আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে পাকিস্তানের বাজে সূচনা, উইল ইয়াং ও টম ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে কিউইদের শুভ সূচনা।
Published : 19 Feb 2025, 11:13 PM
মিচেল স্যান্টনারের বল সুইপ করার চেষ্টায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন বাবর আজম। বৃত্তের ভেতরে সহজ ক্যাচ নিলেন কেন উইলিয়ামসন। টিভির পর্দায় দেখা গেল, বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন দর্শকরা। দলের সফলতম ব্যাটসম্যানের বিদায়েই যেন সম্ভাব্য পরিণতি বুঝে গেলেন স্বাগতিক সমর্থকরা।
আউট হওয়ার আগে যে ইনিংসটি খেললেন বাবর, সেটি নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন তোলা যায় অনেক। বড় রান তাড়ায় কোনো তাড়নাই দেখা যায়নি তার ব্যাটিংয়ে। মন্থর ফিফটির পর পারেননি তা পুষিয়ে দিতেও। পরে খুশদিল শাহ ঝড়ো ফিফটি করে আরও কিছু দূর এগিয়ে নেন দলকে। কিন্তু বড় পরাজয় এড়াতে পারেননি।
স্বাগতিক পাকিস্তানকে ৬০ রানে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু করে নিউ জিল্যান্ড।
করাচিতে বুধবার টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে উইল ইয়াং ও টম ল্যাথামের সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রান করে কিউইরা।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ স্কোর। ২০১৭ সালে ৩১৯ রান করেছিল ভারত।
বড় লক্ষ্যে বাবর ও খুশদিলের ফিফটির পর ১৬ বল বাকি থাকতে ২৬০ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
এ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ জিতল কিউইরা। এর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজেও স্বাগতিকদের ফাইনালসহ দুই ম্যাচে হারায় তারা।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম খেলতে নেমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দুই বছর ও ৭৯ ম্যাচের অপেক্ষা ঘুচিয়ে ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ল্যাথাম। আসরের প্রথম সেঞ্চুরি করা ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে আসে ১০৭ রান।
টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এক দলের দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির পঞ্চম ঘটনা এটি। সবশেষ গত আসরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। পাওয়ার প্লেতে ফিরে যান ডেভন কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। দলের ৭৩ রানে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ড্যারেন মিচেল। তাদের কেউই দশের বেশি করতে পারেননি।
নাসিম শাহর দারুণ আউট সুইংয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ১ রানে আউট হন উইলিয়ামসন। প্রায় ছয় বছর ও ৩৫ ম্যাচ পর ওয়ানডেতে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন ইয়াং ও ল্যাথাম। শুরু থেকেই দারুণ সব শট খেলতে থাকা ইয়াং ৫৬ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। পরে একই ছন্দে এগিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন ৩২ বছর বয়সী ওপেনার।
তিন অঙ্ক ছুঁয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি ইয়াং। নাসিমের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১১৩ বলের ইনিংসে ১২ চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা। তার বিদায়ে ভাঙে ১২৬ বলে ১১৮ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
এরপর শুরু হয় তাণ্ডব। পঞ্চম উইকেটে জুটি বেধে পাকিস্তানের বোলারদের কচুকাটা করেন ল্যাথাম ও গ্লেন ফিলিপস। তাদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১১৩ রান করে নিউ জিল্যান্ড!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০২২ সালে সবশেষ সেঞ্চুরি করা ল্যাথাম এদিন তিন অঙ্কে পৌঁছান ৯৫ বলে। পঞ্চাশ থেকে শতক পূর্ণ করতে তার লাগে মাত্র ৩৪ বল।
অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন ফিলিপস। মাত্র ৩৪ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি করেন তিনি। ইনিংসের শেষ ওভারে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬১ রানের ইনিংস খেলেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১০৪ বলের ইনিংসে ১০ চার ও ৩ ছক্কা মারেন ল্যাথাম। তার সঙ্গে ফিলিপসের জুটিতে মাত্র ৭৪ বলে আসে ১২৫ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে দুটি শতরানের জুটি এটিই প্রথম।
রান তাড়ায় শুরুতেই খেই হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২২ রান করতে ২ উইকেট হারায় তারা।
ফিল্ডিংয়ে শুরুতে চোট পাওয়ায় লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকেন ফাখার জামান। শেষ দিকে ফিরলেও যথেষ্ট সময় ফিল্ডিং করেননি তিনি। তাই ইনিংসে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামার অনুমতি পাননি বাঁহাতি ওপেনার।
সাউদ শাকিলকে নিয়ে ইনিংস সূচনা করেন বাবর আজম। অনভ্যস্ত পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্বস্তিকর ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ৬ রান করে ফেরেন শাকিল। বাবর তো ছিলেন যেন ঘুমিয়ে। পাওয়ার প্লেতে তার রান ছিল ২৭ বলে ১২।
তিন নম্বরে নেমে হতাশ করেন মোহাম্মদ রিজওয়ানও। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে উইলিয়াম ও'রোকের শেষ বলে পয়েন্টে বাঁ দিকে লাফিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ফিলিপস। ৩ রান করে আউট হন পাকিস্তান অধিনায়ক।
৪৭ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কা কিছুটা সামাল দেন বাবর ও ফাখার। কিন্তু তারা রানের গতি বাড়াতে পারেননি। ২১তম ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে বোল্ড হন ৪১ বলে ২৪ রান করা ফাখার। দলের সংগ্রহ তখন মাত্র ৬৯ রান।
পাঁচ নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণ করেন সহ-অধিনায়ক সালমান আলি আগা। কিন্তু বাবর যেন ভুলেই যেন তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাদের সামনে।
চতুর্থ উইকেটে ৫৯ বলে আসে ৫৮ রান। যেখানে সালমানের অবদান ২৮ বলে ৪২ রান। এই জুটিতে ১৬ রান করতে ৩১ বল খেলেন বাবর।
সালমানের বিদায়ের পর অল্পতেই ফেরেন তাইয়াব তাহির।
বাবর ফিফটি ছুঁতে বল খেলেন ৮১টি। এর মধ্যে ৪৯ বল থেকে রানই করতে পারেননি তিনি! অমন শুরুর পর দলের যখন প্রয়োজন তার কাছ থেকে দ্রুত রান ও বড় ইনিংস, সেই দাবিও মেটাতে পারেননি তিনি। ৯০ বলে ৬৪ রান করে বিদায় নেন তিনি।
পরে একাই লড়াই করেন খুশদিল। সবশেষ বিপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা বাঁহাতি অলরাউন্ডার মাত্র ৩৮ বলে করেন ফিফটি। ও'রোকের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন তিনি। ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৪৯ বলে করেন দলের সর্বোচ্চ ৬৯ রান।
শেষ দিকে নাসিম ও রউফের কিছু বড় শটে আড়াইশ ছাড়ায় পাকিস্তান। পরাজয়ের ব্যবধান তবু বড়। বড় ধাক্কা লাগে তাদের রান রেটেও।
পরের ম্যাচে রোববার পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। পরদিন নিউ জিল্যান্ড লড়বে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২০/৫ (ইয়াং ১০৭, কনওয়ে ১০, উইলিয়ামসন ১, মিচেল ১০, ল্যাথাম ১১৮*, ফিলিপস ৬১, ব্রেসওয়েল ০*; আফ্রিদি ১০-০-৬৮-০, নাসিম ১০-০-৬৩-২, আবরার ১০-০-৪৭-১, হারিস ১০-০-৮৩-২, খুশদিল ৭-০-৪০-০, সালমান ৩-০-১৫-০)
পাকিস্তান: ৪৭.২ ওভারে ২৬০ (শাকিল ৬, বাবর ৬৪, রিজওয়ান ৩, ফাখার ২৪, সালমান ৪২, তাহির ১, খুশদিল ৬৯, আফ্রিদি ১৪, নাসিম ১৩, রউফ ১৯, আবরার ০*; হেনরি ৭.২-১-২৫-২, ও'রোক ৯-০-৪৭-৩, ব্রেসওয়েল ১০-১-৩৮-১, ফিলিপস ৯-০-৬৩-০, স্যান্টনার ১০-০-৬৬-৩, স্মিথ ২-০-২০-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: টম ল্যাথাম