অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ১৩৮ রানে পিছিয়ে থেকে লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড।
Published : 30 Jun 2023, 12:08 AM
আগের দিনের পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিলেন স্টিভেন স্মিথ। তার দুত্যিময় ব্যাটিংয়ের পরও অবশ্য খুব বড় হলো না অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ। পরে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে জবাবটা ভালোই দিলেন বেন ডাকেট। কিন্তু অল্পের জন্য তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হলো ইংলিশ ওপেনারকে।
অ্যাশেজ সিরিজের লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ২৭৮। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রানে গুটিয়ে দেওয়া স্বাগতিকরা এখনও পিছিয়ে ১৩৮ রানে।
সফরকারীদের চারশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর স্মিথ ক্যারিয়ারের ৩২তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে খেলেন ১১০ রানের ইনিংস। এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি শতকে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্টিভ ওয়াহর সঙ্গে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন তিনি। ৪১ টেস্ট সেঞ্চুরি করে তালিকায় শীর্ষে রিকি পন্টিং।
ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ ব্যাটিং করা ডাকেট ৯ চারে ১৩৪ বলে ৯৮ রানে ফেরেন হতাশা নিয়ে। ৫ চারে ৪৮ রান করেন জ্যাক ক্রলি। অলি পোপের ব্যাট থেকে আসে ৪টি চারে ৪২। হ্যারি ব্রুক খেলছেন ৪৫ রানে, উইকেটে তার সঙ্গী অধিনায়ক বেন স্টোকস।
লন্ডনের আকাশ দিনের শুরুতে ছিল মেঘাচ্ছন্ন। সঙ্গে ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটের সহায়তা কাজে লাগে বৃহস্পতিবার এক সেশনেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গুটিয়ে দেয় ইংল্যান্ড।
৫ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে খেলতে নামা সফরকারীরা দিনের দ্বিতীয় ওভারে হারায় অ্যালেক্স কেয়ারিকে। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে সফল হয় ইংল্যান্ড।
দুই ওভার পর মিচেল স্টার্ককে কট বিহাইন্ড করে দেন জেমস অ্যান্ডারসন। প্যাট কামিন্সকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন স্মিথ। ৮৫ রান নিয়ে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়ান তারকা ব্যাটসম্যান কয়েক ওভার পর পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি, ১৬৯ বলে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি তার অষ্টম শতক, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সব মিলিয়ে দ্বাদশ।
সেঞ্চুরি পর ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি স্মিথ। জশ টংয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে গালিতে ধরা পড়েন তিনি। এই ম্যাচের একাদশে জায়গা পাওয়ার পর স্মিথের উইকেট নিতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন টং। কাউন্টির পর আরও একবার সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজনকে ফেরালেন ইংলিশ পেসার। এরপর আর বেশিদূর এগোয়নি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ক্রলি ও ডাকেট। দুজনেই দ্রুত তুলতে থাকেন দ্রুত রান। পেসাররা যখন ব্যর্থ, তখন অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ন্যাথান লায়ন।
টানা ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়া এই অফ স্পিনারকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় কেয়ারির দারুণ দক্ষতায় স্টাম্পড হন ক্রলি। ভাঙে ১০৭ বল স্থায়ী ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
ক্রলির বিদায়ের পর ধীরলয়ে এগোতে থাকেন ডাকেট। পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৮৪ বলে। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন পোপ। তাদের জুটিতে দ্বিতীয় সেশন পার করে দেয় ইংল্যান্ড।
জমে যাওয়া ৯৭ রানের জুটিতে ফাটল ধরান ক্যামেরন গ্রিন। তার শর্ট বল জায়গা বানিয়ে পুল করে মাঝ ব্যাটে খেলতে না পেরে বাউন্ডারিতে স্মিথের হাতে ধরা পড়েন পোপ।
দুই বল পর জো রুটকে কট বিহাইন্ড করে আবারও দলকে উল্লাসে মাতান গ্রিন। কিন্তু তাদের সেই উদযাপন স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। গ্রিনের ডেলিভারিটি যে ছিল ফ্রন্ট ফুট ‘নো।’
আরেক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিংয়ে তখন সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছেন ডাকেট। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতক যখন তার দৃষ্টি সীমানায়, তখনই ভুলে করে বসেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জশ হেইজেলউডের শরীর তাক করা শর্ট বল পুল করে ফাইন লেগে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
১ রানে বেঁচে যাওয়া রুট ধরতে পারেননি দলের হাল। স্টার্কের বাউন্সারে স্মিথের দারুণ ক্যাচে ১০ রান করে ফেরেন ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক।
চাপে পড়া ইংল্যান্ডের হাল ধরেন ব্রুক ও স্টোকস। দুজনের ব্যাটিং যেন ছিল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ব্রুক মনোযোগ দেন দ্রুত রান তোলায়, আর স্টোকস ছিলেন বেশ সাবধানী।
ইংল্যান্ডকে আরও চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু কামিন্সের বলে স্কয়ার লেগে ব্রুকের ক্যাচ ছাড়েন মার্নাস লাবুশেন। ২৫ রানে জীবন পেয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যান এখন ফিফটির দুয়ারে। স্টোকসের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটি ৫৬ রানের।
এদিন লায়নকে পুরোপুরি বোলিংয়ে না পাওয়া অস্ট্রেলিয়া জন্য ছিল বড় ধাক্কা। পায়ের চোটে মাঠ ছাড়া অভিজ্ঞ স্পিনার বোলিং করতে পারেন ১৩ ওভার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১০০.৪ ওভারে ৪১৬ (আগের দিন ৩৩৯/৫) (স্মিথ ১১০, কেয়ারি ২২, স্টার্ক ৬, কামিন্স ২২*, লায়ন ৭, হেইজেলউড ৪; অ্যান্ডারসন ২০-৫-৫৩-১, ব্রড ২৩-৪-৯৯-০, রবিনসন ২৪.৪-৩-১০০-৩, টং ২২-৩-৯৮-৩, স্টোকস ৩-১-২১-০, রুট ৮-১-১৯-২)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬১ ওভারে ২৭৮/৪ (ক্রলি ৪৮, ডাকেট ৯৮, পোপ ৪২, রুট ১০, ব্রুক ৪৫*, স্টোকস ১৭*; স্টার্ক ১২-০-৭৫-১, কামিন্স ১২-২-৩৯-০, হেইজেলউড ১১-১-৬৩-১, লায়ন ১৩-১-৩৫-১, গ্রিন ৭-০-৪৩-১, হেড ৫-১-১০-০, স্মিথ ১-০-১-০)