নিউ জিল্যান্ড-ইংল্যান্ড সিরিজ
হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম দিন ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করেছে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 14 Dec 2024, 03:11 PM
বিদায়ী ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের থেকে 'গার্ড অব অনার' পেলেন টিম সাউদি। তৃতীয় বলে তিনি মারলেন ছক্কা। এরপর বল হাওয়ায় ভাসিয়ে বাউন্ডারির বাইরে ফেললেন আরও দুবার। একেকটি ছক্কায় দর্শকদের সে কী উল্লাস। বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি সাউদি। ছক্কার সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে থামেন অভিজ্ঞ কিউই পেসার।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে সাউদির ছক্কা প্রদর্শনীর আগে-পরে হয় ব্যাট-বলের দারুণ লড়াই। ব্যাট হাতে স্বাগতিকদের দারুণ শুরুর পর বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। শেষ দিকে আবার পাল্টা আক্রমণে নিউ জিল্যান্ডকে তিনশ পার করান মিচেল স্যান্টনার, সাউদিরা।
ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযানে প্রথম দিনে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১৫ রান। ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউ।
অধিনায়ক টম ল্যাথাম সর্বোচ্চ ৬৩ রান করে আউট হন। দলের হাল ধরে রেখে দিন শেষে ৫০ রানে অপরাজিত স্যান্টনার।
মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে সবুজাভ উইকেটে টস জিতে নিউ জিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে বেশি ভাবতে হয়নি বেন স্টোকসকে। তবে সকালের সেশনে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের সুবিচার করতে পারেননি ইংলিশ বোলাররা।
প্রথম ওভারে 'বাই' ও 'লেগ বাই' থেকে দুটি বাউন্ডারি পায় নিউ জিল্যান্ড। চতুর্থ ওভারে প্রথম চার মারেন ল্যাথাম। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত কোনো সুযোগ দেননি দুই ওপেনার।
প্রথম ঘণ্টার পানি পানের বিরতির পর ব্রাইডন কার্সের বলে জোড়া চার মারেন উইল ইয়াং। প্রথম চারে পূর্ণ হয় জুটির পঞ্চাশ রান। ২৮ ওভারের প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯৩ রান করে কিউইরা।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে কার্সের ওভারে তিনটি চার মারেন ল্যাথাম। পরের ওভারে আঘাত করেন গাস অ্যাটকিনসন। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১০ চারে ৪২ রান করা ইয়াং। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১০৫ রান।
কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে নতুন করে জুটি গড়ার চেষ্টায় এগোতে থাকেন কিউই অধিনায়ক। ১০২ বলে পূর্ণ হয় তার ৩১তম ফিফটি। এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ম্যাথু পটসের লেগ স্টাম্পের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন বাঁহাতি ওপেনার।
ক্রিজে গিয়ে দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন রাচিন রাভিন্দ্রা। পরের বলে মারেন আরেকটি। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। কার্সের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে গালিতে ক্যাচ দেন তিনি।
উইলিয়ামসনকে ফেরান পটস। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা বল স্টাম্পের দিকে যাওয়ার পথে পা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন। সফল হননি, উল্টো স্টাম্পে ঠেলে দেন তিনি। ৮৭ বলের ইনিংসে ৯ চারে ৪৪ রান করেন কিউইদের সফলতম ব্যাটসম্যান।
পরে ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, টম ব্লান্ডেলরা হতাশ করলে আড়াইশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।
অষ্টম উইকেট জুটিতে ম্যাট হেনরির সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়ে তোলেন স্যান্টনার। স্টোকসের বলে সীমানায় হ্যারি ব্রুকের দারুণ ক্যাচে ফেরেন হেনরি।
করতালিতে বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা সাউদিকে স্বাগত জানায় হ্যামিল্টনের দর্শকরা। তাদের আনন্দের উপলক্ষ দিতে সময় নেননি সদ্য ৩৬ ছুঁইছুঁই সাউদি।
স্টোকসের শর্ট বলে মিড উইকেট দিয়ে প্রথম ছক্কা মারেন তিনি। এক বল পর ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে তিনি ওড়ান ছক্কা। পরের ওভারে অ্যাটকিনসনের বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন আরেকটি। একই ওভারে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়েই আউট হন তিনি।
৩ ছক্কা ও এক চারে ১০ বলে ২৩ রান করেন সাউদি। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার মোট ছক্কা এখন ৯৮টি। তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন ক্রিস গেইলকে। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ছক্কার সেঞ্চুরি করার সুযোগ তার দ্বিতীয় ইনিংসে।
সাউদিকে ফিরিয়ে চলতি বছর অভিষেক হওয়া অ্যাটকিনসনের উইকেট হলো ৫১টি। অভিষেকের বছরে ৫০ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার অ্যাটকিনসন। ১৯৮১ সালে নিজের অভিষেকের বছরে ৫৫ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার টেরি অল্ডারম্যান।
সাউদির বিদায়ের পর দিনের বাকি অংশ কাটিয়ে দেন স্যান্টনার। দিনের শেষ বলে পটসের বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি করেন স্যান্টনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮২ ওভারে ৩১৫/৯ (ল্যাথাম ৬৩, ইয়াং ৪২, উইলিয়ামসন ৪৪, রাভিন্দ্রা ১৮, মিচেল ১৪, ব্লান্ডেল ২১, ফিলিপস ৫, স্যান্টনার ৫০*, হেনরি ৮, সাউদি ২৩, ও'রোক ০*; পটস ২১-৬-৭৫-৩, অ্যাটকিনসন ১৯-৫-৫৫-৩, কার্স ১৯-২-৭৮-২, স্টোকস ২৩-৬-৮৬-১)