ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেন তরুণ লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকি, সম্ভাবনা জাগিয়েও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলেন না ইয়াসির আলি চৌধুরি।
Published : 13 Apr 2025, 06:26 PM
পরপর দুই উইকেট নিলেন ওয়াসি সিদ্দিকি। হ্যাটট্রিক বলের মুখোমুখি হলেন মাইশুকুর রহমান। গুগলি ডেলিভারি বুঝতেই পারলেন না ব্রাদার্স ইউনিয়ন অধিনায়ক। প্যাডে লাগতেই জোরাল আবেদন। আম্পায়ার অবশ্য সাড়া দিলেন না। ফলে হ্যাটট্রিকের স্বাদও পেলেন না তরুণ লেগ স্পিনার। তবে পরে একে একে আরও চার উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে একাই গুঁড়িয়ে দিলেন ওয়াসি।
বড় লক্ষ্যে ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ব্রাদার্সের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন জাহিদুজ্জামান খান। কিন্তু ওয়াসির ঘূর্ণিতে বড় জয়ই পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রোববার আরেক ম্যাচে ৫ উইকেট করে নিয়েছেন দুই দলের দুই বাঁহাতি স্পিনার শহিদুল ইসলাম ও সানজামুল ইসলাম। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন আহরার আমিন।
দিনের অন্য ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে ফেরা অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে লড়াই করতেই পারেনি তারকায় ঠাসা লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
জাহিদুজ্জামানের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে নায়ক ওয়াসি
রেলিগেশন লিগে পড়া থেকে বাঁচতে জয়ের বিকল্প ছিল না ব্রাদার্সের। কিন্তু গাজী গ্রুপের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে ব্রাদার্সকে ৫১ রানে হারায় গাজী গ্রুপ। ৩০২ রানের লক্ষ্যে ৪১ বল বাকি থাকতে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় ব্রাদার্স।
১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগের অভিযানে নামবে এনামুল হকের নেতৃত্বাধীন গাজী গ্রুপ। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করল ব্রাদার্স।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মুনিম শাহরিয়ার, সাদিকুর রহমান, এনামুলের ব্যাটে ইতিবাচক শুরু পায় গাজী গ্রুপ। কিন্তু কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
চার নম্বরে নেমে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৯০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন শামসুর রহমান। পঞ্চম উইকেটে শামিম মিয়ার সঙ্গে ১০১ রানের জুটি গড়েন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শামিমের ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন সালমান হোসেন। পাঁচ ম্যাচ পর একাদশে ফিরে ৩টি করে চার-ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি।
ব্রাদার্সের হয়ে ৪ উইকেট নেন সুমন খান।
বড় লক্ষ্যে শুরুতেই ইমতিয়াজ হোসেনের উইকেট হারায় ব্রাদার্স। তবে চাপ আসতে দেননি মাহফিজুল ইসলাম ও জাহিদুজ্জামান। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন মিলে ৯৭ বলে গড়েন ১১০ রানের জুটি।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৫৫ রান করা মাহফিজুলকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ওয়াসি। পরের বলে চমৎকার গুগলিতে আইচ মোল্লাকে বোল্ড করেন ১৮ বছর বয়সী স্পিনার।
চাপ সামলে পঞ্চম উইকেট অলক কাপালির সঙ্গে ৫৩ রানের জুটি গড়েন জাহিদুজ্জামান। মাত্র ৭৯ বলে তিনি পূর্ণ করেন লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
অলকের পর বাঁহাতি ওপেনারকেও আউট করেন ওয়াসি। ১৭ চার ও ২ ছক্কায় মাত্র ৯২ বলে ১২২ রানের ইনিংস খেলেন ২৮ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান।
১০ ওভারে ৫২ রানে ৬ উইকেট নেন ওয়াসি। লিস্ট 'এ'তে এটিই তার প্রথম পাঁচ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ৩০১ (মুনিম ৩৫, সাদিকুর ২১, এনামুল ৩৭, শামসুর ৮৪, সাব্বির ১, শামিম ৪২, সালমান ৫১*, তোফায়েল ৩, পারভেজ ৭, হাশিম ৪, ওয়াসি ৯; জায়েদ ১০-০-৫৫-১, সোহাগ ১০-০-৫৫-১, সুমন ১০-০-৬৪-৪, ইয়াসিন ১০-০-৭৬-২, রাহাতুল ১০-০-৫১-১)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৩.১ ওভারে ২৫০ (মাহফিজুল ৫৫, ইমতিয়াজ ৩, জাহিদুজ্জামান ১২২, আইচ ০, অলক ১৩, সোহাগ ৪, রাহাতুল ৪, সুমন ২৭, ইয়াসিন ৯, জায়েদ ২*; পারভেজ ১০-০-৭৪-০, শামিম ৫.১-০-৩০-১, হাশিম ৯-০-৩৬-১, শামসুর ৩-০-২২-০, তোফায়েল ৩-০-২১-০, ওয়াসি ১০-০-৫২-৬, সাদিকুর ৩-০-৮-১)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৫১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়াসি সিদ্দিকি
আহরারের নৈপুণ্যে জিতল পারটেক্স
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবকে ২ উইকেটে হারায় পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। ২৩০ রানের লক্ষ্য ১২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
জয় পেলেও রেলিগেশন লিগ অবশ্য খেলতে হবে পারটেক্সের। ১১ ম্যাচে তাদের ঝুলিতে মাত্র ৬ পয়েন্ট। প্রথম পর্ব শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে নিরাপদে ধানমন্ডি।
ম্যাচে ৫টি করে উইকেট নেন পারটেক্সের শহিদুল ও ধানমন্ডির সানজামুল। তবে বল হাতে ৩ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক পারটেক্স অধিনায়ক আহরার।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শহিদুলের ঘূর্ণি জালে আটকে যায় ধানমন্ডি। মাত্র ৪০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অল্পেই গুঁড়িয়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়ে তারা।
সপ্তম উইকেটে ১৩৯ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন ইয়াসির আলি ও মইন খান। তবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি ইয়াসির। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৬ বলে ৯০ রান করে আউট হন তিনি।
দলকে দুইশ পার করিয়ে ফেরেন ৮০ রান করা মইন।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেটের জন্য ৩১ রান খরচ করেন শহিদুল।
রান তাড়ায় পারটেক্সের শুরুটাও তেমন ভালো ছিল না। পঞ্চাশের আগে তারা হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন সাব্বির রহমান ও আহরার।
মইনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৪ বলে ৪৭ রান করা সাব্বির।
এরপর জয়রাজ শেখ ও শহিদুল অল্পেই ফিরলে আবার চাপে পড়ে পারটেক্স। অষ্টম উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান আহরার ও মুক্তার আলি। ৩০ রান করে মুক্তার ফিরলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন আহরার।
৩২ রানে ৫ উইকেট নেন অভিজ্ঞ স্পিনার সানজামুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৪৯ ওভারে ২২৯ (আজমির ২০, হাবিবুর ০, ফজলে মাহমুদ ৯, সানজামুল ০, ইয়াসির ৯০, সোহান ০, হাফিজুর ১, মইন ৮০, মেহরাব ১০, মুরাদ ৪, মারুফ ২*; শহিদুল ১০-০-৩১-৫, নাঈম ১০-০-৪০-১, মেহেদি ৩-০-২১-১, ইয়াসিন ৬-০-২৫-০, আহরার ৯-০-৪২-৩, মুক্তার ৭-০-২৯-০, রুবেল ৩-০-২৩-০, জয়রাজ ১-০-১১-০)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮ ওভারে ২৩৪/৮ (মইনুল ২৪, আদিল ১, রুবেল ৯, ইয়াসিন ১, সাব্বির ৪৭, আহরার ৮৫*, জয়রাজ ১৬, শহিদুল ১, মুক্তার ৩০, নাঈম ৩*; মঈন ১০-২-২৫-১, মুরাদ ১০-১-৬৫-১, মারুফ ৭-০-৪১-০, সানজামুল ১০-০-৩২-৫, ফজলে মাহমুদ ৩-০-১৯-১, আজমির ৩-০-৩০-০, মেহরাব ৪-০-১৩-০, হাফিজুর ১-০-৬-০)
ফল: পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আহরার আমিন
অগ্রণী ব্যাংকের কাছে হারল রূপগঞ্জ
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৮৯ রানে হারায় অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ৩০৭ রানের পুঁজি নিয়ে তারকাখচিত দলকে ২১৭ রানে গুটিয়ে দেয় এবারই প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা ক্লাবটি।
দুই দলই আগেই নিশ্চিত করেছে সুপার লিগের টিকেট। ১১ ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঠিক পরেই রূপগঞ্জ।
অগ্রণী ব্যাংককে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম, ইমরানউজ্জামান ও অমিত হাসান।
টেস্ট সিরিজের জন্য জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার আগে ৮৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন সাদমান। এবারের লিগে এটি তার চতুর্থ পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস। উদ্বোধনী জুটিতে ইমরানের সঙ্গে যোগ করেন ১০৫ রান। ঠিক ৫০ রান করে আউট হন কিপার-ব্যাটসম্যান।
তিন নম্বরে নামা অমিত খেলেন ৫৯ রানের ইনিংস। সাদমানের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৮৪ রান। মার্শাল আইয়ুবও ফিফটির সম্ভাবনা জাগান। তবে ৪৮ রানে আউট হয়ে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
বড় লক্ষ্যে শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। দলের ছয় ব্যাটসম্যান ২০ পেরিয়ে গেলেও কেউই ৩৫ ছুঁতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন মাহমুদুল হাসান জয়।
এছাড়া সৌম্য সরকার ৩২, আকবর আলি ৩১, আফিফ হোসেন ২৯, তানজিদ হাসান ফেরেন ২৭ রানে।
দারুণ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন রবিউল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩০৬/৬ (সাদমান ৮৭, ইমরানউজ্জামান ৫০, অমিত ৫৯, মার্শাল ৪৮, শুভাগত ২০, তাইবুর ১২*, প্রিতম ১, শহিদুল ১২*; শরিফুল ১০-২-৫২-১, মেহেদি ৮-০-৪৪-১, রাজা ৬-০-৪৭-২, তানভির ৯-০-৬৩-০, সৌম্য ২-০-১০-০, সাইফ ৭-১-২৯-১, রাতুল ৮-০-৫৪-১)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪০.১ ওভারে ২১৭ (সাইফ ৭, তানজিদ ২৭, সৌম্য ৩২, জয় ৩৩, আফিফ ২৯, আকবর ৩১, রাতুল ২১, মেহেদি ১, রাজা ১৬, তানভির ১, শরিফুল ৯*; শুভাগত ৮-১-২৮-১, রবিউল ৭.১-০-৩৯-৪, শহিদুল ৬-০-৪৭-২, আরিফ ৭-১-৩১-২, তাইবুর ৬-০-৩২-১, নাঈম ৬-০-৩৮-০)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৮৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাদমান ইসলাম