চার জনই স্পর্শ করলেন পঞ্চাশ। তাদের একজন করলেন সেঞ্চুরি। আফগানিস্তানের প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে একজন পঞ্চাশ ছাড়াতে পারলেও বাকিরা যেতে পারলেন না বিশ রানেও। দুই দলের পার্থক্যও ফুটে উঠল এতে। রান তাড়ায় পাত্তাই পেল না আফগানরা। বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুভসূচনা করল প্রোটিয়ারা।
টুর্নামেন্টে দুই দলের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার ১০৭ রানে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে ৩১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২০৮ রানে গুটিয়ে গেছে আফগানিস্তান।
ওয়ানডেতে টানা ৬ ম্যাচ হারের পর জয়ের স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার নায়ক ওপেনার রায়ান রিকেলটন। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ১০৬ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন ২৮ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। পরে দুটি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের সেরা তিনিই।
দলকে তিনশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দিতে এছাড়া ফিফটি করেন টেম্বা বাভুমা (৫৮), রাসি ফন ডার ডাসেন (৫২) ও এইডেন মার্করাম (৫২*)।
আফগানিস্তানের হয়ে ব্যাট হাতে বলতে গেলে একাই লড়াই করেন রেহমাত শাহ। ৯২ বলে ৯০ রানের ইনিংস খেলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস ১৮, দুজনের।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পাঁচ জন হাত ঘুরিয়ে উইকেটের দেখা পান প্রত্যেকে। ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার পেসার কাগিসো রাবাদা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো ছিল না। ষষ্ঠ ওভারে মোহাম্মদ নাবির বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন টনি ডি জর্জি। দ্বিতীয় উইকেটে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন রিকেলটন ও বাভুমা।
আইসিসি টুর্নামেন্টে অভিষেকে রিকেলটন পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ৪৮ বলে, ফিফটি ছুঁতে বাভুমার লাগে ৬৩ বল। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। তাকে ফিরিয়ে ১২৯ রানের জুটি ভাঙেন নাবি। ৭৬ বলে ৫টি চারে গড়া প্রোটিয়া অধিনায়কের ৫৮ রানের ইনিংস।
ফন ডাসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে রিকেলটন সেঞ্চুরি তুলে নেন ১০১ বলে। দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই স্বাদ পেলেন তিনি। পরের ওভারে রান আউটে কাটা পড়ে শেষ হয় তার চমৎকার ইনিংসটি।
রাশিদ খানকে ছক্কায় উড়িয়ে ফন ডাসেন ফিফটি পূর্ণ করেন ৪১ বলে। ৩ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ৪৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস থামান নুর আহমাদ।
প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি ডেভিড মিলার (১৮ বলে ১৪)। সেই কাজটা ভালোমতোই করেন মার্করাম। ৩৩ বলে ফিফটি করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যা দ্রুততম। ইনিংসের শেষ দুই বলে ফাজালহাক ফারুকিকে চার ও ছক্কা মারেন ভিয়ান মুল্ডার।
আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নিতে পারেন নাবি। আরেক তারকা রাশিদ ১০ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় আফগানিস্তান। লড়াইও তাই জমে ওঠেনি কখনোই।
চতুর্থ ওভারে লুঙ্গি এনগিডিকে পুল করার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। ইনিংসের দশম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে বোল্ড করে দেন রাবাদা।
তিনে নেমে রান আউট হয়ে যান সেদিকউল্লাহ আটাল। বাভুমার চমৎকার ক্যাচে অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি ফেরেন কোনো রান না করেই।
৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে অনেকটা দূরে সরে যায় আফগানরা।
পঞ্চম উইকেটে আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন রেহমাত। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে যৌথভাবে ইনিংস সেরা জুটি।
ওমারজাইকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন রাবাদা। নাবি যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ১৩ বলে ১৮ রান করে ফেরেন রাশিদ।
দেখার ছিল শুধু রেহমাত সেঞ্চুরি করতে পারেন কি-না। কিন্তু পারলেন না তিনি। তাকে কিপারের ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন রাবাদা।
‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরদিন লাহোরে আফগানিস্তান খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১৫/৬ (রিকেলটন ১০৩, ডি জর্জি ১১, বাভুমা ৫৮, ফন ডাসেন ৫২, মার্করাম ৫২*, মিলার ১৪, ইয়ানসেন ০, মুল্ডার ১২*; ফারুকি ৮-০-৫৯-১, ওমারজাই ৬-০-৩৯-১, নাবি ১০-০-৫১-২, রাশিদ ১০-০-৫৯-০, নাইব ৭-০-৪২-০, নুর ৯-০-৬৫-১)
আফগানিস্তান: ৪৩.৩ ওভারে ২০৮ (গুরবাজ ১০, ইব্রাহিম ১৭, সেদিকউল্লাহ ১৬, রেহমাত ৯০, শাহিদি ০, ওমারজাই ১৮, নাবি ৮, নাইব ১৩, রাশিদ ১৮, নুর ; ইয়ানসেন ৮-১-৩২-১, এনগিডি ৮-০-৫৬-২, রাবাদা ৮.৩-১-৩৬-৩, মুল্ডার ৯-০-৩৬-২, মহারাজ ১০-০-৩৪৬-১)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রায়ান রিকেলটন