হ্যারি ব্রুকের আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস, মিচেল স্টার্কের এক ওভারে ২৮ রান লিভিংস্টোনের, শুরুর দুই ম্যাচ হেরে যাওয়া ইংল্যান্ড সমতা ফেরাল সিরিজে।
Published : 28 Sep 2024, 09:26 AM
শুরুতে বেন ডাকেটের ফিফটি, পরে হ্যারি ব্রুকের ঝড়, শেষে লিয়াম লিভিংস্টোনের বিধ্বংসী ব্যাটিং - সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের রান পৌঁছে গেল অনেক উঁচুতে। পরে ইংলিশ পেসারদের দাপটে সেই উচ্চতার ধারেকাছেও যেতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বড় জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের অকপট স্বীকারোক্তি, “ওই রান আমাদের নাগালের বাইরে ছিল। সবদিক থেকেই উড়ে গেছি আমরা।”
পাঁচ ম্যাচে ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮৬ রানে উড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারের কিনারায় চলে যাওয়া দলটিই এখন টানা দুই জয়ে ফিরল সমতায়।
লর্ডসে শুক্রবার বৃষ্টিতে ৩৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ইংল্যান্ড তোলে ৫ উইকেটে ৩১২ রান।
ওপেনার বেন ডাকেটের ব্যাট থেকে আগে ৬২ বলে ৬৩ রান। আগের ম্যাচে ম্যাচ জেকানো সেঞ্চুরি করা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক এবার উপহার দেন ৫৪ বলে ৮৭ রানের ইনিংস। পরে ৭ ছক্কায় ২৭ বলে অপরাজিত ৬২ রান করে দলের রান তিনশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান লিভিংস্টোন।
মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের শেষ ওভারে চারটি ছক্কা ও একটি চারে ২৮ রান তোলেন লিভিংস্টোন। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে ওভার সেটি।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করলেও পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং। ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬৮ রান। কিন্তু পরের ৫৮ রানের মধ্যে সবকটি উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা স্রেফ ২৪.২ ওভারেই।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান ম্যাথু পটস। ব্রাইডন কার্সের শিকার তিন উইকেট।
বৃষ্টিতে খেলা দেরিতে শুরু হওয়ার পর টস জিতে বোলিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। উইকেট মূরত ব্যাটিং সহায়ক হলেও পেসারদের জন্য মুভমেন্ট ছিল যথেষ্টই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের চ্যালেঞ্জ সামলে ইংল্যান্ডকে মোটামুটি ভালো শুরু এনে দেন ফিল সল্ট ও বেন ডাকেট।
ঝড়ো জুটি গড়তে না পারলেও ৪৮ রান তোলেন দুজন। ৫ চারে ২৭ বলে ২২ রান করে ফেরেন সল্ট।
তিন নেমে আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা উইল জ্যাকস এবার ফেরেন ১০ রানেই।
ইংলিশ ব্যাটিংয়ের চিত্র পাল্টে যায় হ্যারি ব্রুক নামার পর। ডাকেটের সঙ্গে তার জুটিতে ৭৯ রান আসে ৫৩ বলেই।
অ্যাডাম জ্যাম্পাকে স্লগ সুইপ খেলে ডাকেট বিদায় নিলেও ইংল্যান্ডের রানের স্রোত সময়ের সঙ্গে বেগবান হয় আরও। ব্রুক ও জেমি স্মিথের জুটিতে ৪৭ বলে ওঠে ৭৫ রান।
৩৭ বলে ফিফটি করা ব্রুক আরও সামনে ছুটে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান। কিন্তু জ্যাম্পাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় তার ইনিংস থামে শতরান থেকে ১৩ রান দূরে।
একটু পর জেমি স্মিথ বিদায় নেন ২৮ বলে ৩৯ রান করে। কিন্তু ইংল্যান্ডের চোখধাঁধানো ব্যাটিং প্রদর্শনী শেষ হয়নি। দৃশ্যপটে আসেন এবার লিভিংস্টোন।
একপাশে তরুণ জেকেব বেথেল দ্রুত রান তুলতে ভুগছিলেন। কিন্তু লিভিংস্টোন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভুলিয়ে দেন সবকিছু। বিশেষ করে, শেষ ওভারে স্টার্কের ওপর তার টর্নেডো স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন। ২৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে লর্ডসে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন তিনি। তার হাত ধরে শেষটা দারুণ করে ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়ার শুরুটা ছিল দাপুটে। পাওয়ার প্লের ৮ ওভারে ৬৬ রান তোলেন হেড ও মার্শ। তবে এরপরই নাটকীয় ধস।
২৩ বলে ৩৪ করে হেড বোল্ড হন ব্রাইডন কার্সকে স্লগ করার চেষ্টায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস টালমাটাল হয়ে ডুবে যায় দ্রুতই।
পটসকে ক্রিজ ছেড়ে খেলত গিয়ে আউট হন স্মিথ। জফ্রা আর্চারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন মার্শ। চোট কাটিয়ে ফেরান জশ ইংলিসকে দ্রুত ফেরানোর পর অসাধারণ এক ডেলিভারিতে মার্নাস লাবুশেনের স্টাম্প উপড়ে দেন কার্স। আর্চারকে উইকেট উপহার দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা অ্যালেক্স কেয়ারিও এ দিন ব্যর্থ।
সব মিলিয়ে দ্রুতই শেষ অস্ট্রেলিয়ার আশা। দুই ওপেনার ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি। উদ্বোধনী জুটির পর ৬ উইকেট পড়েছে ২৮ রানের মধ্যে। পরে শেষ ৪ উইকেট নেই ৭ রানের ভেতর।
টানা ১৪ ওয়ানডে জয়ের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা হেরে গেল টানা দুই ম্যাচে।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ হন হ্যারি ব্রুক।
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ ব্রিস্টলে, রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৩৯ ওভারে ৩১২/৫ (সল্ট ২২, ডাকেট ৬২, জ্যাকস ১০, ব্রুক ৮৭, স্মিথ ৩৯, লিভিংস্টোন ৬২*, বেথেলে ১২*; স্টার্ক ৮-০-৭০-০, হেইজেলউড ৮-১-৪০-১, অ্যাবট ৭-০-৬২-০, মার্শ ৪-০-২৭-১, জ্যাম্পা ৮-০-৬৬-২, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-৩০-১, লাবুশেন ১-০-১০-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ২৪.২ ওভারে ১২৬ (মার্শ ২৮, হেড ৩৪, স্মিথ ৫, ইংলিস ৮, লাবুশেন ৪, কেয়ারি ১৩, ম্যাক্সওয়েল ২, অ্যাবট ১৩, স্টার্ক ৩, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ০; পটস ৮-২-৩৮-৪, আর্চার ৭-২-৩৩-২, কার্স ৬-০-৩৬-৩, রাশিদ ৩.৪-০-১১-১)।
ফল: ইংল্যান্ড ১৮৬ রানে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-২ সমতা।।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক।
……………
ট্যাগ: