ভারত-ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ
মুম্বাইয়ে শেষ টি-টোয়েন্টিতে আভিশেক শার্মার রেকর্ড গড়া ইনিংসে রেকর্ড গড়া জয় পেল ভারত।
Published : 02 Feb 2025, 10:38 PM
ম্যাচের প্রথম বলে ছক্কায় সাঞ্জু স্যামসন যে সূচনা দলকে এনে দিলেন, সেটিকে পূর্ণতা দিলেন আভিশেক শার্মা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে এই ওপেনার উপহার দিলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। তাতে যে উচ্চতায় উঠল ভারতের স্কোর, তার ধারেকাছে যেতে পারল না ইংল্যান্ড।
পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ রানের জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার একশর বেশি রানে জিতল ভারত। ২০১২ সালে কলম্বোয় বিশ্বকাপের ম্যাচে ৯০ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড। যেকোনো দলের বিপক্ষেই প্রথমবার একশর বেশি রানে হারল ইংল্যান্ড।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোববার ২০ ওভারে ভারত করে ৯ উইকেটে ২৪৭ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যা তাদের সর্বোচ্চ। জবাবে ১০.৩ ওভারে ইংলিশরা গুটিয়ে যায় স্রেফ ৯৭ রানে।
১৩ ছক্কা ও ৭ চারে ৫৪ বলে ১৩৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক আভিশেক।
এই সংস্করণে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটিই। ২০২৩ সালে আহমেদাবাদে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শুবমান গিলের অপরাজিত ১২৬ ছিল আগের সেরা।
বাঁহাতি আভিশেকের ১৩ ছক্কাও ভারতের রেকর্ড। এর আগে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১০টি করে ছক্কা ছিল রোহিত শার্মা, সাঞ্জু স্যামসন ও তিলাক ভার্মার।
২৪ বছর বয়সী আভিশেক এ দিন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৭ বলে। ভারতের হয়ে যা দ্বিতীয় দ্রুততম, পূর্ণ সদস্য দুটি দলের মধ্যে ম্যাচেও দ্বিতীয় দ্রুততম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার, একই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সমান বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন রোহিত।
পরে এক ওভার বোলিং করে ৩ রানে ২টি উইকেটও নেন আভিশেক। ম্যাচ-সেরার লড়াইয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে ১৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে উইকেটশূন্য থাকলেও, শেষ ম্যাচে ২৫ রানে ৩ শিকার ধরেন অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামি।
ইংল্যান্ডের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেন ফিল সল্ট। ২৩ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৫ রান করেন এই ওপেনার। আর কেউ ১০ ছাড়াতে পারেননি।
ভারত ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। প্রথম ওভারে জফ্রা আর্চারকে দুটি ছক্কা ও একটি চারে ১৬ রান নেওয়া স্যামসন বিদায় নেন ওই স্কোরেই। আর্চারের পরের ওভারে একটি চার ও দুটি ছক্কায় শুরু হয় আভিশেকের তাণ্ডব।
জেমি ওভারটনকে পরপর দুই ছক্কায় পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি স্রেফ ১৭ বলে। তার সঙ্গে রান উৎসবে যোগ দেন তিলাকও। ভারত প্রথম ৬ ওভারে করে ১ উইকেটে ৯৫। ২০২১ সালে দুবাইয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৮২ ছাড়িয়ে পাওয়ার প্লেতে তাদের সর্বোচ্চ স্কোর এটিই।
তিলাকের বিদায়ে ভাঙে ৪৩ বলে ১১৫ রানের বিস্ফোরক জুটি, যেখানে তার অবদান কেবল ১৫ বলে ২৪।
আভিশেকের রান ছিল একসময় ৩১ বলে ৯৪। রোহিতের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তিনি ভেঙে দেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছিল তখন। তবে পরের ৬ রান করতে তিনি খেলেন আরও ৬ বল।
সেঞ্চুরির পথে তিনি ছক্কা মারেন ১০টি, পরে বল উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠান আরও তিনবার।
আগের ম্যাচে যার ‘কনকাশন বদলি’ নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক, সেই শিভাম দুবে এ দিন ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৩ বলে করেন ৩০ রান। হার্দিক পান্ডিয়া, রিঙ্কু সিং প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি। দলের স্কোর ২৩৭-এ নিয়ে আভিশেক বিদায় নেন অষ্টাদশ ওভারের শেষ বলে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের প্রথম তিন বলে শামিকে দুটি চার ও একটি ছক্কায় শুরু করেন সল্ট। শামি পরের ওভারে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন বেন ডাকেটকে।
এরপর এক প্রান্তে চলতে থাকে জস বাটলার, হ্যারি ব্রুকদের আসা-যাওয়ার মিছিল। অন্য প্রান্ত আগলে রেখে সল্ট ফিফটি পূর্ণ করেন ২১ বলে।
অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতে সল্টের ঝড় থামান শিভাম। পরের ওভারে তিনি বিদায় করেন জ্যাকব বেথেলকেও। পরপর দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন শামি।
এখন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে দুই দল, আগামী বৃহস্পতিবার নাগপুরে হবে প্রথমটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২৪৭/৯ (স্যামসন ১৬, আভিশেক ১৩৫, তিলাক ২৪, শিভাম ৩০, পান্ডিয়া ৯, রিঙ্কু ৯, আকসার ১৫, শামি ০*, বিষ্ণই ০; আর্চার ৪-০-৫৫-১, উড ৪-০-৩২-২, ওভারটন ৩-০-৪৮-১, লিভিংস্টোন ২-০-২৯-০, রাশিদ ৩-০-৪১-১, কার্স ৪-০-৩৮-৩)
ইংল্যান্ড: ১০.৩ ওভারে ৯৭ (সল্ট ৫৫, ডাকেট ০, বাটলার ৭, ব্রুক ২, লিভিংস্টোন ৯, বেথেল ১০, কার্স ৩, ওভারটন ১, আর্চার ১*, রাশিদ ৬, উড ০; শামি ২.৩-০-২৫-৩, পান্ডিয়া ২-০-২৩-০, ভারুন ২-০-২৫-২, বিষ্ণই ১-০-৯-১, শিভাম ২-০-১১-২, আভিশেক ১-০-৩-২)
ফল: ভারত ১৫০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশেক শার্মা
ম্যান অব দা সিরিজ: ভারুন চক্রবর্তি