বয়স ৬০ বছর পূর্ণ করার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা প্রথম পুরুষ ক্রিকেটার এখন ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্ড্রু ব্রাউনলি।
Published : 16 Mar 2025, 09:36 PM
সদস্য দেশগুলোর যে কোনো বিশ ওভারের ম্যাচকে আইসিসি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে প্রায়ই দেখা মিলছে বিস্ময়কর সব ঘটনা, রেকর্ড। অনেক সময় এসবের হিসাব রাখাও হয়ে পড়ে কঠিন। এই যেমন, কদিন আগে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্ড্রু ব্রাউনলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন ৬২ বছর বয়সে! বয়স ৬০ বছর পূর্ণ করার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা প্রথম পুরুষ ক্রিকেটার তিনিই।
আধুনিক ক্রিকেটে এত বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কথা শুনলে যে কারও চোখ কপালে ওঠার কথা। সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছে গত ১০ মার্চ।
সেদিন ১০৬তম দল হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার স্বাদ পায় ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপের জনসংখ্যা চার হাজারেরও কম।
কোস্টা রিকার বিপক্ষে ওই ম্যাচে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ১১ ক্রিকেটারের সবার বয়স ছিল ৩১ বছরের ওপরে, দুজন বাদে বাকি সবার বয়স ৪০ বছরের বেশি, এর মধ্যে তিন জন পেরিয়ে এসেছেন তাদের ৫৬তম জন্মদিন। তবে তাদের কেউই ব্রাউনলির মতো বয়স্ক ছিলেন না।
অভিষেকের দিন ব্রাউনলির বয়স ছিল ৬২ বছর ১৪৫ দিন। পরের দুই দিন, ১১ ও ১২ মার্চ আরও দুটি ম্যাচ খেলেন তিনি। সব ম্যাচেই তিনি ব্যাটিং করেন ১০ নম্বরে; প্রথম ম্যাচে ১ রানের পর বাকি দুটিতে অপরাজিত থাকেন ২ ও ৩ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে মিডিয়াম পেসে এক ওভার বোলিংও করেন তিনি, ৮ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট।
কোস্টা রিকার বিপক্ষে ছয় ম্যাচের ওই সিরিজে একটি জয়ও পায় ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। তবে ওই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না ব্রাউনলি। নিজের সবশেষ ম্যাচটি খেলেন তিনি ৬২ বছর ১৪৭ দিন বয়সে। সামনে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে নিশ্চিতভাবে রেকর্ডও সমৃদ্ধ হবে তার।
নারী-পুরুষ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার রেকর্ডটা জিব্রাল্টার উইকেটকিপার-ব্যাটার স্যালি বার্টনের। ২০২৪ সালে ছয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তিনি। সবশেষ ম্যাচটিতে তার বয়স ছিল ৬৭ বছর ২০৬ দিন। তার পরের অবস্থানে আছেন গার্নসির ফিলিপা স্তাহেলিন। ২০২৪ সালেই স্তাহেলিন তার ১২ ম্যাচের সবশেষটি খেলেন ৬৩ বছর ১০৫ দিন বয়সে। এরপরই আছেন ব্রাউনলি।
ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রাউনলির আগে রেকর্ডটি ছিল তুর্কির ওসমান গোকারের। দলটির হয়ে তিনি ম্যাচ খেলেন একটিই। ২০১৯ সালে রোমানিয়ার বিপক্ষে ওই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সময় তার বয়স ছিল ৫৯ বছর ১৮১ দিন।
সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ড উইলফ্রেড রোডসের। এই ইংলিশ কিংবদন্তি ৫৮ টেস্টের সবশেষটি খেলতে নেমেছিলেন ৫২ বছর ১৬৫ দিন বয়সে, সেই ১৯৩০ সালে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০৪ উইকেটের মতো বয়সের রেকর্ডও কখনও ভাঙবে না বলেই ধরে নেওয়া হয়।
বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে আরও তিন জনের। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গার ১২ টেস্টের সবশেষটি ১৯৩৩ সালে খেলেন ৫০ বছর ৩২৭ দিন বয়সে। ডব্লিউ জি গ্রেস ২২ টেস্টের সবশেষটি খেলেন ৫০ বছর ৩২০ দিন বয়সে, ১৮৯৯ সালে। ১৫ টেস্টের সবশেষটি খেলার সময় জর্জ গানের বয়স ছিল ৫০ বছর ৩০৩ দিন। তার মতো রোডসেরও শেষ টেস্ট ছিল সেটি।
সবচেয়ে বেশি বয়সে মেয়েদের টেস্ট খেলার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টেফানি পাওয়ারের। এই কিপার-ব্যাটার একটিই টেস্ট খেলেন ৪৬ বছর ৩৩১ দিন বয়সে, ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। মেয়েদের ওয়ানডের রেকর্ডও পাওয়ারের (৪৭ বছর ৩৫৫ দিন)।
ছেলেদের ওয়ানডের রেকর্ডটা নেদারল্যান্ডসের নোলান ক্লার্কের (৪৭ বছর ২৫৭ দিন)। সবচেয়ে বেশি বয়সে ওয়ানডে অভিষেকের রেকর্ডও এই ওপেনারের (৪৭ বছর ২৪০ দিন)। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ১৭ দিনের মধ্যে ক্যারিয়ারের পাঁচটি ওয়ানডে খেলেন তিনি।
আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে টি-টোয়েন্টি খেলার ছেলেদের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যাড হগের (৪৩ বছর ৪৫ দিন)। আর মেয়েদের রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের পামেলা ল্যাভিনের (৪১ বছর ৬৩ দিন)
সবচেয়ে বেসি বয়সে টেস্ট অভিষেকের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার জেমস সাউদারটনের। ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়েছিল ৪৯ বছর ১১৯ দিন বয়স। পরে ওই ম্যাচটিকেই ধরা হয় ইতিহাসের প্রথম টেস্ট।